বিএনপি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন,’ মানবাধিকারকে যুক্তরাষ্ট্রের নিজ স্বার্থে ব্যবহার-এমন প্রশ্ন সময় প্রতিনিধির; প্রশ্নে উসকানি আছে-বললেন মুখপাত্র মিলার

বিএনপি ‘সন্ত্রাসী সংগঠন,’ মানবাধিকারকে যুক্তরাষ্ট্রের নিজ স্বার্থে ব্যবহার-এমন প্রশ্ন সময় প্রতিনিধির; প্রশ্নে উসকানি আছে-বললেন মুখপাত্র মিলার

স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফ্রিংয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন উল্লেখ করে প্রশ্ন করেছেন সময় টেলিভিশনের প্রতিনিধি। শুধু তাই নয় বাংলাদেশের মিডিয়া বিশেষজ্ঞদের নাম ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নিয়ে উসকানিমূলক প্রশ্ন করেন সাংবাদিক পরিচয়বহনকারী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগার হিসাবে পরিচিত দস্তগীর জাহাঙ্গীর নামের ওই ব্যক্তি। আর তার প্রতিক্রিয়ায় কোনো রাখ ঢাক না করেই স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান মুখপাত্র সময় টিভির ঐ রিপোর্টারকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনার দুটি প্রশ্নের ভিতর আমি কিছু উসকানি দেখতে পাচ্ছি।”

সোমবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের ব্রিফ্রিংয়ে মুশফিকুল ফজল আনসারী ও ম্যাথিউ মিলারের প্রশ্ন-উত্তর পর্ব শেষে ঐ রিপোর্টার প্রশ্ন উত্থাপন করেন। দস্তগীর তার প্রথম প্রশ্নে বিএনপিকে আক্রমণ করে জানতে চান, “বিএনপিকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে কানাডার একটি আদালত সংগঠনটির এক কর্মীর রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন বাতিল করে দিয়েছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলে থাকেন যে বিএনপির রাজনৈতিক সহিংসতার ইতিহাস রয়েছে, বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময়। ঐ সময় বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছে যেটিকে সুপ্রিম কোর্ট অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছে। বাংলাদেশ আগামী জাতীয় নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এ অবস্থায় অসাংবিধানিক নির্বাচনকালীন সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে সহিংসতার উস্কানি দিচ্ছে বিএনপি- এমন অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলের। এর প্রেক্ষিতে আপনার পর্যবেক্ষণ কি?”

তার এ প্রশ্নের জবাবে মিলার বলেন, “আমার পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, প্রথমত, বাংলাদেশ বা অন্য কোনো দেশের কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র কোনো অবস্থান নেয় না। তবে আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশসহ সকল দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া উচিত।”

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির জন্য দেশটিকে আক্রমণ করে দ্বিতীয় প্রশ্নে ঐ রিপোর্টার জানতে চান, “বাংলাদেশে মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন, নিজেদের আরও স্বার্থ হাসিলের জন্য সুনির্দিষ্ট কিছু দেশের বিরুদ্ধে চাপ প্রয়োগ করতে মানবাধিকারের ইস্যুকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্র। তারা এটাও বলে থাকেন যে ভারত, সৌদি আরব, ইসরাইল ও বিশ্বের অন্যান্য অংশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র চোখ বন্ধ করে রাখে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কি?”

এপ্রশ্নের জবাবে শুরুতে মিলার বলেন, “আমি বলবো, দুটি প্রশ্নের ভিতরে কিছু উসকানি দেখতে পাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “আমি নজরে নেবো এবং বলবো যে- যখন মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা দেখি, তখন আমরা তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করি। যখন আমরা মানবাধিকার লঙ্ঘন দেখি তখন কোনো দেশের সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব বা ঘনিষ্ঠতাকে বিবেচনায় রাখিনা   আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করি। এটাকে আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং বলব।”

এর আগে ব্রিফ্রিংয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আসসারী কম্বোডিয়ার নির্বাচন এবং বাংলাদেশ ইস্যুতে বেশ কিছু প্রশ্ন করেন।

কম্বোডিয়ার নির্বাচন প্রসঙ্গে ব্রিফ্রিংয়ে মুশফিকুল জানতে চান, “কম্বোডিয়ার নির্বাচন প্রসঙ্গে আপনি রবিবার বলেছেন- দেশটিতে নির্বাচন অবাধ কিংবা  সুষ্ঠু এর কোনোটাই হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র এ জন্য দেশটির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা কাদের ওপর আরোপ করা হয়েছে একটু বিস্তারিত জানাবেন? কারণ দেশটিতে নির্বাচন হয়নি বরং সিলেকশন (বাছাই) হয়েছে। আমি জানতে চাচ্ছিলাম কম্বোডিয়ান সরকার এবং নেতাদের মধ্যে কারা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে?”

জবাবে মিলার বলেন, “আমরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ঐসব ব্যক্তিদের নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করিনা। আমরা দেশটির কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি কিন্তু পলিসির  অংশ হিসেবে সেসব নাম আমরা প্রকাশ করছিনা।”

বাংলাদেশ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর অব্যাহত নিপীড়ন প্রসঙ্গে মুশফিক জানতে চান, “সারা বাংলাদেশে বিরোধী দলের লাখো লাখো কর্মী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। তাদের সেসব শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে হামলা করছে সরকার। বিরোধী দলের সমাবেশ চলাকালে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, পুলিশ বিরোধী কর্মীদের মোবাইল ফোন তল্লাশি করছে, হাজারো নেতা-কর্মীর নামে মামলা হচ্ছে এবং গ্রেফতার করা হচ্ছে, এমনকি মামলায় বিরোধী দলের মৃত কর্মীদেরকেও আসামী করা হচ্ছে। যারা এভাবে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধা প্রদান করছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে যুক্তরাষ্ট্র কী তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে?”

জবাবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেন, “পলিসির অংশ হিসেবে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিস্তারিত তথ্য আমরা কখনো প্রকাশ করিনা যেমনটা আপনার আগের প্রশ্নের উত্তরে অন্যদেশের ক্ষেত্রে বলেছি। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন ২৪ মে ভিসা বিধিনিষেধ ঘোষণার সময় এটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, যেকোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অন্তরায় সৃষ্টিকারী মনে হলে তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়া, ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, জনগণকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আয়োজনে বাধা প্রদান এবং সভা-সামবেশ ও সাংগাঠনিক কার্যক্রমে বাধা দেওয়া- এসকল কাজকে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এপদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ, মিডিয়া এবং বিরোধী মতের কথা চিন্তা করে।”

মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রমাবনতি নিয়ে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের এক রিপোর্টের প্রসঙ্গে উল্লেখ করে এই সংবাদদাতা জানতে চান, “সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টের তথ্যমতে বাংলাদেশে ৮৬ শতাংশ মানবাধিকার কর্মীরা রাষ্ট্র এবং ব্যক্তি দ্বারা হুমকি, হয়রানি এবং নির্যাতনের শিকার। তহবিল নিয়ন্ত্রণকে সরকার মানবাধিকার কর্মীদেরকে বিরুদ্ধে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। কারণ এনজিও বিষয়ক ব্যুরো অফিস  প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে। একারণে অনেক এনজিওর অনুদান পেতে সমস্যা হচ্ছে। কর্মীরা বেতন পর্যন্ত পাচ্ছেনা বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের উন্নয়নে বড় অংশীদার দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি কী উদ্বেগের নয়?”

জবাবে মিলার বলেন, “আমরা এটা সমর্থন করি যে, সবাই যেনো গণতান্ত্রিক সমাজে মুক্তভাবে তাদের অধিকারের চর্চা করতে পারে।মানবাধিকারের চর্চায় যেকোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।”

এনআর/