যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসনাল কমিটি টম ল্যানটস কমিশনের বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব 

যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসনাল কমিটি টম ল্যানটস কমিশনের বাংলাদেশ মানবাধিকার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ, নতুন নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব 

বিশেষ সংবাদদাতা

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার শুধু যে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর আহবানকে উপেক্ষা করছে তা নয় বরং তার সরকার যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের মতো রাতের ভোট কারচুপির পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসতে সরকার আইন এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার অব্যাহত রেখেছে। প্রত্যাশা অনুযায়ী আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সংস্কার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের অবশ্যই বাংলাদেশের  র্যাবের ওপর আরোপ করা চলমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার কথা ভাবতে পারেনা। একই রকমের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপরাধে যুক্তরাষ্ট্রের অবশ্যই উচিত গোয়েন্দা পুলিশ, ডিজিএফআইসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের মানবাধিকার বিষয়ক কমিটি টম ল্যানটস হিউম্যান রাইটস কমিশন বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে। এতে অংশ নেওয়া প্যানেলিস্টরা বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে গিয়ে এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এই ব্রিফ্রিংয়ের আয়োজন করেন যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকান দলীয় দুই সদস্য এবং টম লেনটস হিউম্যান রাইটস কমিশনের কো-চেয়ারম্যান জেমস পি ম্যাক গভর্ণ এবং ক্রিস্টোফার এইচ স্মিথ।

লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের ফরেন ল’ স্পেশালিস্ট তারিক আহমদের সঞ্চালনায় ব্রিফিংয়ে প্যানেলিস্ট হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন এন্ড এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের লিয়াজোঁ অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি এন্ড লিটিগেশন বিষয়ক ফেলো ক্রিস্টি ইউয়েদা, হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সিনিয়র এশিয়া রিসার্চার জুলিয়া ব্ল্যাকনার এবং ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিসের সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামস বিষয়ক ভিজিটিং এক্সপার্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের এশিয়া-প্যাসিফিক ডিভিশনের সিনিয়র অ্যাডভাইজর জেফ্রি ম্যাকডোনাল্ড।

বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি চরম উদ্বেগজনক পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন এন্ড এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের লিয়াজোঁ অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেছেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাস থেকে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের শাসনামলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিভিন্ন এজেন্সির সদস্যদের মাধ্যমে ২,৬৮৩ জন বিচারবর্হিভূত হত্যাকন্ডের শিকার হয়েছে। র‍্যাব এবং বাহিনীটির ৬ অফিসারের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং ২ অফিসারের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর একটি কার্যকর প্রভাব তৈরি হয়েছে মন্তব্য করে এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, ২০২১ সালে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বিভিন্ন এজেন্সির বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে ১০৭ জন, আর ২০২২ র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ৩১ জন মানুষ  বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেবার পূর্বে গুলি করে যাদের হত্যা করা হয়েছিলো তাদের অধিকাংশ বিরোধীদলের কর্মী। রাজনৈতিক দলগুলোর শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে পুলিশ গুলি চালিয়েছে।

সরকারের দমন-নিপীড়ন অব্যাহত রাখার পদ্ধতিগত বিষয়গুলো উল্লেখ করে মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার এখন যেসব পদ্ধতি চালু করে বসেছে তা হলো: রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের হাতে বেপরোয়া কর্তৃত্ব, আইনশৃঙ্খলবাহিনীর অফিসাররা মৌলিক মানবাধিকারের তোয়াক্কা না করেই শক্তি এবং অস্ত্রের উদ্দেশ্যমূলক এবং অযৌক্তিক ব্যবহার করছে, বিরোধীদলের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলোতে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর দ্বারা ব্যাপক নির্যাতন এবং শক্তি প্রয়োগ করা, রাষ্ট্রযন্ত্রের সরকারি দলের তোষামোদি, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, গায়েবী এবং ফৌজদারি মামলা দায়ের করা, ভিন্নমত এবং পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থার যোগসাজশে বিরোধী নেতাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোতে ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত করা, গোয়েন্দা এবং আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা নিজেদের লিখে নিয়ে আসা কাগজে সই করতে গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের নির্যাতন করা, মানবাধিকার কর্মী, একাডেমীশিয়ান, সাংবাদিক এবং ভিন্ন মতের মানুষদের সরকারী এবং বেসরকারী লোকদের দ্বারা ভীতি প্রদর্শন, নির্যাতন এবং দুর্ব্যবহার করা, এবং নজরদারিতে রাখা, আইনশৃঙ্খলবাহিনী এবং সরকার দলীয় কর্মীদের কালাকানুনের মাধ্যমে দায়ের করা মিথ্যা মামলায় ভিন্ন মতের মানুষদের দীর্ঘ সময় জেলে আটকে রাখা, মানবাধিকার কর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপরায়ণতা এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া ব্যক্তিরাসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী মূল হোতাদের পুরস্কৃত করা।

এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন এন্ড এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের লিয়াজোঁ অফিসার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার শুধু যে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান জানানোর আহবানকে উপেক্ষা করছে তা নয় বরং তার সরকার যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। গণতন্ত্রের অগ্রগতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ওপর নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করায় দেশটির সমালোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের মতো রাতের ভোট কারচুপির পুনরাবৃত্তি ঘটিয়ে আবারও ক্ষমতায় আসতে সরকার আইন এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের অপব্যবহার অব্যাহত রেখেছে। নির্বাচনের প্রার্থীদের টার্গেট করে সহিংসতা চালানো নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সত্যিকারের যে উদ্বেগ জানাচ্ছে তার প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রদূতদের লক্ষ্য করে কটু কথা বলে প্রতিশোধ নেওয়া হচ্ছে।

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, একদিকে যখন জাতীয় নির্বাচন আসন্ন, জনগণ ভোটাধিকার চর্চার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে, তখন সব রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের বিষয়টিকে কঠিন করে তুলছে বাংলাদেশের সরকার।

মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, সরকার বিরোধীদলের নেতাদের নির্বাচনে অযোগ্য করতে তাদের টার্গেট করে মামলা ত্বরাণিত করছে। গণ গ্রেফতার, আদালতের হয়রানি এবং পুলিশ ও সরকারি দলের কর্মীদের হামলা উপেক্ষা করে লাখ লাখ মানুষ নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। প্রায় অকার্যকর নির্বাচন কমিশনকে দন্তহীন বাঘে পরিণত করতে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিরও) সংশোধন বিল পাশ করেছে সরকার।

চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য কোনো জবাদিহিতা ছাড়া যে কর্তৃত্ববাদী লুটেরা সরকার বাংলাদেশে ক্ষমতায় রয়েছে, এবং তাদের দ্বারা জনগণের যে ভোগান্তি হচ্ছে সেটা কমিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের টম ল্যানটস হিউম্যান রাইটস কমিশন যেন তার পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করে সে আহবান জানিয়েছেন মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান।

রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি এন্ড লিটিগেশন বিষয়ক ফেলো ক্রিস্টি ইউয়েদা বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আমরা যেমনটা দেখেছিলাম, ঠিক তেমনি ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের নির্বাচনকে সামনে রেখে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বকারি সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী সাংবাদিক এবং সরকারের সমালোচকদের টার্গেট করে নাগরিক অধিকার সংকোচিত করার সেই ধারাবাহিকতা বজায় রয়েছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কর্মকর্তারা উল্লেখিত মানুষ এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতিশোধমূলকভাবে গ্রেফতার, হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শন করছে। কারণ এই কর্মকর্তাদের অন্যায় কাজের জন্য কোনো জবাবদিহি করতে হয়না।

বাংলাদেশে মত প্রকাশ এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ধীরে ধীরে খর্ব হচ্ছে উল্লেখ করে ক্রিস্টি ইউয়েদা বলেন, মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে  সাংবাদিকদের ওপর ১৫১টি হামলা হয়েছে। সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা ছাড়াও সরকার মিডিয়ার ওপর আক্রমণ করেছে। এবছরের জানুয়ারি মাসে রাষ্ট্র বিরোধী খবর প্রকাশের অপরাধে ১৯১ টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। ঠুনকো কারণে প্রকাশনার লাইসেন্স বাতিল করে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধান বিরোধীদলের একটি সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়েছে।

ক্রিস্টি ইউয়েদা বলেন, সরকার নোবেল জয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং দারিদ্র বিমোচণে কার তার কাজকে আক্রমণ এবং অসম্মান করা অব্যাহত রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ইউনূসকে শিক্ষা দিতে নদীতে ফেলে দিয়ে চুবাতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে ক্রিস্টি ইউয়েদা বলেন, বাংলাদেশের সুশীল সমাজ যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছে। তারা আইনশৃঙ্খলাবাহিনী প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে সরকারকে বাধ্য করতে আরও নিষেধাজ্ঞার আহবান জানিয়েছে।

রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি এন্ড লিটিগেশন বিষয়ক ফেলো ক্রিস্টি ইউয়েদা বলেন, আমরা মনে করি যতক্ষণ পর্যন্ত না বাংলাদেশে সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে তদন্ত এবং খতিয়ে দেখতে নিরপেক্ষ এবং কার্যকর জবাবদিহিতার পদক্ষেপ গ্রহণ না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবেনা চলমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা। গোয়েন্দা পুলিশ এবং ডিজিএফআইসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের মধ্যে যারা একই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা প্রয়োজন।
তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রকে এবিষয়টাতে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে যে গণতন্ত্রকে কার্যকর করার জন্য নাগরিক স্বাধীনতার সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সিনিয়র এশিয়া রিসার্চার জুলিয়া ব্ল্যাকনার বলেন, বাংলাদেশে মানবধিকার রক্ষা এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার একটি কার্যকর প্রভাব তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তার ফলস্বরুপ বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড এবং গুম তাৎক্ষণিকভাবে কমে এসেছে। কিন্তু এখনো আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, বেআইনীভাবে একটা সময় পর্যন্ত আটকে রাখা হচ্ছে, এরপর হয়তো মুক্তি দেওয়া হচ্ছে কিংবা আদালতে হাজির করা হচ্ছে। এছাড়া আমরা কারা হেফাজতে নির্যাতনের কথা শুনতে পাচ্ছি। নিষেধাজ্ঞার পরপরই বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড এবং গুম কমে যাওয়াটা স্পষ্টতই এ বার্তা দেয় যে বাংলাদেশ সরকার চাইলেই সিদ্ধান্ত নিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে পারে।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, গণতন্ত্রের সম্মেলনে তারা বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ জানাবেনা। এবছরের মে মাসে তারা ঘোষণা দিয়েছে যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধাদানকারী যেকোনো বাংলাদেশির বিরুদ্ধে তারা ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে। এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে বেকায়দায় ফেলেছে। এবিষয়টি আন্তর্জাতিক মিত্রদের গভীর পর্যবেক্ষণের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এ কারণে হয়তোআইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা নির্যাতন এবং সহিংসতায় জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত থাকতে পারে।

তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আমরা দেখতে পাচ্ছি সহিংসতা এবং পুলিশের নিপীড়ন বাড়ছে।
জুলিয়া ব্ল্যাকনার বলেন, সম্প্রতি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী ক্রমাগত স্বৈরাচারি এবং নিপীড়নমূলক হামলা অব্যাহত রেখেছে। আর এটি সরকারের এই দাবির ঠিক বিপরীত। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এই বক্তব্যের কয়েকদিন পরই বাংলাদেশের পুলিশ সদস্যরা বেপরোয়াভাবে বিরোধী দলের কর্মীদের বিক্ষোভে রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করেছে এবং পিটুনি দিয়েছে। এ ঘটনার পর বিরোধী দল বিএনপির ৮০০ এর বেশী কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এটা পরিকল্পিতভাবে বিরোধী দলের কর্মীদের গ্রেফতার এবং টার্গেট করার কৌশল।

জুলিয়া ব্ল্যাকনার বলেন, লিক হওয়া একটি রেকর্ড থেকে জানা গেছে জুলাই মাসে পুলিশের একটি মিটিংয়ে বলা হয়েছে তাদের নিদের্শ দেওয়া হয়েছে বিরোধী দলের কর্মীদের গ্রেফতার এবং বিচারের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করতে যাতে তারা আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হয়। ফাঁস হওয়া রেকর্ডে সিনিয়র এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের ওপর ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। তিনি পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেন তারা যেন রিরোধী দলের কর্মীদের মামলার মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করে। যদি তারা বিচারের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত হয় তাহলে আন্তর্জাতিকভাবে বিষয়টি নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারবেনা। বিরোধী কর্মীদের বিচারে দোষী সাব্যস্ত করতে ১০ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এঘটনার পরই একটি মামলায় বিএনপি নেতা তারেক রহমানকে সাজা দেওয়া হয় এবং তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হয়ে পড়েন।

ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিসের সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামস বিষয়ক ভিজিটিং এক্সপার্ট এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের এশিয়া-প্যাসিফিক ডিভিশনের সিনিয়র অ্যাডভাইজর জেফ্রি ম্যাকডোনাল্ড বলেছেন, বাংলাদেশের ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসের জাতীয় নির্বাচনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন দুটিকে খুবি ত্রুটিপূর্ণ, রাজনৈতিক সহিংসতামূলক এবং অনিয়মের বলে মনে করেন বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা। এটি দেশের ঐতিহ্যকে ক্ষুণ্ণ করেছে।

তিনি বলেন, কোন দল জিতবে সেটা বড় কথা নয়। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পদ্ধতিকে তার আগের অবস্থানে এবং রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রয়োজন।

ম্যাকডোনাল্ড বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস এবং সরকার, আন্তর্জাতিক এনজিও এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের প্রত্যাশার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেছে। একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের জন্য শুধু নির্বাচনের দিনের স্বচ্ছতা নয় বরং নির্বাচন পূর্ববর্তী সময় জুড়ে সুষ্ঠু পরিবেশের প্রয়োজন।

অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন নিশ্চিতে যুক্তরাষ্ট্রেক নীতি নির্ধারণী বিষয়গুলোকে কাজে লাগিয়ে প্রকাশ কাজ অব্যাহত রাখার আহবান জানিয়েছেন এই মানবাধিকার কর্মী।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পক্ষের লোকদের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখা কিন্তু প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিষয়ে দেশটি জনগণকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

এনআর/