সিনিয়র সম্পাদক, নির্বাসিত সাংবাদিকদের রাষ্ট্রীয় নিপীড়নে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ; জানা নেই বাইডেন-হাসিনার আলোচনা

দখলদার রাশিয়ার মুখে হস্তক্ষেপের কথা মানায় না: মুখপাত্র মিলার

দখলদার রাশিয়ার মুখে হস্তক্ষেপের কথা মানায় না: মুখপাত্র মিলার

মুশফিকুল ফজল আনসারী, স্টেট ডিপার্টমেন্ট করসপন্ডেন্ট

ঢাকায় দেয়া রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের বক্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, যারা প্রতিবেশি দেশকে আক্রমণ করে নারী-শিশুসহ অসহায় মানুষদের নির্বিচারে হামলা করছে, সেই রাশিয়ার মুখে অন্য দেশের হস্তক্ষেপ নিয়ে কথা বলাটা মানায় না।

মঙ্গলবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে লাভরভের ঢাকা সফরকালে দেয়া বক্তব্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এমন মন্তব্য করেন মিলার।

জি টুয়েন্টি সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের “সোহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা”র বিষয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট অবগত নয় বলে জানিয়েছেন মুখপাত্র মিলার। অথচ সম্মেলনে হাসিনার সঙ্গে বাইডেনের একটি সেলফির বরাত দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, “দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে সোহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে।” এসংক্রান্ত আলোচনার কোনো বিবৃতি হোয়াইট হাউস কিংবা স্টেট ডিপার্টমেন্ট থেকে পাঠানো হয়নি। কিন্তু অন্য রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে বাইডেনের সাইডলাইনে আলোচনার বিষয়ে রাষ্ট্রীয় তরফে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।

ব্রিফিংয়ে সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমান এবং মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে কোর্টকে ব্যবহার করে কারাদন্ড প্রদান এবং নির্বাসিত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের মালামাল জব্দ করার বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সের্গেই লাভরভের ঢাকা সফরের কথা উল্লেখ করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট করসপন্ডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, “জি টুয়েন্টি সম্মেলনের ঠিক পূর্ব মুহূর্তে বাংলাদেশ সফরে যান রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো ধরনের  কর্তৃত্বমূলক নির্দেশনা কিংবা হস্তক্ষেপের প্রচেষ্টাকে প্রতিহত করবে মস্কো। যুক্তরাষ্ট্রকে একইভাবে অভিযুক্ত করে কথা বলেছেন ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের নাম করে এই অঞ্চলে আসতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। তাদের উদ্দেশ্য হল এই কৌশলের নাম করে এখানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা এ ব্যাপারে আপনার মন্তব্য কী? ইন্দো-প্যাসিফিক ইস্যুতে আপনাদের অবস্থানটা কী?”

জবাবে মিলার বলেন, “রাশিয়া প্রসঙ্গে আমি বলবো, এটি হলো এমন একটি দেশ, যে দেশটি তার পাশ্ববর্তী দুই দেশে আগ্রাসন চালিয়েছে। যারা অন্য একটি দেশে আক্রমণাত্মক যুদ্ধ বাধিয়ে স্কুল, হাসাপাতাল এবং বাসাবাড়িতে  নিয়মিত বোমা হামলা চালাচ্ছে। তাদের মুখে অন্য একটি দেশ  নির্দেশেনা দিচ্ছে- এমন সমালোচনা মানায় না। সত্যি কথা বলতে, এটা সের্গেই লাভরভের করা সুচিন্তিত মন্তব্য নয়। যুক্তরাষ্ট্রের নীতি সম্পর্কে আমি বলবো, যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের লক্ষ্য হচ্ছে একটি অবাধ, মুক্ত, সমৃদ্ধ, নিবিড় এবং নিরাপদ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল গড়ে তুলা। এটাই এ অঞ্চলের ব্যাপারে আমাদের অবস্থান।”

জি টুয়েন্টি সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সোহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে- পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনের সাংবাদিকদের কাছে এমন দাবির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই প্রতিবেদক জানতে চান, “বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেছেন, জি টুয়েন্টি সম্মেলনের সাইডলাইনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়েছে- আপনি কী এ বিষয়টির ব্যাপারে জানাতে পারবেন? এ ধরনের আলোচনার দাবি করা হলেও বিষয়টি নিয়ে হোয়াইট হাউস কিংবা স্টেট ডিপার্টমেন্টের কোনো বিবৃতি আমাদের চোখে পড়েনি।”

জবাবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেন, “আমি যেটা জানি- অন্যান্যসব রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের আলোচনার বিষয়ে হোয়াইট হাউস থেকে বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে।”

বাংলাদেশে ২ সিনিয়র সাংবাদিকের কারাদন্ড এবং আরেক নির্বাসিত সাংবাদিকের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশের কথা উল্লেখ করে অপর এক প্রশ্নে এই প্রতিবেদক জানতে চান, “বাংলাদেশে সরকার নিয়ন্ত্রিত আদালত দেশটির দুই সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমান এবং মাহমুদুর রহমানকে ৭ বছরের জেল দিয়েছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে নির্বাসিত সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেনের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। দুই সম্পাদকসহ একজন রিপোর্টারকে সরকারের এই হয়রানির বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?”

জবাবে মিলার বলেন, “এর আগেও এ বিষয়ে আমরা বেশ কয়েকবার কথা বলেছি। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে যে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সাংবাদিকরা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে। তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে দুর্নীতি উন্মোচিত হয় এবং জনগণের তথ্য জানার অধিকার নিশ্চিত হয়। নিত্যদিনের যেসব বিষয় জনগণের জীবনকে প্রভাবিত করে সে সম্পর্কে তাদের অবগত করতে সাংবাদিকদের সুযোগ দিতে হবে। আপনারা এখানে যেমন প্রতিদিন আমার কাছ থেকে জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে চান, ঠিক তেমনি সাংবাদিকদেরকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।”

তিনি বলেন, “আমি  প্রায়শই বলে থাকি- সাংবাদিকদের অবশ্যই কোনো ধরনের ভীতি, হয়রানি এবং সহিংসতা ছাড়া কাজ করার সুযোগ করে দিতে হবে। বাংলাদেশের যেসকল সাংবাদিকরা সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসতে কাজ করে যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের রাষ্ট্রীয় এবং নির্যাতনমূলক আচরণের বিষয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।”

উল্লেখ্য, গত ১৭ আগস্ট সিনিয়র সাংবাদিক শফিক রেহমান এবং মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে সাত বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেয় ঢাকার একটি আদালত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে করা এক উদ্দেশ্যমূলক মামলায় এ রায় দেন ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নুর।

এদিকে, গত ৩১ আগস্ট সাংবাদিক ইলিয়াসের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছে ঢাকার একটি ট্রাইবুনাল। মিতু হত্যা মামলায় “মিথ্যা ও অসত্য” তথ্য সরবরাহ করা এবং তা প্রচারের অভিযোগে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রধান বনজ কুমার মজুমদারের করা এক উদ্দেশ্যমূলক মামলায় এ নির্দেশ দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জুলফিকার হায়াত।

এনআর/

যুক্তরাষ্ট্র সময়: ১২ সেপ্টেম্বর, বিকাল ৬.৩৭