স্টেট ডিপার্টমেন্ট ব্রিফিংয়ে একতরফা তফসিল, পিটার হাসকে হত্যার  হুমকি প্রসঙ্গ

নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের দাবির সঙ্গে একমত যুক্তরাষ্ট্র, রাষ্ট্রদূতকে হত্যার হুমকি অগ্রহণযোগ্য

নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের দাবির সঙ্গে একমত যুক্তরাষ্ট্র, রাষ্ট্রদূতকে হত্যার হুমকি অগ্রহণযোগ্য

মুশফিকুল ফজল আনসারী, স্টেট ডিপার্টমেন্ট করেসপন্ডেন্ট

জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের দাবির সঙ্গে একমত যুক্তরাষ্ট্র। সহিংসতা মুক্ত একটি অবাধ ও  সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে নিজেদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন করেনি দেশটি।

বৃহস্পতিবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রধান রাজনৈতিক দলসমূহের নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবি এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমঝোতার আহবান প্রত্যাখান করে বাংলাদেশে নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্ট তফসিল ঘোষণা করা প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেছে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।

একতরফা তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান প্রসঙ্গে মিলার বলেন, নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে বার্তা দিয়েছিল সে জায়গায় কোনো  নড়চড় হয়নি।

এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে লক্ষ্য করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাদের হামলা এবং প্রাণনাশের হুমকিতে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে স্টেট ডিপার্টমেন্ট। হত্যার হুমকিকে অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য করে মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, রাষ্ট্রদূতদের বিরুদ্ধে যেকোন রকমের হুমকিকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্র।

পিটার হাসকে হামলার হুমকি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের কাছে বেশ কয়েকবার উদ্বেগ জানানো হয়েছে উল্লেখ করে মিলার সরকারকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে স্বাগতিক দেশের যে বাধ্যবাধকতার শর্ত রয়েছে তা মেনে চলবে।

উল্লেখ্য, সুষ্ঠু নির্বাচনের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকার রাখায় সম্প্রতি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ, চট্টগ্রামের বাঁশখালীর চাম্বল ইউনিয়ন পরিষদ আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মুজিবুল হক চৌধুরী এবং কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফরিদুল আলম বিভিন্ন সময়ে তাদের দেয়া বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের কড়া সমালোচনা করেছেন, প্রকাশ্যে পেটানো এবং হত্যার হুমকি দিয়েছেন।

বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে বিরোধীদলসূহের দাবি উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচন আয়োজনের টার্গেট নিয়ে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, "আগামী জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে  বাংলাদেশে  আগামী ৭ জানুয়ারি ভোটের দিন ঘোষণা করেছে  সরকার। বিরোধীদলসমূহের চলমান বিক্ষোভে সরকার পদত্যাগের দাবি এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সমঝোতার আহবান প্রত্যাখান করে নির্বাচনের এই তারিখ ঘোষণা করা হলো।ক্ষমতাসীনদল বাদে প্রধান বিরোধিদল সহ দেশের সকল রাজনৈতিকদল এই তফসিলকে প্রত্যাখান করেছে। আর অন্যদিকে সরকারের বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত রয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন এবং সরকারকে জবাবদিহিতার আওতায় নিয়ে আসার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান কী?"

জবাবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান মুখপাত্র  মিলার বলেন, "আগামী নির্বাচন নিয়ে আমাদের যে বার্তা তাতে কোনো  নড়চড় হয়নি। নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরও একই বার্তা দিচ্ছি। বাংলাদেশের জনগণ যা চায়, আমরাও তা চাই। সেটা হল শান্তিপূর্ণ উপায়ে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের আয়োজন।"

তিনি বলেন, "আমরা বাংলাদেশে কোনো একক দলকে যুক্তরাষ্ট্র  সমর্থন করেনা। এক দলের ওপর অন্য রাজনৈতিক দলকে প্রাধান্যও দেয়া হয়না। আমরা সব পক্ষকে আহবান জানাই তারা যেন সংযম অবলম্বন করে, সহিংসতা পরিহার করে এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের পরিবেশ তৈরিতে যেনো একসঙ্গে কাজ করে।"

সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে জোরালো ভূমিকা রাখায় রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে আওয়ামী লীগ নেতার হত্যা করার হুমকি প্রসঙ্গ উল্লেখ করে অপর এক প্রশ্নে এই প্রতিবেদক স্টেট ডিপার্টমেন্টের কাছে জানতে চান, "ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা অব্যাহতভাবে রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূল থেকে কেন্দ্রের সব সদস্যরা একই সুরে হুমকি দিচ্ছে। রাষ্ট্রদূতকে জবাই করার হুমকি দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গতকাল (বুধবার) নিজের এবং দূতাবাস কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী কী এই হুমকি এবং সহিংসতামূলক বক্তব্যগুলোকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন?"

রাষ্ট্রদূতকে হত্যার হুমকিতে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন উল্লেখ করে প্রতিবেদকের এই প্রশ্নের জবাবে মিলার সাফ বলেন, "রাষ্ট্রদূতদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে অবশ্যই  আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। তাদের বিরুদ্ধে যেকোনো  ধরনের হুমকিকে খুব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হয়। যেকোনো সহিসংতা কিংবা আমাদের রাষ্ট্রদূতদের লক্ষ্য করে হামলার হুমকি কোনো ভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকে টার্গেট করে হামলার হুমকির এবং সহিংসাতামূলক বক্তব্যের দেয়ার  বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারে কাছে একাধিকবার জানানো হয়েছে। বিষয়টি শুধু উদ্বেগেরই নয়, অবশ্যই অগ্রহণযোগ্য।

বাংলাদেশ সরকারকে উদ্দেশ্য করে মিলার আরও বলেন, "আমরা তাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই যে, ভিয়েনা কনভেনশনের কূটনৈতিক সম্পর্কের নীতি অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস এবং কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা তাদের রয়েছে। আমরা আশা করি তারা সেই বাধ্যবাধকতার শর্তগুলো মেনে তারা কাজ করবে।"

এমআর/