ক্রমাগত নিপীড়নের মুখোমুখি ভারতের সাংবাদিকরা: ন্যাশনাল প্রেসক্লাবের আলোচনায় আউটলুক সম্পাদক শাহিনা

ক্রমাগত নিপীড়নের মুখোমুখি ভারতের সাংবাদিকরা: ন্যাশনাল প্রেসক্লাবের আলোচনায় আউটলুক সম্পাদক শাহিনা

বিশেষ সংবাদদাতা

বিশ্বের বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে ভারতের নাগরিকরা গর্ব করলেও দেশটির সাংবাদিকরা ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হচ্ছে। জেল কিংবা কঠিন সাজা এড়াতে অধিকাংশ সাংবাদিকই এখন অনুসরণ করছে সেল্ফ-সেন্সরশিপ নীতি।

মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এভাবেই ভারতের সাংবাদিকতার তিক্ত পরিস্থিতির মূল্যায়ন তুলে ধরেছেন দেশটির প্রথিতযশা সাংবাদিক এবং কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস ( সিপিজে)’র ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত শাহিনা কে কে। ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ফ্রিডম কমিটির সদস্য মুশফিকুল ফজল আনসারীর সঞ্চালনায় এতে স্বাগত বক্তব্য দেন কমিটির চেয়ারম্যান রেচেল ওসওয়ালর্ড।

২০১০ সালে ব্যাঙ্গালুরে বোমা হামলার অভিযোগে মুসলিম নেতা আব্দুল নসর মাদানী এর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা নিয়ে  রিপোর্ট প্রকাশ করার দায়ে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে সাংবাদিক শাহিনার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা করেছে ভারত সরকার। শাহিনা তার রিপোর্টে লিখেছেন--আব্দুল নসর মাদানী এর বিরুদ্ধে দেয়া স্বাক্ষ্য বানোয়াট এবং সাজানো। গ্রেফতারকৃত সেই মুসলিম নেতার শারীরিক অবস্থা ভঙ্গুর এবং তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

রিপোর্টগুলো প্রকাশের অল্প সময়ের ভিতরেই শাহিনার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবিরা  তার বিরুদ্ধে সাক্ষীদের হুমকি দেওয়া এবং ষড়যন্ত্র করাসহ নানান অভিযোগ এনেছে। এসব অভিযোগ স্পষ্টভাবে নাকচ করে দিয়েছেন এই সাংবাদিক।

মামলায় জেলে না যেতে হলেও ব্যাপক জেরার মুখোমুখি হতে হয়েছে শাহিনাকে। বিচার শেষ হবার অপেক্ষায় ১৩ বছর ধরে জামিন নিয়ে ঘুরছেন এই সাংবাদিক। বিচারে দোষী প্রমাণিত হলে তাকে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদন্ড ভোগ করতে হবে।

মামলার মধ্যেই নিজের কাজ অব্যাহত রেখেছেন শাহিনা। এরই মধ্যে নিজেকে লেখিকা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। পাশাপাশি প্রভাবশালী সাপ্তাহিক ম্যাগাজিন আউটলুকে সিনিয়র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। নিজের উদ্বেগের কথা  জানিয়ে এই লেখিকা বলেন, "এখানে একটা সেল্ফ-সেন্সরশীপের বিষয় রয়েছে... কিছু করার আগে আমাকে ভাবতে হয়, এটা কী করবো নাকি করবোনা? যাই করি তা কীভাবে করছি-- সেটা নিয়ে সবসময় পুলিশের জেরার মুখোমুখি হতে হয়।"

এত বাধার পরেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শাহিনা নারী, সমাজের দরিদ্র গোষ্ঠী এবং জেলের ভিতরের পরিবেশ নিয়ে বেশ কিছু রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন।

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস এক বিবৃতিতে বলেছে, মুসলিম হবার কারণে শাহিনাকে ভারতের হিন্দুত্ববাদি গ্রুপগুলোর ব্যাপক হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়েছে। গ্রুপগুলো চেয়েছে তার সাংবাদিকতা বন্ধ করে দিতে।

শাহিনা বলেন, "অনলাইনে আমাকে হয়রানি এবং ট্রলের মুখোমুখি হতে হয়। এসবে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এটা এখন নিত্য দিনের ঘটনা। প্রায় সময় এগুলো এড়িয়ে যাই কিংবা ব্লক করে দেই।"

কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস-এর ভারতের প্রতিনিধি কুনাল মজুমদার বলেন, ২০১০ সাল থেকে ভারতে এখন পর্যন্ত ১৭ জন  সাংবাদিকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা হয়েছে। সিপিজে তাদের মামলার বিষয়ে অবগত। এদের মধ্যে ৬ জন জেলে এবং বিচার শেষ হবার অপেক্ষায় রয়েছে, ৯ জন জামিনে মুক্ত এবং ২ জন নির্দোষ প্রমাণিত। কারো বিরুদ্ধে কোনো দোষ প্রমাণিত হয়নি।

ভারতে সাজা দেবার একটা পরিবেশ তৈরি করে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন শাহিনা। তিনি বলেন, "এই পরিবেশের ভিতরেই আমি লিখে যাচ্ছি, রিপোর্ট প্রকাশ করছি।...সংকটের ভিতরেই তৈরি করে নিয়েছি কাজ করার সুযোগ।"

হয়রানির মধ্যেই বেশ কিছু সাংবাদিক এবং প্রকাশক ভারতে ভালো সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য করে শাহিনা। তিনি বলেন, আদালতগুলোর কার্যক্রম ধীর হলেও স্বাধীন।

ভারতের বিচারব্যবস্থা এখন সাংবাদিকদের একমাত্র আশার জায়গা বলে মন্তব্য করেন শাহিনা।

এমআর