'চলমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারেনা'

বাংলাদেশে সত্যিকারের নির্বাচনের জন্য বিশ্ব নেতাদের কথা বলতে হবে: সিভিকাস মনিটর

বাংলাদেশে সত্যিকারের নির্বাচনের জন্য বিশ্ব নেতাদের কথা বলতে হবে: সিভিকাস মনিটর

সত্যিকার অর্থে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে বিশ্ব নেতাদের অবশ্যই আহ্বান জানাতে হবে। একইসঙ্গে জেলে বন্দি বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবি তুলতে হবে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন সিভিকাস মনিটর বুধবার তাদের প্রকাশিত নতুন এক রিপোর্টে বাংলাদেশ অংশে এই আহবান জানিয়েছে। 

সিভিকাসের এশিয়া প্যাসিফিক বিষয়ক গবেষক জোসেফ বেনেডিক্ট বলেন, "আমাদের ডাটা এটাই প্রমাণ করে যে, শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারকে ক্ষমতার লিপ্সা এতটাই পেয়ে বসেছে যে তাদেরকে কোনো পদক্ষেপের মাধ্যমেই থামানো যাচ্ছেনা। চলমান এই পরিস্থিতিতে কোনো অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারেনা।"

বাংলাদেশ প্রসঙ্গে রিপোর্টের শুরুতে বলা হয়েছে, "বাংলাদেশের নাগরিক সমাজের স্বাধীনতার রাস্তাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সিভিকাসের করা বাংলাদেশের এই রেটিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান অতীতের যেকোনো সময়ের চাইতে খারাপ। ২০২৪ সালের নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের রাজনীতিবিদ এবং সমালোচকদের ওপর সীমাহিন আক্রমণের কারণে দেশটির অবস্থানের এই অবনতি হয়েছে।"

'পিপল পাওয়ার আন্ডার এটাক ২০২৩' শীর্ষক সিভিকাসের তৈরি করা এই রিপোর্টে ১৯৮টি দেশ ও অঞ্চলের নাগরিক সমাজের স্বাধীনতার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের ভিন্ন মতের মানুষদের ওপর হিংসাত্মক হামলা চালাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, "রিপোর্টে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে যেসব বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে কীভাবে ক্ষমতাসীন দলটি আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সব ধরনের ভিন্ন মতের মানুষের ওপর হিংসাত্মকভাবে হামলা চালিয়েছে। একদিকে, সরকার মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক, আন্দোলনরত কর্মী এবং সমালোচকদের টার্গেট করে ভয় দেখিয়ে যাচ্ছে, হামলা, গ্রেফতার এবং নির্যাতন করছে, আর অন্যদিকে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিরোধীদলের হাজার হাজার কর্মীকে মিথ্যা মামলায় আটক করছে।"

সিভিকাস মনিটরের প্রধান গবেষক মারিয়ান্না বেলালবা ব্যারেতো বলেন, "বিশ্বজুড়ে নাগরিক সমাজের ওপর অস্বাভাবিক দমনপীড়ন প্রত্যক্ষ করছি আমরা। সারা বিশ্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনে বাংলাদেশ এখন সামনের সারিতে। দেশটিতে কার্যত সুশীল সমাজের কর্মকাণ্ড পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই।"

বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির কারণ উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, "বাংলাদেশে এই অবনতির প্রধান কারণ হলো বিরোধী রাজনৈতিক দলকে ধ্বংস করে দিতে সরকারের সহিংস চেষ্টা। প্রতিবাদ সমাবেশ ও সড়কে অবরোধ নিষিদ্ধ করেছে পুলিশ। তারপরও কেউ যদি প্রতিবাদ করতে বেরিয়ে আসে তখন নিয়ন্ত্রণহীনভাবে তাদের ওপর রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ছুড়ে পুলিশ। বিরোধী দলীয় সমর্থকদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরা হাতুড়ি, লাঠি এবং কাঠের লগ দিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করে তখন আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর লোকেরা অলস দাঁড়িয়ে থাকে।"

এতে বলা হয়, "যেসব সাংবাদিক রাষ্ট্রীয় অনিয়ম উন্মোচন করে সরকার তাদেরকেও টার্গেট করে এবং সমালোচনাকারী গণমাধ্যমকে বন্ধ করে দেয়। অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতার সুযোগ দেবার পরিবর্তে নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে আগের কালাকানুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নিষ্পেষণমূলক কিছু অংশ যুক্ত করা হয়েছে। এটা অনলাইনের সমালোচনাকারী হাজারো মানুষকে অপরাধী বানাতে ব্যবহার করা হয়।"

রিপোর্টে আরও বলা হয়, "মানবাধিকার কর্মীদেরও হয়রান বৃদ্ধি করেছে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীগুলো। নির্বাসনে থাকা মানবাধিকার কর্মী ও তাদের পরিবারও এই হয়রানির শিকার। সেপ্টেম্বরে সুপরিচিত মানবাধিকার কর্মী আদিলুর রহমান খান এবং নাসিরউদ্দিন এলানকে দুই বছরের জেল দেয় ঢাকার একটি আদালত। ১০ বছর আগে বিচারবর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের রিপোর্টকে কেন্দ্র করে তাদেরকে এই শাস্তি দেয়া হয়। পরে তারা জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।" 

জোসেফ বেনেডিক্ট বলেন, "আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাংলাদেশের সুশীল সমাজের পাশে দাঁড়ানোর এটাই উপযুক্ত সময়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার যেন তাদের পথ থেকে (নিপীড়ন) সরে আসে সেই দাবি তুলতে হবে। অবশ্যই জেলবন্দি রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অবিলম্বে মুক্তি দাবি করতে হবে বিশ্ব নেতাদের। একই সঙ্গে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাতে হবে নির্বাচনে যেন প্রকৃতপক্ষে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়।" 

এই রিপোর্টে অন্য যেসব দেশের রেটিং অবনমন হয়েছে তার মধ্যে আছে বসনিয়া হার্জেগোভিনা, জার্মানি, কিরগিজস্তান, সেনেগাল, শ্রীলঙ্কা ও ভেনিজুয়েলা।