বাংলাদেশের বিষয়ে অবস্থান বদল করেনি যুক্তরাষ্ট্র

জনআকাঙ্খার বাস্তবায়নে পাশে আছি, রাশিয়ার অভিযোগ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা: অ্যাডমিরাল কিরবি

জনআকাঙ্খার বাস্তবায়নে পাশে আছি, রাশিয়ার অভিযোগ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা: অ্যাডমিরাল কিরবি

মুশফিকুল ফজল আনসারী, স্টেট ডিপার্টমেন্ট করেসপন্ডেন্ট

বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা পূরণে যুক্তরাষ্ট্র তার আগের অবস্থানে অটল রয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে জনগণের আকাঙ্খা বাস্তবায়নে যা করার দরকার তাই করবে দেশটি। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন প্রেস সেন্টারে আয়োজিত এক বিশেষ ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির এই স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনএসসি)'র স্ট্র্যাটিজিক কমিউনিকেশন সমন্বয়ক অ্যাডমিরাল জন কিরবি।

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস 'হস্তক্ষেপ' করছেন--রাশিয়ার এমন অভিযোগকে ডাহা মিথ্যা আখ্যা দিয়ে কিরবি বলেছেন, রাশিয়ার এই অভিযোগ মিথ্যা প্রোপাগান্ডা।

অ্যাডমিরাল কিরবি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্খা অনুযায়ী নির্বাচন দেখতে চায়। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে যুক্তরাষ্ট্র তাদের তৎপরতা অব্যাহত রাখবে বলে উল্লেখ করেন বাইডেন প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা।

ব্রিফিংয়ের শুরুতেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র হস্তক্ষেপ করছে--রাশিয়ার এমন অভিযোগের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট করেসপন্ডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, "সম্প্রতি মস্কো অভিযোগ জানিয়ে বলেছে যে, ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে 'হস্তক্ষেপ' করেছেন। বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের জন্য রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ এবং অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন পিটার হাস। তিনি বাংলাদেশে নিজের নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। কারণ দেশটির ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের কাছ থেকে সহিংস আক্রমণের হুমকি পেয়েছেন। রাশিয়ার অভিযোগ এবং রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তার হুমকির বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী? আমার আরও একটি ফলোআপ প্রশ্ন আছে।"

জবাবে অ্যাডমিরাল কিরবি বলেন, "আপনি অবশ্যই আরেকটি প্রশ্ন করতে পারেন। যখন নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিলাম তখন এ ধরনের অভিযোগের কথা শুনলে দুই সিলেবলের একটি শব্দে সেটার উত্তর দিতাম। তবে আপনার প্রশ্নের উত্তরে আমি সেটা বলছিনা। আমি আপনাকে এটাই বলবো--বিষয়টি (অভিযোগ) ডাহা মিথ্যা। রাশিয়ানরা জানে, এটা মিথ্যা। এটাকে শুধুই রাশিয়ানদের কল্পিত মিথ্যা প্রচারণা বলা যায়। তারা জানে এটা মিথ্যা।"

বাংলাদেশের জনগণ যেমন অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন চায় তেমনিভাবে আমরাও সেটা চাই উল্লেখ করে অ্যাডমিরাল কিরবি বলেন, "রাষ্ট্রদূত এবং তার টিম যেভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক সেইভাবে তারা বাংলাদেশের সুশীল সমাজ, বিরোধীদল, ক্ষমতাসীন সরকারসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে। বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা পূরণে অব্যাহত থাকবে তাদের কঠোর পরিশ্রম। বাংলাদেশে আমরা সেটাই করে যাচ্ছি।"

বাংলাদেশের সরকারের বিরোধীদলের ওপর আক্রমণ এবং একতরফা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হবার অপতৎপরতার কথা উল্লেখ করে এই প্রতিবেদক অপর এক প্রশ্নে জানতে চান, "সম্প্রতি ইন্ডিয়া টুডে'র এক রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশে কর্তৃত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমর্থনে এক জোট হয়েছে ভারত, চীন এবং রাশিয়া। বিরোধীদলের ওপর আক্রমণ চালিয়ে, নেতাকর্মীদের জেলে বন্দি করে আরেকটি একতরফা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকার। যুক্তরাষ্ট্র কী বাংলাদেশ ইস্যুতে আগের অবস্থান থেকে পিছু হটছে? এর আগে আপনারা বলেছিলেন, বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্র সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।"

জবাবে যুক্তরাষ্ট্র অবস্থানের কথা তুল ধরে কিরবি বলেন, "বাংলাদেশে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন হোক সেটা আমরা চাই। সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা কাজ চালিয়ে যাবো। দেশের বাইরের নির্বাচনে আমরা কারো পক্ষ নিইনা। বাংলাদেশের নির্বাচনের ক্ষেত্রেও এই নীতির পরিবর্তন নেই। আমরা একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনকে সমর্থন করি। আমরা সে চেষ্টা অব্যাহত রাখবো, রাষ্ট্রদূত এবং তার দল বাংলাদেশের জনগণের মৌলিক প্রত্যাশার দাবি পূরণে যুক্তরাষ্ট্রের যা করার দরকার তাই করবে।"

এমআর/