বাংলাদেশে অধিকার রক্ষায় ৬ মানবাধিকার সংস্থার আহবান প্রসঙ্গে জাতিসংঘ

ভোটাধিকার ইস্যুতে আমরা অব্যাহতভাবে সম্পৃক্ত রয়েছি: মুখপাত্র ডোজারিক

ভোটাধিকার ইস্যুতে আমরা অব্যাহতভাবে সম্পৃক্ত রয়েছি: মুখপাত্র ডোজারিক

মুশফিকুল ফজল আনসারী, জাতিসংঘ স্থায়ী সংবাদদাতা

বাংলাদেশের একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য জাতিসংঘ তরফ থেকে বার বার তাগাদা দিয়ে আসছে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্থোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডোজারিক।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে নির্বাচনকে ঘিরে  বাংলাদেশের শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের অব্যাহত দমনপীড়ন  নিয়ে ৬ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার গভীর উদ্বেগ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে তৎপর হবার আহবান জানিয়ে যে বিবৃতি দিয়েছে সে প্রসঙ্গে এই মন্তব্য করেছেন ডোজারিক।

ব্রিফিংয়ে মানবাধিকার সংস্থারগুলোর বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে দেওয়া বিবৃতির দিকে জাতিসংঘ মহাসচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করে জাতিসংঘের স্থায়ী সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, "রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিশন অ্যাগেইনস্ট এনফোর্সড ডিসঅ্যাপায়েরেন্সেসসহ ছয়টি শীর্ষ মানবাধিকার সংস্থা মৌলিক মানবাধিকারের সুরক্ষায় বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহবান জানিয়েছে। তথাকথিত নির্বাচনের নামে পুরো বাংলাদেশকেই সরকার কারাগার বানিয়ে ফেলেছে। বাংলাদেশে মৌলিক মানবাধিকার এবং ভোটাধিকার রক্ষায় জাতিসংঘে কী ধরনের উদ্যেগ গ্রহণ করছে?"

জবাবে মুখপাত্র ডোজারিক বলেন, "এ বিষয়টি নিয়ে আমরা অব্যাহতভাবে সব পক্ষের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছি  এবং  জাতিসংঘ তরফ থেকে বার বার একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলে আসছি। আমরা এমন অবস্থা দেখতে চাই,  যেখানে সব বাংলাদেশিরা কোনো ধরনের ভীতি প্রদর্শন এবং প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই যেনো ভোট কার্যক্রমে অংশ নিতে  পারে।"

উল্লেখ্য, এক যৌথ বিবৃতিতে বাংলাদেশের চলমান মানবাধিকার লঙ্ঘন পরিস্থিতি এবং নাগরিক স্বাধীনতা সংকুচিত হওয়া নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ৬ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।বিবৃতিতে তারা বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে চারটি সুপারিশ তুলে ধরেছে। তাতে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সুপারিশগুলো হচ্ছে- 

১. প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে সবধরণের  সহিংসতা বন্ধ করতে হবে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা, ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং একাগ্রতা  যাতে সম্মান করা হয়, সুরক্ষিত রাখা হয়- তা নিশ্চিত করতে হবে।

২. অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে সব রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বিনাকারণে  আটক অধিকারকর্মী এবং বিরোধী দলীয় সদস্যদের মুক্তি দিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ বিচারিক প্রক্রিয়া। 

৩.চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের পূর্ণাঙ্গ এবং পক্ষপাতহীন তদন্ত করতে হবে।মৃত্যু এবং নির্যাতনের অভিযোগগুলোও এর আওতায় থাকবে। 

৪. আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডাটা সুরক্ষা আইনের খসড়াকে পুনর্মূল্যায়ন এবং পুনবিন্যাস  করতে হবে। 

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মাত্রাতিরিক্ত সহিংসতা, বেআইনী গ্রেফতারের মাধ্যমে দেশটির গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার পরিস্থিতির দুর্দশা বুঝা যায়। এই অন্যায়গুলো এমন একটা সময়ে হচ্ছে যখন আগামী জানুয়ারিতে একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জনগণ বিক্ষোভ করছে। মৌলিক গণতান্ত্রিক নীতির চর্চার বদলে সরকারের সহিংসতা এবং অত্যাচারের নীতির কারণে দেশটির জনগণের জন্য ভয়, উৎকণ্ঠা এবং চরম অনিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের সমন্বিত সমাবেশ ও প্রতিবাদ বিক্ষোভের পর  অক্টোবর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এসব প্রতিবাদকারী ও রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বীকে দমন করতে সহিংসতার পথ বেছে নিয়েছে। এই দমনপীড়নে একজন সাংবাদিক সহ ১৭ জনকে হত্যা করা হয়েছে। বিরোধী দলের ৮,২৪৯ জন নেতা আহত হয়েছেন। সরকার গণহারে এবং খেয়ালখুশি মতো কমপক্ষে ২০ হাজার বিরোধী দলের সমর্থককে আটক করেছে।

এমআর/

যুক্তরাষ্ট্র সময়: ১২ ডিসেম্বর, বিকাল ০৪.৩৩, মঙ্গলবার