ওয়াশিংটনে রাইট টু ফ্রিডমের ওয়েবিনারে বক্তারা

বিরোধী নেতাদের কারাগারে আটকে নির্বাচন বহির্বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা পাবেনা, সংকটের সমাধান সহজ নয়

বিরোধী নেতাদের কারাগারে আটকে নির্বাচন বহির্বিশ্বে গ্রহণযোগ্যতা পাবেনা, সংকটের সমাধান সহজ নয়

বিশেষ সংবাদদাতা

গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ না করায় বাংলাদেশের আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য হবেনা। প্রধান বিরোধীদল বিএনপির নেতাকর্মীদের শর্ত সাপেক্ষে মুক্তি দিতে আওয়ামী লীগ নেতার বক্তব্য প্রমাণ করে যে, এসব গ্রেফতার আর কারাদন্ড রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিরোধী নেতাকর্মীদের গণহারে জেলে আটকে এবং কারাদন্ড দিয়ে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে তাতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়েছে। চলমান এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নির্বাচন বহির্বিশ্বে গ্রহণযোগ্য হবেনা।

ওয়াশিংটন ভিত্তিক অধিকার সংগঠন 'রাইট টু ফ্রিডম' এর উদ্যেগে আয়োজিত 'বাংলাদেশ'স কনটেনটিশাস ইলেকশন: পথওয়েস এন্ড ট্র্যাজেকটরিস' শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।

বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয় বরং তাদের সমমনা অন্য ইউরোপীয় দেশগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে কঠিন বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। সরকারকে বাধ্য করতে হবে তারা যেনো বিরোধীদলের কর্মীদের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে। 

ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের সাবেক ডেপুটি চিফ অফ মিশন এবং রাইট টু ফ্রিডম এর বোর্ড মেম্বার জন এফ ড্যানিলোভিজের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখেন মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর এশিয়া এডভোকেসি ডিরেক্টর জন সিফটন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর এশিয়া এডভোকেসি ডিরেক্টর ক্যারোলিন ন্যাশ, অর্থনীতিবিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, আলজাজিরা, টিআরটি, ভয়েস অফ আমেরিকার কন্ট্রিবিউটিং রাইটার ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ফয়সাল মাহমুদ। ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন রাইট টু ফ্রিডম এর প্রেসিডেন্ট অ্যাম্বাসেডর উইলিয়াম বি মাইলাম।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এর এশিয়া এডভোকেসি ডিরেক্টর জন সিফটন তার বক্তব্যে বাংলাদেশে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, "বাংলাদেশে এখন একটা রাজনৈতিক সংকট চলছে এবং এটা খুব সহজেই সমাধান হবেনা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিত্বাকারী সংস্থাগুলো-- এগুলো কোনো পক্ষপাতমূলক সংস্থা নয়। বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিলো তখনো আমরা র‍্যাবের কার্যক্রম নিয়ে কথা বলেছি। এটা সবার কাছে স্পষ্ট হওয়া দরকার যে বাংলাদেশের নির্বাচনে আমরা কারো পক্ষ নিচ্ছিনা।"

তিনি বলেন, "আমরা এখন সবচাইতে বেশী উদ্বিগ্ন যে বিষয়টা নিয়ে তা হলো-- বিএনপির অধিকাংশ শীর্ষ নেতারা হয়ে জেলে আটক নতুবা তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। দলটির অনেক নেতাকর্মীই জেলে, অনেক বিচার কাজ চলছে আবার অনেকে হুমকির সম্মুখীন। বিএনপি স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছে তারা এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেনা। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দলটিকে প্রস্তাব দিয়ে বলা হয়েছিলো যদি তারা নির্বাচনে যেতে রাজি হয় তাহলে বিএনপির সব নেতাদের একরাতে জেল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এই বক্তব্যই প্রমাণ করে দেয় যে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা দায়ের করা হচ্ছে এবং যেভাবে সাজা দেওয়া হচ্ছে এর সব কিছুই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সরকারের এই প্রস্তাবকে প্রতারণা বলেছে বিএনপি। দলটি বলছে, নিরপেক্ষ তত্ত্ববধায়ক সরকার ছাড়া অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।"

আগামী নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হবেনা উল্লেখ করে সিফটন বলেন, "বাংলাদেশের ভবিষ্যত যে কেবলি অন্ধকার বরং সেখানে কী হতে যাচ্ছে সেটা আমরা বলতে পারছিনা। এর জন্য আমাদের বসে থেকে অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই। আমরা জানি বাংলাদেশে যে নির্বাচন হতে যাচ্ছে সেটা পুরোপুরি অবাধ এবং সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হবেনা। এতে বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা পূরণ হবেনা।"

তিনি আরও বলেন, "এখন যে বিষয়টাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত সেটা হলো বাংলাদেশের জনগণের মানবাধিকার। কোনো নাগরিক যেন হত্যাকান্ডের শিকার না হয়, যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়া কাউকে যেনো বেআইনী এবং খেয়াল খুশিমতো গ্রেফতার না করা হয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ তৈরি করা যাতে করে তারা সহিংস আচরণ না করে, খেয়াল খুশিমতো কাউকে আটক না করে এবং বিচারের মুখোমুখি না করে যেমনটা এখন সেখানে চলছে।"

সিফটন বলেন, "আমরা বাংলাদেশ সরকারকে বলবো তারা যেনো এমন পদক্ষেপ নেয় যাতে করে ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হয়। এখন যেভাবে অনিয়ম করে নির্বাচন হচ্ছে সেভাবে নয় এবং একতরফভাবে নয়। এমনভাবে নির্বাচন করা যাবেনা যেটা পুরো জাতির গণতান্ত্রিক প্রত্যাশা এবং নির্বাচনের যে বৈধ পন্থা রয়েছে সেটাকে খর্ব না করে।"
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অন্য দেশগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের আহবান জানিয়ে সিফটন বলেন, "প্রশ্ন হচ্ছে, সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশের বিষয়টিকে কে কতটা গুরুত্ব দিতে প্রস্তুত? সরকারের বাইরে বিদেশ থেকে এটা নিয়ে চাপ তৈরি হয়েছে। ক্যারোলিন তার বক্তব্যে যেমনটা বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র এই ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে। কিন্তু তারা একাই শুধু এই কাজটা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অন্য দেশের রাষ্ট্র প্রধানদের এই ইস্যুতে সমন্বয় করতে হবে এবং শক্ত বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। এটা না করার কোনো কারণ আমি দেখিনা।"

তিনি বলেন, "বাংলাদেশের অর্থনীতি ভঙ্গুর অবস্থায় চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশের ওপর যে ঋণের বোঝা চেপেছে আগামী বছরগুলোতে তা পরিশোধ করার মতো যথেষ্ট টাকা সরকারের হাতে নেই। ঋণের এই বোঝা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে চীনের মতো হয়তো আরও অনেক অংশীদার বিভিন্ন শর্তে অর্থনৈতিক সহায়তার প্রস্তাব দিতে পারে। এর বাইরে বাংলাদেশের একটি রপ্তানি বাজার রয়েছে যার ক্রেতা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ঐ দেশগুলো যদি কর আরোপ কমানোর জন্য মানবাধিকার এবং শ্রম অধিকারের শর্ত জুড়ে দেয় তাহলে সেটা হবে কার্যকর একটা উদ্যেগ। এটা করা গেলে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তার আচরণ পাল্টাতে বাধ্য হবেন। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের এ ধরনের চাপ তৈরির কোনো তৎপরতা দেখতে পাচ্ছিনা। এটা হয়তো কারো কাছে শুনতে আধিপত্যবাদ কিংবা অন্যায় কোনো কাজ মনে হতে পারে।"

সিফটন বলেন, "এটা খুব বেশী বাড়াবাড়ি হবেনা যদি ইউরোপীয় ইউনিয়ন নেতৃবৃন্দ, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিটি দেশ, সংস্থাটির পররাষ্ট্র নীতির সঙ্গে জড়িত নেতৃবৃন্দ, বৃটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতারা তাদের সমমনা অন্য নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে, এমনকি ভারতকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে, বিশেষ করে সহিংসতা নিয়ে উদ্বেগ জানায়। এর ফলে যেটা হবে সেটা হলো-- কিছু প্রাণ অন্তত হত্যাকান্ড থেকে বেঁচে যাবে, হাজার হাজার মানুষকে জেল থেকে মুক্ত করা যাবে এবং পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটিয়ে এমন একটি দিনের জন্য পরিবেশ তৈরি করা যাবে যেদিন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশের জনগণ তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে।"

তিনি বলেন, "আমি এ ব্যাপারে একটু দুশ্চিন্তায় রয়েছি। কারণ ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ছাড়া ইউরোপের কোন দেশ এ ইস্যুতে সোচ্চার হচ্ছেনা। তারা নিরব ভূমিকা পালন করছে। বড় ধরনের সহিংসতার কোনো ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত হয়তো তারা তৎপর হবেনা।"

সিফটন বলেন, "এ সহিসংতার বিষয়ে আমি শেষ দিকে যেটা বলতে চাই সেটা হলো-- বাংলাদেশে কী ঘটতে যাচ্ছে সেটা আমরা বলতে পারছিনা। তবে এটা স্পষ্ট যে অসংখ্য বিএনপির নেতাকর্মী জেলে আটক রয়েছে। ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে যে ধরনের হরতাল, অবরোধ এবং অন্যান্য বিক্ষোভ হয়েছে এটা হয়তো আরও বাড়তে পারে। কারণ রাজনীতির মাঠে নেতৃত্বের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এমন কিছু যদি ঘটে তাহলে সহিংসতা আর গ্রেফতারের ঘটনা আরও বাড়বে। বড়দিন এবং নতুন বছরের বন্ধের এই সময়টা বেছে নিয়ে দমন-পীড়ন চালানোর রেকর্ড শেখ হাসিনা এবং তার আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর রয়েছে। এটা এমন সময়ে করা হয় যখন বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা ছুটিতে থাকেন।"

সরকারকে নির্যাতনমূলক কর্মকান্ড বন্ধ করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, "হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যেটা মনে করে সেটা হলো বাংলাদেশ সরকার এই মুহূর্তে সঠিক কাজ করবে বলে মনে হয়না। যে অগণতান্ত্রিক পরিস্থিতি চলছে সেটা থেকে বের হবার কোনো উদ্যেগ সরকার নিবেনা। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটছেনা। আমরা সরকারকে আহবান জানাই তারা যেন সব ধরনের নির্যাতনমূলক কর্মকান্ড থেকে সরে দাঁড়ায় এবং এমন পরিবেশ তৈরি করে যাতে করে আগামী দিনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার একটি পরিবেশ তৈরি হয়।"

বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গণহারে ধরপাকড় এবং সাজা দেবার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর এশিয়া এডভোকেসি ডিরেক্টর ক্যারোলিন ন্যাশ বলেন, "বাংলাদেশে কী ঘটছে তা পর্যবেক্ষণে রেখেছে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের পর থেকে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার এবং আদালতে সাজা দেবার বিষয়টি নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। এসব ধরপাকড় এবং সহিংসতার সময়টাতে অনেকে নিহত এবং আহত হয়েছে।  বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের ওপর অতিরিক্ত বল প্রয়োগের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রীর সহিংসতাকে উসকে দেওয়া বক্তব্যের একটি যোগসূত্র রয়েছে। পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের পদক্ষেপে সেই যোগসূত্র দেখা যাচ্ছে। কোনাে ধরনের অপরাধ ছাড়াই যেভাবে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হচ্ছে সেটাও উদ্বেগের। যারা বিদেশে রয়েছে কিংবা হাসপাতালে আহত অবস্থায় ভর্তি কিংবা মারা গেছে তাদেরকেও মামলায় আসামি করা হচ্ছে। এর বাইরেও আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি সেটা হলো সম্প্রতি বিরোধী দলের নেতাদের পুরনো মামলায় তড়িঘড়ি করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। ঘটনাগুলো বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।"

তিনি বলেন, "গত কয়েক মাস ধরে অ্যামনেস্টি যে বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করে আসছে সেটি হল সুশীল সমাজের প্রতিনিদেরকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল সিকিউরটি অ্যাক্টকে বদল করে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নামে নতুন আইন করা হয়েছে। এ আইনে এমন সব ধারা রয়েছে যেখানে সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের টার্গেট করা হয়েছে। এই আইনের শিকার হচ্ছেন প্রবাসে অবস্থান করা বাংলাদেশিরাও। এর মাত্রা বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে যেসব বাংলাদেশিরা অবস্থান করছেন তারা বিভিন্ন সময় কথা বলার কারণে বাংলাদেশে অবস্থান করা তাদের পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করা হচ্ছে।"

ক্যারোলিন বলেন, "বাংলাদেশে বিরোধী নেতাকর্মীদের গণহারে গ্রেফতার, সাজা, আইনের অপব্যবহার নিয়ে অ্যামনেস্টি নিজেদের উদ্বেগের কথা সরকারকে জানিয়েছে এবং যথাযথ পদক্ষেপ নেবার আহবান জানিয়েছে। কিছু আইন আছে যেগুলো তৈরি করা হয়েছে কৌশলে ভিন্নমতকে দমন করার জন্য। বিগত কয়েক মাস ধরে এই আইনের অপব্যবহার লক্ষ্য করছি এবং সরকারকে এসব থেকে বিরত থাকতে চাপ দিয়েছি। সরকারের প্রতি আমাদের এই আহবান এখনো অব্যাহত রয়েছে।"

বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা চরম ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করে ক্যারোলিন বলেন, "বাংলাদেশে বিরোধীদলের নেতাকর্মীরা চরম ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, পুলিশ তাদেরকে হয়রানি করে বেড়াচ্ছে। তারা এমন একটা অবস্থানে রয়েছে যেখানে কথা বললে বিপদের ঝুঁকি রয়েছে। আমরা যেসব বিষয় নিয়ে সরকারকে চাপ দিয়ে যাচ্ছি সেই ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আর এর প্রতিক্রিয়াও আমরা দেখতে পাচ্ছি। সরকার আইনকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে বেশ কিছু সুশীল সমাজের প্রতিনিধি এবং মানবাধিকার কর্মীদের টার্গেট করছে। সরকারের উদ্দেশ্য হল ঐসব সংস্থাকে বন্ধ করে দেওয়া এবং এমন পরিবেশ তৈরি করা যাতে করে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের স্বাধীনতার পরিবেশ না থাকে।"

সরকারের বাড়াবাড়ি বন্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ প্রয়োগের আহবান জানিয়ে এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, "বাংলাদেশে গণতন্ত্রের জন্য যুক্তরাষ্ট্র যে পদক্ষেপ নিচ্ছে সেই তৎপরতায় আন্তর্জাতিক অন্য মিত্রদেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন যাতে করে দেশটি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেটা সফল হয়। সরকারের বাড়াবাড়ি এবং উল্টো প্রতিক্রিয়া থামাতে এ ধরনের উদ্যেগের প্রয়োজন রয়েছে।"

অ্যাম্বাসেডর উইলিয়াম বি মাইলাম তার বক্তব্যে বলেন, "বাংলাদেশে হয়তো নির্বাচনের নামে যেনতেন একটা নির্বাচন হয়ে যাবে। এর ফলাফল যেটা হবে সেটা হলো বাংলাদেশ আবারও সেই কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যাবে। একটা বিষয় এখনো আমার কাছে স্পষ্ট নয়, সেটা হলো এই যাচ্ছেতাই নির্বাচনের পর আমাদের সরকার এবং অন্য দেশগুলো কী ধরনের পদক্ষেপ নিবে। এ পরিস্থিতিকে মোকাবিলা করার জন্য এবং বাংলাদেশকে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা থেকে ফিরিয়ে আনতে তারা অনেক ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারেন। তবে আমি একটি বিষয় নিয়ে চিন্তিত। সে দুশ্চিন্তার বিষয়টি হলো বিশ্বে আরও অনেক কিছু ঘটছে, আমরা এখন সেগুলো নিয়ে কাজ করছি, এক্ষেত্রে বাংলাদেশের বিষয়টি হয়তো উপেক্ষিত থেকে যাতে পারে।"

তিনি বলেন, "রাইট টু ফ্রীডম এবং অন্যান্য সংস্থার যারা এখানে প্রতিনিধিত্ব করছেন তাদের দায়িত্ব হলো সংকট উত্তরণে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কীভাবে সংলাপ করা যায় সেটা নিয়ে কাজ করা। কারণ দেশটিতে কর্তৃত্ববাদী শাসন আরও চেপে বসেছে।"

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, "রাজনীতি এবং অর্থনীতির বিষয়টি বুঝতে হলে আমাদের বাংলাদেশে এখন যে সংগ্রাম চলছে সেদিকটিতে খেয়াল করতে হবে। আমরা দুইটি লড়াই দেখেছি একটি ১৯৪৭ সালে আরেকটি ১৯৭১ সালে। জনগণ তাদের জীবন ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার জন্য লড়াই করেছে। বাংলাদেশের জনগণের প্রেরণার মূল জায়গা এটাই।"

তিনি বলেন, "কীভাবে বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে বয়ান তৈরি করে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে সেটা নিয়ে কথা বলবো। এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথাই বলা যাক। ২০১৪ সালে ২২৫ ডলার দরে ৫০,০০০ টন চাল শ্রীলংকায় রপ্তানি করা হয়েছিলো। এটি নিয়ে মিডিয়ায় হইচই করে সংবাদ ছাপা হয়। কিন্তু মিডিয়ায় যে খবরটি আসেনি সেটি হলো একই বছর ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন টন চাল ৩০০ ডলার দরে বাইরের দেশ থেকে আমদানি করেছিলো সরকার। ২০২১ সালের জুন মাসের শেষ দিকে আমাদের রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়েছিলো। সাধারণ বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৫-৬০ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ঐ বছর সে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় ৮২.৫ বিলিয়ন ডলার। সেই আয়ের টাকা কোথায় গেল? এটা যৌক্তিক প্রশ্ন।সে টাকা কোথায় গেলো সেটা নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো অডিট পর্যন্ত করেনি। আপনারা যদি ২০২৩ সালের জুন মাসের শেষ দিকে তাকান, তাহলে দেখতে পাবেন রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৫.৬ বিলিয়ন ডলার।  এরপর বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে তারা ৪৩ বিলিয়ন ডলার হাতে পেয়েছে। হিসেবের বাইরের সেই ১২ বিলিয়ন ডলার টাকা কোথায় গেলো? এটা অস্বচ্ছতার একটি সংস্কৃতি। জনগণ জানার সুযোগ পাচ্ছেনা টাকা কোথায় উধাও হয়ে যাচ্ছে।"

তিতুমীর বলেন, "বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২২ শতাংশ। ২০০৯ সালে যেখানে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ ছিলো ২৫ বিলিয়ন ডলার আর সেটার এখন এসে দাঁড়িয়েছে ১০০ বিলিয়ন ডলার। এই ঋণের পরিমাণ আর কত বাড়বে? এবং বাংলাদেশই এই ঋণের টাকা কীভাবে পরিশোধ করবে?"

তিনি আরও বলেন, "এখন যেটা নিয়ে ভাবতে হবে সেটা জিডিপির প্রবৃদ্ধি নয় বরং সেটা হলো-- ঋণের টাকা পরিশোধ করার মতো আয় বাংলাদেশের রয়েছে কীনা? যে পরিমাণ টাকা বাংলাদেশ ঋণ নিয়েছে সেটা পরিশোধ করার জন্য চারগুণ পরিমাণ সময়ের দরকার। কিন্তু আমরা যেটা শুনতে পাচ্ছি সেটা হলো উন্নয়েনর বিস্ময় আর উন্নয়নের গল্প। এ বিষয়টার দিকে আমাদের খেয়াল করতে হবে। ভাবতে হবে কীভাবে উন্নয়নের বয়ান শুনিয়ে বিষয়টাকে বৈধতা দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে।"

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করার চিত্র তুলে ধরে রাইট টু ফ্রিডম এর এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, "প্রেস ফ্রিডম সূচকে সারা বিশ্বে ১৮০ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৬৩তম। যুদ্ধ বিধ্বস্ত আফগানিস্তান থেকে ছয় ধাপ পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। এছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশের পরিস্থিতি সব চাইতে খারাপ।"

বাংলাদেশে সরকার গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে উল্লেখ করে এই মানবাধিকার কর্মী বলেন, "বাংলাদেশে এখন সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন, নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া এবং নিয়ন্ত্রিত সাংবাদিকতা চলছে দেশটিতে। এখানে (দেশের বাইরে) আমি স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করছি। আমার প্রশ্ন পছন্দ হউক বা না হউক কেউ বাধা দিচ্ছেনা। বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী যে সংবাদ সম্মেলন করেন সেটাকে 'পার্টি কনফারেন্স' বলা যায়। কেউ সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করেনা। এটা এখন আর গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নেই। তারা যেটা করে সেটা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীকে সন্তুষ্ট রাখার কাজ। তারা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সম্বোধন করেই তাকে খুশি রাখতে চায়। দেশে এখন এই ধরনের একটা পরিবেশ বিরাজ করছে। বাংলাদেশের সরকার বলছে তারা অনেক ইলেকট্রনিক মিডিয়াকে কাজ করার অনুমতি দিয়েছে এবং দেশে মিডিয়া স্বাধীনভাবে কাজ করছে। এটা এক দিয়ে সত্য যে কিছু মিডিয়া প্রােপাগান্ডা মেশিনের মতো কাজ করছে। "

তিনি আরও বলেন, "আপনি যদি কিছু বাংলা টিভির টকশো দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন ক্যামেরার সামনে সঞ্চালক বাদে তিন জন অতিথি সেখানে উপস্থিত থাকেন। একজন বিরোধীদল বা ভিন্ন মতের বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ হয়ে সঞ্চালকসহ বাকি সবাই তাকে আক্রমণ করে কথা বলেন। তারা এই ধরনের ৫০ টিরও বেশী টিভি চ্যানেলকে অনুমতি দিয়েছে যেগুলো প্রোপাগান্ডা মেশিনের কাজ করছে।"

মুশফিক বলেন, "বাংলাদেশে আপনি সাংবাদিকতা করতে পারবেন এই শর্তে যে আপনি সরকারের পক্ষে কথা বলবেন। বাংলাদেশে কিছু তথাকথিত সাংবাদিক তারা নিজেদের স্বার্থে এবং নিজেদের প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের একটি শীর্ষ বাংলা পত্রিকার সম্পাদককে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো আপনি কেন অন্যায়ভাবে সরকারের পক্ষাবলম্বন করছেন? জবাবে তিনি বলেন, আমাকে পত্রিকা টিকিয়ে রাখতে হবে, নিজেদের টিকতে হবে,  কর্মীদেরবেতন দিতে হবে পরে মুক্তগণমাধ্যম।তারা যেকোনো উপায়ে হোক সমঝোতা করে চলার চেষ্টা করছে।যারা বাইরে থেকে সাংবাদিকতার দায়িত্ব পালন করার চেষ্টা করছেন যদি তাদের কথা বলি তাহলে বলতে হয়, সাংবাদিক সারোয়ারের সাংবাদিকতার জন্য তার বোনকে ১৬৯ দিনে জেলে আটক রাখা হয়েছিলো। যারা দেশের বাইরে থেকে সাংবাদিকতা করেন তাদের পরিবারের সদস্যদের হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শন করা হয়।"

তিনি বলেন, "বাংলাদেশে গণমাধ্যমের কোনো ধরনের স্বাধীনতা নেই। কিছু সংবাদপত্র এবং মিডিয়া তাদের পাঠকদের ধরে রাখার জন্য কিছু খবর পরিবেশন করার চেষ্টা করছেন। তবে অধিকাংশ সাংবাদিক, যেমন ফয়সাল মাহমুদের মতো যারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান তারা ঝুঁকির মুখে রয়েছেন। আমি উদাহরণ হিসেবে একজন সম্পাদকের কথা বলতে চাই। আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়কে  নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন। এজন্য তাকে কোর্টের সামনেই নির্মমভাবে পিটানো হয়েছিলো। এই একটি রিপোর্টের জন্য তাকে মাসের পর মাস জেলে আটক থাকতে হয়েছে। এটাই বাংলাদেশের সাংবাদিকতার চিত্র। এখানে সবকিছুই নিয়ন্ত্রিত।"

ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক ফয়সাল মাহমুদ বলেন, "বাস্তবতা হচ্ছে, এটা সবাই জানে যে বিগত ১৫ বছর ধরে বিরোধীদলের রাজনৈতিক কর্মী, ভিন্নমত, মানবাধিকার কর্মীদেরকে জেলে আটকে রাখতে বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করেছে আওয়ামী লীগ। বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আপনি কোনো কথা বলতে পারবেননা কারণ আপনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনার ঝুঁকি রয়েছে।"

তিনি বলেন, "রাজনীতিকে যদি 'গেইম অফ থ্রোন' মনে করা হয় তাহলে বলতে হয় আওয়ামী লীগ সব জায়গায় তাদের আধিপত্য বিস্তার করেছে এবং তাতে তারা সফল হয়েছে। তারা প্রধান বিরোধীদলকে এমনভাবে কোণঠাসা করেছে যে আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগ মুর্হূতে দলটি শীর্ষ নেতাদের জেলে আটক করে রেখেছে। জনগণ এর বিরুদ্ধে কিছু করার সুযোগ পাচ্ছেনা কারণ প্রতিটি সেক্টরে উদ্বিগ্ন হবার মতো অবস্থা দেশে বিরাজ করছে। এমনকি সাংবাদিক হিসেবে যা ঘটছে তা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করতে আমরা দ্বিধাবোধ করছি। কারণ এ নিয়ে রিপোর্ট করলে আমরা বিভিন্নভাবে আক্রান্ত হতে পারি। যেমন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ অন্যান্য আইনে মামলার কথা বলা যায়। আমরা জানিনা কোন রিপোর্টের কারণে ক্ষমতাসীন দল রেগে যেতে পারে।"

ফয়সাল মাহমুদ বলেন, "ভিন্নমতের সাংবাদিক যারা রয়েছেন তাদের খুব কঠিন সময় পার করতে হচ্ছে। এই ভয়ের কারণ শুধু যে ক্ষমতাসীন দলের নেতা এবং তার সমর্থকরা সেটা নয় বরং স্থানীয় নেতাকর্মীরা যখনি অনলাইনে কোনো লেখাকে নিজেদের জন্য আক্রমণাত্মক মনে করে তখনি তারা মামলা করার সুযোগ পায়। আপনার বিরুদ্ধে কী হতে যাচ্ছে আসলে আপনি সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবেন না।"

বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে এই সাংবাদিক বলেন, "যদি আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বলি, একজন সাংবাদিক হিসেবে বলতে পারি যে নির্বাচনটি হতে যাচ্ছে সেটা নিয়ে আওয়ামী লীগ নিজেও লজ্জিত। আমি দলটির বেশ কিছু নেতা ও কর্মী, এমনকি তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছে নির্বাচনটি তাদের কাছে উৎসবের কিছু মনে হচ্ছেনা। তাদের মতে তারা সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে উৎসবমুখর পরিবেশে অংশগ্রহণ করেছিলো। ২ বছরের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার পর নির্বাচনের মাধ্যমে যে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটেছিলো সেটা ছিলো আনন্দ মুখর। এখন যেটা হচ্ছে সেটাকে আমার কাছে নির্বাচন মনে হচ্ছেনা। ১৮ ডিসেম্বর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে সেটা নিয়ে নিউজ হচ্ছে। কিন্তু এরপরও তাদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি কাজ করছে। তারা এটা জানে যে তারা যে কাজটা করছে সেটা সঠিক কোনো কাজ হচ্ছেনা। তাদের বিরুদ্ধে সত্যিকারের কোনো বিরোধীদল মাঠে নেই।"

ওয়েবিনারে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে সাংবাদিক ফয়সাল মাহমুদ বলেন, "বাংলাদেশে সাংবাদিক নির্যাতের চিত্রটা অন্য দেশগুলো থেকে অভিনব রকমের।  বিগত ১৫ বছর ধরে এখানে অধিকাংশ সাংবাদিক রিপোর্টিংয়ে সেল্ফ সেন্সরশীপ আরোপ করছে। প্রকৃত অর্থে যা ঘটছে তা নিয়ে লেখার সুযোগ তারা পাচ্ছেননা। এর পিছনে অনেক কারণ রয়েছে, বেশ কিছু আইন এ জন্য বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেমন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট। এটি এখন সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট। আপনি জানেন না অনলাইনে লেখা কোন মন্তব্যের কারণে আপনার বিরুদ্ধে এই আইন ব্যবহার করা হবে। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে ৩৪০ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।"

এক প্রশ্নের জবাবে জন সিফটন বলেন, "আমি এর আগে উদ্বেগ প্রকাশ করার জন্য ভারতকে ভূমিকা রাখার কথা বলেছিলাম। এটা এজন্য বলিনি যে আমি এটা বিশ্বাস করি যে ভারতে গণতান্ত্রিক নীতিগুলো মেনে চলছে বর্তমান সরকার বরং এটা বলেছি এ কারণে যে বাংলাদেশের নির্বাচনে তাদের একটা দায়িত্ব রয়েছে। যাতে করে নির্বাচন পরবর্তী কোনো অস্থিরতা তৈরি না হয়। এ বিষয়গুলোর সঙ্গে অর্থনীতির একটা যোগসূত্র রয়েছে। অর্থনৈতিক সংকট একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে। যে সরকারই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাকে এ সংকটের মুখোমুখি হতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ কখনো বড় কোনো অর্থনৈতিক সংকটের আগে সে বিষয়ে কার্যকর পন্থায় হস্তক্ষেপ করেছে এমন রেকর্ড খুব কম রয়েছে। আপনি যখন দেশে কিংবা বিদেশি ঋণের ক্ষেত্রে কোন ভুল করে বসবেন তখনি এই প্রতিষ্ঠানগুলো আপনার কাছে আসবে এবং শুধু রাজস্ব নয় তখন সুশাসনসহ অন্যান্য সমস্যাগুলো নিয়ে কথা বলা শুরু করবে।"

তিনি আরও বলেন, "বিশ্বব্যাংকের উচিত সরকারে আওয়ামী লীগ নাকি বিএনপি রয়েছে সেটা ভুলে গিয়ে সুশাসন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং আইনের শাসন নিয়ে তাদের উদ্বেগের বিষয়ে কথা বলা।"

সিফটন বলেন, "শ্রমিকদের অধিকারের বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ জায়গায় উন্নতি হয়নি বরং এটাকে নিয়ে বেশী করে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে।"

এমআর/