মুশফিকুল ফজল আনসারী, স্টেট ডিপার্টমেন্ট করেসপন্ডেন্ট
ওয়াশিংটন, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪, বুধবার
যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির অন্যতম লক্ষ্য হলো বাংলাদেশের জনগণের সত্যিকারের সার্বজনীন মুক্তি নিশ্চিত করা। বুধবার ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফরেন প্রেস সেন্টারে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির ২ বছর পূর্তী উপলক্ষে আয়োজিত এক বিশেষ ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে চলমান কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে এ মন্তব্য করেন ব্যুরো অব সাউথ এন্ড সেন্ট্রাল এশিয়ান অ্যাফেয়ার্সের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আখতার।
আফরিন বলেন, "আমরা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশে বিস্তৃত পরিসরে কাজ করে যাচ্ছি। বিস্তৃত পরিসরে এই কাজ করার লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা, তাদের অধিকার সংরক্ষণ করা এবং দীর্ঘ মেয়াদে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা।"
বিশেষ এই ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অব ইস্ট এশিয়া অ্যান্ড প্যাসেফিক অ্যাফেয়ার্স ক্যামিল ডসন। ব্রিফিংয়ে মডারেটর এর দায়িত্ব পালন করেন পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের কর্মকর্তা মিরান্ডা প্যাটার্সন।
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে করা প্রথম প্রশ্নে দেশটিতে কর্তৃত্ববাদী শাসনের উত্থানের কথা উল্লেখ করা স্টেট ডিপার্টমেন্ট করেসপন্ডেন্ট মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, "বাংলাদেশে যেভাবে কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থার উত্থান ঘটেছে সেই প্রেক্ষাপটে দেশটিকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটিজি বাস্তবায়ন করবে? কয়েক বছর ধরে আমরা ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটিজি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে কড়া সমালোচনা শুনেছি। বাংলাদেশের নতুন কর্তৃত্ববাদী সরকারের সঙ্গে এই স্ট্র্যাটিজি নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?"
জবাবে আফরিন বলেন, "আমি মনে করি আমরা বিষয়টিকে (বাংলাদেশ ইস্যু) গুরুত্ব দিচ্ছি। বাংলাদেশে সুশীল সমাজের অধিকার নিশ্চিতে অবিশ্বাস্যভাবে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আবার ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির প্রথম স্তম্ভ হল একটি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল। একারণেই আমি এখানে সাউথ এশিয়া গভর্নেন্স ফান্ড নিয়ে কথা বলেছি। বাংলাদেশের যেসকল কৃষকদের সরকারি সেবা পেতে অনেক কষ্ট করতে হয় তাদের সেবা দিতে আমরা কাজ করছি। তবে সেটা ক্ষুদ্র প্রয়াসের একটি অংশ বলা যেতে পারে। আমরা শ্রমিক সংগঠক সঙ্গে কাজ করছি। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশে বিস্তৃত পরিসরে কাজ করে যাচ্ছি। বিস্তৃত পরিসরে এই কাজ করার লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে জনগণের অধিকার নিশ্চিত করা, তাদের অধিকার সংরক্ষণ করা এবং দীর্ঘ মেয়াদে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা।"
তিনি আরও বলেন, "এগুলো ছাড়াও অগ্রাধিকারভিত্তিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বিস্তৃত পরিসরে কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অর্থনৈতিক বিনিয়োগ, জলবায়ু পরিবর্তন, নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ক্ষেত্রে দুই দেশের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটিজির লক্ষ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ যে পরিকল্পনা নিয়েছে তাতে যুক্তরাষ্ট্র সন্তুষ্ট। আমাদের পরিকল্পনার অনেক কিছুই এতে প্রতিফলিত হয়েছে।"
ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন বলেন, "বাংলাদেশ অবশ্যই শান্তিরক্ষা মিশনে বৃহৎ অবদানকারী দেশগুলোর একটি। আমরা সেই প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে পেরে খুবই আনন্দিত।"
তিনি বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটিজি এবং বাংলাদেশের পরিকল্পনার মধ্যে ব্যাপক সম্পৃক্ততার বিষয় রয়েছে। গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার ইস্যু এগিয়ে নিতে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে - আপনার এ প্রশ্নের জবাবে বলতে চাই, আমরা সত্যিকার অর্থে নাগরিক সমাজের অধিকার নিশ্চিতের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছি।"
অপর এক প্রশ্নে এই প্রতিবেদক জানতে চান, "বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছা বাস্তবায়নে কাছে থাকার অঙ্গিকার করেছিলো। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্র কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করছে কীনা? আমরা কিছু সমালোচনা দেখেছি এবং আমি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের রিপোর্টের কথা উল্লেখ করতে পারি যেখানে তারা লিখেছে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিকাশের ক্ষেত্রে পিছু হটেছে। তাহলে এখন আপনার অবস্থান কি? গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার এবং মানবাধিকার সমুন্নত রাখার জন্য আমরা বাংলাদেশে অনেক লিভারেজ (প্রচেষ্টা) লক্ষ্য করেছি।"
জবাবে আফরিন বলেন, "আমি আবার আগের কথায় ফিরে যাচ্ছি। আমরা সত্যিকার অর্থে চাই বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোই দেশের গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করবে। এ লক্ষ্য সামনে নিয়ে আমরা মিডিয়া নিয়ে কাজ করছি এবং বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিতে ব্যাপক মাত্রায় কাজ চলমান রয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য অন্যান্য কাজের মধ্যে আমরা সুশীল সমাজ এবং শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে কাজ করছি। এই কাজগুলো দীর্ঘ মেয়াদে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়ক হবে।"
এমআর/