আসামের নাগরিকত্বের তালিকা থেকে ৪০ লাখ বাংলা ভাষাভাষী বাদ

আসামের নাগরিকত্বের তালিকা থেকে ৪০ লাখ বাংলা ভাষাভাষী বাদ

ঢাকা, ৩০ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : ভারতের বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন আসাম রাজ্যের নাগরিকদের যে খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে ৪০ লাখের বেশি বাংলা ভাষাভাষীকে বাদ দেয়া হয়েছে৷ ফলে সেখানে অবস্থানরত অনেকের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে৷

নাগরিকত্বের এই খসড়া সোমবার প্রকাশ করার পর আসামের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে৷ সেখানকার এক বাসিন্দা বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, খসড়া তালিকা থেকে বাদ পড়ায় বেশ কয়েক হাজার বাংলা ভাষাভাষী মুসলমান নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন৷ তারা আশঙ্কা করছেন, তাদের ‘ডিটেনশন সেন্টারে' পাঠিয়ে দেয়া হতে পারে বা বিতাড়িত করা হতে পারে৷

প্রসঙ্গত, চায়ের জন্য বিখ্যাত আসাম রাজ্যে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে অনেক দিন ধরেই সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা বিরাজ করছে৷ সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা অভিবাসীদের বিতাড়নের পক্ষে প্রচারনা চালাচ্ছে যাতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল বিজেপির শক্ত সমর্থন রয়েছে৷ এই রাজ্যে ১৯৮৩ সালে কয়েকজন মুসলমান অভিবাসীকে খুঁজে বের করে হত্যা করেছিল একদল উচ্ছৃঙ্খল জনতা।

বিজেপি সরকার অবশ্য জানিয়েছে, সোমবার প্রকাশিত তালিকাটি কাউকে বিতাড়নের উদ্দেশ্যে প্রকাশ করা হয়নি৷ বরং যারা তালিকার বাইরে রয়েছেন, তারা আবারো নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন৷ ভারতের আদমশুমারি কমিশনার শৈলেশ গৌহাটিতে সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘‘এই খসড়ার উপর ভিত্তি করে কাউকে ‘ডিটেনশন সেন্টার' বা ‘ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে' নেয়ার প্রশ্নই আসে না৷”

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অনেক মানুষ ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন৷ সেসময় থেকে তাদের অধিকাংশই আসাম রাজ্যে, যেটির সঙ্গে বাংলাদেশের প্রায় ২৭০ কিলোমিটার লম্বা সীমান্ত রয়েছে, বসবাস শুরু করেন বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে৷

সেইলেশ জানিয়েছেন, আসাম রাজ্য থেকে তিন কোটির বেশি মানুষ ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন৷ তাদের মধ্যে ৪০ লাখ ৭ হাজার ৭০৭ জনের আবেদন বাতিল করা হয়েছে৷ ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে আসামের বাসিন্দাদের এটা প্রমাণ করা বাধ্যতামূলক ছিল যে, তারা কিংবা তাদের পরিবার ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকেই রাজ্যটিতে বসবাস করছেন৷ যারা এটা প্রমাণে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের নাগরিকত্বের আবেদন গ্রহণ করা হয়নি৷

নিন্দুকরা অবশ্য বলছেন, সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর নতুন করে চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যে মোদীর বিজেপি সরকারের সমর্থনে এই আদমশুমারির আয়োজন করা হয়েছিল৷ এই প্রথম ভারতের কোন রাজ্যে এভাবে আদমশুমারি করা হয়েছে৷ তবে বিজেপি কোনো গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, বিশেষ কোনো গোষ্ঠীকে তুষ্ট রাখার নীতি দলটি অনুসরণ করে না৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/১৯১৭ঘ.)