বাংলাদেশ সরকারের প্রতি যুক্তরাষ্ট্র

জনগণের অধিকারকে সম্মান জানাতে হবে : এলিস ওয়েলস

জনগণের অধিকারকে সম্মান জানাতে হবে : এলিস ওয়েলস

ঢাকা, ২২ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : বাংলাদেশে আসন্ন নির্বাচন শান্তিপূর্ণ, অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। ঢাকায় সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক মুখ্য উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস ফের যুক্তরাষ্ট্রের এই মনোভাবের কথা ব্যক্ত করেন।

সোমবার সন্ধা ৬টায় রাজধানীর হোটেল র‌্যাডিসনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন, রোহিঙ্গা সংকট ও দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরেন।

এলিস ওয়েলস জানান, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়, যেখানে এ দেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রকৃত প্রতিফলন ঘটবে।

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, নির্বাচন কমিশনকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া উচিত। যাতে পক্ষপাতহীন নির্বাচন করা সম্ভব হয়।

বাংলাদেশে সম্প্রতি পাস হওয়া নিবর্তনমূলক ডিজিটাল আইন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ওয়েলস বলেন, মুক্ত, মত ও বাকস্বাধীনতা নাগরিকের অধিকার। এ অধিকারকে সম্মান জানাতে হবে এ অধিকারে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।

আইনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে উল্লেখ করে উপ-সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানুষের অধিকারকে বিসর্জন দিয়ে আইন হতে পারে না।

এলিস ওয়েলস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভারত- প্রশান্ত মহাসাগরীও কৌশলের সমর্থনে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশকে ৪ কোটি ডলার দেয়ার ঘোষণা করা হয়েছে। বৈদেশিক সামরিক সহায়তা হিসেবে দেওয়া এই অর্থে বাংলাদেশের উপকূলীয় রাডার ব্যাবস্থার মানোন্নয়ন, টহল নৌযান বহরের আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ এবং সম্প্রসারিত সামুদ্রিক কার্যক্রম পরিচালনায় প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এর সবগুলোই বঙ্গোপসাগরে উদ্যোগের অংশ।

এলিস ওয়েলস চার দিনের সফরে গত শনিবার ঢাকায় আসেন। প্রথম দিন সন্ধ্যায় তিনি বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিকের সঙ্গে। সফরসূচি অনুযায়ী রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে তিনি রবিবার কক্সবাজার যান। সেখান থেকে ফিরে আজ সোমবার সংবাদ সম্মেলন আসেন তিনি।

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশের অব্যাহত উদারতার প্রশংসা করে এলিস ওয়েলস বলেন, আমি রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের যাত্রা ও বিশালতা গভীরভাবে অনুভব করেছি। এই মানবিক সংকট মোকাবিলায় অব্যাহতভাবে সহৃদয়তা দেখানো এবং ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের কাছে সহায়তা পৌঁছে দেয়ার জন্য বাংলাদেশের জনগণ ও সরকারকে ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, একেবারে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নতুন শরণার্থীদের গ্রহণ, খাবার বিতরণ এবং রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যাওয়াসহ অনেক দায়িত্ব পালন করা জাতিসংঘ ও অন্যান্য বেসরকারি সংগঠনগুলোর কাজেও আমি মুগ্ধ।

তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিজেদের শক্তি ও অদম্য চেতনা দেখেও আমি বিস্মিত। তারা নিজেরা নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছে । কিন্তু এই বেহাল অবস্থায়ও তারা নিজেদের পরিচয় ও ঐক্য ধরে রাখতে সচেষ্ট রয়েছে। এই সমস্যা মোকাকেলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে অঙ্গীকারবদ্ধ।

তিনি জানান, আমরা ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত মানবিক সহায়তা হিসেবে বাংলাদেশকে ৩৪ কোটি ৫০ লাখ ডলারের বেশি অর্থ দিয়েছি। রোহিঙ্গারা যাতে স্বেচ্ছায় নিজ দেশের বাসভূমিতে নিরাপদে ও মর্যাদার সাথে ফিরে যেতে পারে, সেরকম অনুকুল পরিবেশ তৈরি করার জন্য আমরা বার্মা সরকারকে আহ্বান অব্যহত রেখেছি। এ লক্ষ্যে আনান কমিশনের সুপারিশ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের জন্য দেশটির সরকারকে আমরা তাগিদ দিয়ে আসছি। বিশেষ করে রোগিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়া ও স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার সংক্রান্ত সুপারিশগুলো।

এলিস ওয়েলস বলেন, বার্মার নিরাপত্তা বাহিনীর যে সদস্যরা সহিংসতার জন্য দায়ী তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনারও তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলন উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট।

 

(জাস্ট নিউজ/এমআই/একে/১৮০০ঘ.)