সংলাপকে পুরো জাতি সন্দেহের চোখে দেখছে: ড. মোশাররফ

সংলাপকে পুরো জাতি সন্দেহের চোখে দেখছে: ড. মোশাররফ

ঢাকা, ৩১ অক্টোবর (জাস্ট নিউজ) : সংলাপের আহ্বান পুরো জাতি সন্দেহের চোখে দেখছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেছেন, ‘অনেকে বলছেন প্রধানমন্ত্রীকে বিশ্বাস করবেন না। বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের ব্যাপার না। যদি আমরা সংলাপে না যাই তাহলে দোষটা আমাদের ওপর পড়বে।’

আজ বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশ : শিক্ষক সমাজের ভাবনা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সারা দেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ-স্কুল-মাদ্রাসার কর্মরত জাতীয়তাবাদী মতাদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষকদের নিয়ে ‘বাংলাদেশ শিক্ষক সমন্বয় কমিটি’ নামের একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়। গঠন করা হয় ১১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্রীয় সেল।

এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামকে আহ্বায়ক এবং বাংলাদেশ শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্য জোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়াকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। বাকি সদস্যরা হলেন— অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান খান, অধ্যাপক রইস উদ্দিন, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক রজ্জব আলী, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন, অধ্যাপক কাজী মাঈন উদ্দিন ও মো: জাকির হোসেন।

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘নিয়মতান্ত্রিভাবে যত পথ আছে আমরা সব চেষ্টা করছি। ভোট ছাড়া গায়ের জোড়ে সরকার ক্ষমতায় টিকে আছে এটা বুঝেও শেষ চেষ্টা করার জন্যই আমরা সংলাপে যাচ্ছি। আলোচনা হবে সাত দফার ভিত্তিতে। এই সাত দফার মধ্যে প্রথম দফাই হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি।’

গঠনতন্ত্রের সাত ধারা বাদ দিয়ে বিএনপির সংশোধনী গ্রহণ না করতে আজ বুধবার নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘যে রায় হয়েছে তা আরো ভয়ঙ্কর। বিএনপির নেতৃত্বে জিয়া পরিবারের কেউ যেন না থাকতে পারে সেই ইঙ্গিতপূর্ণ একটি রায় আদালত দিয়েছে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আজ বলতে পারব না। কারণ রায়ের বিস্তারিত এখনও পড়ে দেখিনি।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘খালেদা জিয়া, তারেক রহমান, বিএনপি ও জিয়া পরিবারকে আগামী নির্বাচন থেকে বাইরে রাখার ষড়যন্ত্র করছে সরকার। কারণ তারা জিয়া পরিবারকে ভয় পায়। এই ষড়যন্ত্র জনগণ সফল হতে দেবে না।’

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সারা দেশের মানুষ আজ একমত স্বৈরাচারের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। এটা করতে হলে নির্বাচনের মাধ্যমে পরিবর্তন সম্ভব। এজন্য এখন প্রয়োজন একটি আন্দোলন। স্বৈরাচারী সরকারের কাছে টেবিলে বসে আলাপ আলোচনা করে কিছু আদায় করা যাবে না। বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হলে আন্দোলনের বিকল্প নেই। আগামী দিনে আন্দোলন আসছে।’ এই আন্দোলনে শিক্ষকদের পাশাপাশি দেশের সব শ্রেণি পেশার মানুষকে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য আহ্বানও জানান তিনি।

মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, ‘সংলাপে সাত দফাই হবে আমাদের আলোচ্য বিষয়। যা আমাদের পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেন চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন। সাত দফা মানতে হবে। আমরা একটু আশ্চর্যই হয়েছি প্রধানমন্ত্রী দাওয়াত দিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে সংলাপ করবেন। প্রধানমন্ত্রী তার চিঠিতে লিখেছেন, “অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আলোচনা করবেন।” বাংলাদেশে তো কোনো গণতন্ত্র নেই। তাহলে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত বলার অর্থ কী। গণতন্ত্র তো আওয়ামী লীগের বাক্সে বন্দি। আসলে বাক্সে বন্দি গণতন্ত্রও হয়তো কোনো হুমকির সম্মুখীন। সেই জন্যই তা রক্ষা করার ভাষা লিখেছেন।’

ড. মোশাররফ বলেন, ‘সংলাপের নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন জাতিকে সারপ্রাইজ দিবেন। আর রাজনীতিতে সুবাতাশ বইতে শুরু করবে। আমি বলি তাহলে এতদিন যে সুবাতাস ছিল না তা তারা উপলব্ধি করেছেন। সরকার যদি সুবাতাসকে বন্ধ করে দেয়, গণতান্ত্রিক সব রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়, তারপরে কি হবে তার দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে। যখন সরকার পরিবর্তনের জন্য সব গণতান্ত্রিক পথ বন্ধ হয়ে যায় তখন গণঅভ্যুত্থান হয়। অতীতে আমাদের দেশের এর উদাহরণ আছে।’

অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় আরো বক্তব্য দেন— অধ্যাপক ড. মো. মোর্শেদ হাসান খান, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, অধ্যাপক নুরুল আমীন বেপারী, অধ্যাপক লুৎফর রহমান প্রমুখ।

(জাস্ট নিউজ/একে/২১৪৭ঘ.)