ধরা পড়েনি সেই অস্ত্রধারী

ধরা পড়েনি সেই অস্ত্রধারী

ঢাকা, ১৮ জানুয়ারি (জাস্ট নিউজ) : মঙ্গলবারের সংঘর্ষে প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে হামলা করতে যাওয়া নিয়াজুল ইসলাম ধরা পড়েননি গতকাল পর্যন্ত। নারায়ণগঞ্জ শহরের চাঁদমারী এলাকার বাসিন্দা নিয়াজুল ইসলাম খান যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তবে তিনি এলাকায় নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি এ কে এম শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

গত বছর নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে ব্যবসায়ী চান মিয়ার কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে না পেয়ে ওই ব্যবসায়ীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছিলেন নিয়াজুল। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী চাঁন মিয়া নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় জিডি করেন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি এলজিইডির ঠিকাদারি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। নিয়াজুল ফতুল্লা পুলিশের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সুইটের ছোট ভাই। সুইট র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যায়। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসীর তথ্যমতে, ১৯৮৬ সালে এরশাদের সময় নাসিম ওসমান এমপি হলে নিয়াজুলের উত্থান হয়। ১৯৮৮ সালে সংঘটিত জোড়া খুনের (কামাল ও কালাম) মামলার আসামি ছিলেন তিনি। ১৯৯৬ সালে শামীম ওসমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে নিয়াজুল অস্ত্রের লাইসেন্স পান। নিজেকে যুবলীগের নেতা পরিচয় দিয়ে চলতেন। নগরের চাঁদমারীতে বস্তি নিয়ন্ত্রণ করতেন নিয়াজুল ইসলাম। এছাড়া পোশাক কারখানার ঝুট ব্যবসা, ভূমিদস্যুতাসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে আছে নিয়াজুলের নাম।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শামীম ওসমানের উত্থানের সময়কার চার প্রধান ক্যাডার ছিলেন মাহতাব উদ্দিন লাল, গোলাম সারোয়ার, নুরুল আমিন মাকসুদ ও নিয়াজুল। এরমধ্য প্রথম দুজন অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। আর মাকসুদের লাশ পাওয়া গেছে ঢাকায়। জীবিত আছেন কেবল এই নিয়াজুল।

এদিকে মঙ্গলবারের ঘটনা নিয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জে বঙ্গবন্ধু রোডে হকার উচ্ছেদকে কেন্দ্র করে দু’টি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছিল। সেই সংঘর্ষে আমাদের পুলিশেরও অবস্থান ছিল। আমরা মধ্যবর্তী একটা অবস্থান নিয়েছিলাম যাতে উভয়পক্ষের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ না বাধে। প্রাথমিক প্রস্তুতি আমাদের সেটাই ছিল। পরবর্তীতে মেয়র সাব যখন তার অফিস থেকে চাষাড়ার দিকে আসছিলেন। তখন হঠাৎ করেই দু’পক্ষ থেকেই, প্রাথমিকভাবে আমরা যেটুকু দেখেছি ভিডিও ফুটেজে এবং আমাদের পুলিশের যারা সদস্য ছিলেন, উভয় পক্ষের কিছু সমর্থকের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ফলে পরিস্থিতিটা তাৎক্ষণিকভাবে উত্তপ্ত হয় এবং উভয়পক্ষের মধ্যে মারামারি লেগে যায়।

আমরা খুব নিকটবর্তী সময়ে সেখানে গিয়েছি এবং উভয়পক্ষকে নিভৃত করেছি। পাশাপাশি এই ঘটনার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট ছিল তারা যাতে আর কোনো ঘটনা সংঘটিত করতে না পারে, আমরা তাদেরকে সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে সরিয়ে দিয়েছি। উক্ত ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করেনি, তবে আমরা আমাদের থানাতে বিস্তারিত ঘটনা উল্লেখ করে একটা সাধারন ডায়েরি করেছি।


তদন্ত কমিটি গঠন: পুলিশ কর্মকর্তা জানান, বুধবার জেলা কোর কমিটির একটা বৈঠক ছিল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে। সেখানে তিন সদস্যের একটা কমিটি গঠিত হয়েছে এবং আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। সেই রিপোর্টে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব), অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) নারায়ণগঞ্জ এবং র‌্যাবের একজন সিনিয়র এএসপি সদস্য হিসেবে আছেন। তো এখন পর্যন্ত কোনো মামলা রুজু হয় নাই। বা আমাদের কাছে কেউ কোনো অভিযোগ দাখিল করে নাই। আমরা টোটাল এখানে অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে, এবং একজন অস্ত্রধারীকে সেখানে মিডিয়াতে দেখা গেছে, আমাদের নিজস্ব ইনফরমেশনে আমরা জানতে পেরেছি, তো এই বিষয়টা আমরা আমাদের থানাতে জিডিতে নোটভুক্ত করেছি এবং এই অস্ত্রের উৎস কি এবং ওই ব্যক্তি অস্ত্রসহ সেখানে কেন গেলেন, তার উদ্দেশ্য কি ছিল, এই সংক্রান্ত বিষয়ে আমরা তথ্য সংগ্রহ করে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

(জাস্ট নিউজ/জেআর/২৫০ঘ.)