প্রধান বিচারপতিকে সন্ত্রাসী কায়দায় তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে: রিজভী আহমেদ

প্রধান বিচারপতিকে সন্ত্রাসী কায়দায় তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে: রিজভী আহমেদ

ঢাকা, ২২ সেপ্টেম্বর (জাস্ট নিউজ) : কারান্তরীণ দলের চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। তিনি বলেন, গতকাল কারাগারে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে তার আত্মীয়স্বজনেরা দেখা করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া এখনো গুরুতর অসুস্থ। তার হাত, পা এর ব্যথা আরো তীব্র হয়েছে। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতাকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দিতেই দেশনেত্রীকে ইচ্ছাকৃতভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না। অসুস্থতা লাঘবের জন্য বেগম জিয়ার আস্থার হাসপাতাল ও চিকিৎসকদেরকে উপেক্ষা করা হচ্ছে।

শনিবার সকালে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ এসব কথা জানান। সংবাদ সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় নেতা মো: তাইফুল ইসলাম টিপু, মো: মুনির হোসেন ও অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বেগম জিয়ার চিকিৎসা প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, প্রস্থেসিস কমপেটিবল এমআরআই মেশিন ইউনাইটেড হাসপাতাল অথবা অন্য বিশেষায়িত হাসপাতালে রয়েছে। কিন্তু এটি বিএসএমএমইউতে নেই। এমনকি বিএসএমএমইউতে ভর্তিকৃত অনেক রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষাও বাইরের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল থেকে করা হয় এবং দুপুর দুইটার পর বিএসএমএমইউতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পাওয়া দুস্কর ও পরীক্ষা-নিরীক্ষাও বন্ধ থাকে। সুতরাং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার যথাযথ চিকিৎসার জন্য বিশেষায়িত হাসপাতালের দাবি কি অনায্য? এমনকি সরকারি মেডিকেল বোর্ডও বিএসএমএমইউসহ যেকোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তির সুপারিশ করেছে। বিএসএসএমএমইউ যদি এতই বিশেষায়িত ও ইকুইপড্ হতো তাহলে রাষ্ট্রপতি বারবার চিকিৎসা নিতে বিদেশ যাচ্ছেন কেনো? কদিন আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও বিদেশ থেকে চিকিৎসা করে আসলেন কেনো? তারা কেনো বিএসএমএমইউতে চিকিৎসা নিলেন না?

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার ওপর জুলুম ও অত্যাচারে সরকার রীতিমতো উৎফুল্লবোধ করছে। সরকার প্রধানের একধরনের অহংবোধ চরিতার্থ করতে বেগম জিয়ার চিকিৎসায় বাধা দেয়া হচ্ছে। মানুষ হিসেবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। সরকারের টালবাহানায় অসুস্থ বেগম জিয়া চিকিৎসা না পাওয়ায় দেশবাসী ও দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে এক বিষাদময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আপাত সংকীর্ণতার মধ্যেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি আবর্তিত হয়। এদের মধ্যে মানবতা, সভ্যতা, উদারতা ও সহমর্মিতার প্রচণ্ড ঘাটতি। বিরোধী নেতা ও সংগঠনকে সবদিক থেকে পর্যুদস্ত করতে এদের সাথে আর কারো তুলনা করা যায় না। আওয়ামী লীগের মানবসত্তায় অন্তর্নিহিত রয়েছে বিপজ্জনক অনাচার।

রিজভী আহমেদ বলেন, ওবায়দুল কাদেরকে বলতে চাই- ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি তো দেশে বসেই সৎ সাহসের সঙ্গে কাজ করছিলেন’। কিন্তু প্রধান বিচারপতির কাছে তো বন্দুক নেই। রাষ্ট্রের বন্দুকধারীরা যদি তার দিকে বন্দুক তাক করে দেশের বাহিরে যেতে বাধ্য করে তখন তিনি কি করবেন? তখন তিনি বিদেশে গিয়ে লিখবেন নাকি গণভবনে সবুজ লনে বসে লিখবেন? আওয়ামী লীগ সরকারের লোকেরা একজন নিরস্ত্র প্রধান বিচারপতিকে সন্ত্রাসীদের কায়দায় বন্দুকের নলের মুখে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেয়। এটা কোনো বীরের কাজ নয়, এটি কাপুরুষের কাজ। সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে বিচার বিভাগ একটি স্বাধীন সংস্থা। অথচ বাংলাদেশে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, আইনমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রী-উপদেষ্টারা কথা বলার নামে এমন আচরণ করেছেন যেন তারা প্রধান বিচারপতিকে রিমান্ডে নিয়েছেন।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব তাকে বঙ্গভবনে ডেকে নিয়ে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সামনে যেভাবে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য মন্ত্রীরা ধমকাধমকি করেছেন তা সন্ত্রাসী আক্রমণেরই সমতুল্য। প্রধান বিচারপতি তার বইয়ে লিখেছেন যে, ক্ষমতাসীন সরকারই তাকে পদত্যাগে এবং নির্বাসনে যেতে বাধ্য করেছে। নির্যাতিত এস কে সিনহা কি আওয়ামী লীগের মৌসুম দেখে বই প্রকাশ করবেন? ওবায়দুল কাদের বলেছেন- ‘প্রধান বিচারপতি সাবেক হয়ে গেছেন, সাবেক হওয়ার অন্তর্জালা আছে।’ আপনারা তো বন্দুকের নল ঠেকিয়ে এস কে সিনহা সাহেবকে সন্ত্রাসী কায়দায় সাবেক হওয়ার আগেই সাবেক করেছেন। তাই সত্য কথা লিখাতে অন্তরজ্বালা হচ্ছে আপনাদের।

বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, যদি ভোটারবিহীন ক্ষমতাসীন সরকার দেশের প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগে ও নির্বাসনে যেতে বাধ্য করে তাহলে প্রশাসন, আইন আদালতকে বাধ্য করে বিচারকের কাছ থেকে মামলা ফেরত এনে সম্পূরক চার্জশীটে তারেক রহমানের নাম জড়ানো তো কঠিন কাজ নয়। গণবিরোধী অবৈধ সরকার যেকোনো কাজই করতে পারে। আজ জনগণের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, ২১ আগস্টের বোমা হামলার আইনী প্রক্রিয়া নিয়ে। ১/১১’র সরকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নাম তদন্ত করে পেলনা। তদন্তকারি কর্মকর্তারা কোথাও সন্দেহবশতও তারেক রহমানসহ সরকারের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাদের নাম উল্লেখ করেনি। অথচ আওয়ামী লীগ ২০০৯ এ ক্ষমতায় এসে নজীরবিহীনভাবে পছন্দের তদন্তকারী কর্মকর্তা কাহার আকন্দকে অবসর থেকে ডেকে এনে ২১শে আগস্ট বোমা হামলা মামলার পুনঃতদন্তের ভার দেয়। সে বিচারকদের কাছ থেকে মামলাটি ফেরত এনে পুনঃতদন্তের নামে তারেক রহমানকে মামলায় জড়িয়ে ষড়যন্ত্রের যাত্রা শুরু করে।

রিজভী আহমেদ বলেন, আদালত দিয়ে প্রতিশোধ গ্রহণের রমরমা রাজনৈতিক সফলতায় ক্ষমতাসীনরা উল্লসিত। এই অবৈধ সরকার আইন, বিচার সবকিছু কুক্ষিগত করে দেশকে ‘মগের মুল্লুক’ এ পরিণত করেছে। সরকারের ‘গাইডলাইন’ অনুযায়ী ২১শে আগস্ট বোমা হামলা মামলার বিচারিক কার্যক্রম চলছে কি না, তা নিয়ে জনগণের মনে বড় ধরণের সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, সরকারের সব ধরণের বক্তব্য, বিবৃতি ও প্রচারকেই জনগণ বাকোয়াস বলে মনে করে। তাদের উন্নয়নের ফানুস ফেটে গেছে। গণতন্ত্রকে বন্দী করে, বিরোধী দলের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত দমনের পথ বেছে নিয়ে, মামলা-হামলা-গ্রেফতার করে সরকার বিরোধী দলের নেতাদের ঘুম কেড়ে নিতে চাচ্ছে। তবে আমি আবারো প্রত্যয়দৃঢ় কন্ঠে বলতে চাই-সরকারের এই সমস্ত অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের সম্মিলিত কন্ঠস্বরে সরকার ও সরকারপ্রধান কতটুকু শান্তিতে ঘুমাতে পারবেন তা দেখার জন্য জনগণ অপেক্ষা করছে।

রিজভী আহমেদ আরো বলেন, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলা যুবদল নেতা শাহিন আহমেদকে পুলিশ গতকাল গ্রেফতার করে। নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রদল সভাপতি মশিউর রনিকে নতুন করে আরো একটি বানোয়াট মামলায় ৩ দিনের রিমান্ড দেয়। আমি দলের পক্ষ থেকে তাদের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও নি:শর্ত মুক্তি দাবি করছি। রনির রিমান্ড বাতিল ও বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের জোর দাবি জানাচ্ছি।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১৩৩৩ঘ.)