অতি অল্প সময়ে শক্তিশালী বিরোধী দল দেখতে পাবেন: হাসিনাকে বিএনপি

অতি অল্প সময়ে শক্তিশালী বিরোধী দল দেখতে পাবেন: হাসিনাকে বিএনপি

অতি অল্প সময়ের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শক্তিশালী বিরোধী দল দেখতে পাবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, ‘উনি যেটা চাচ্ছেন দেখতে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে সেটা উনি দেখতে পাবেন।’ আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল নেই বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এর উত্তর দেওয়ার মতো রুচি আমাদের থাকে না। এগুলো মূল বিষয়গুলোকে এড়িয়ে এসব কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা ছাড়া আর কিছুই নয়। শক্তিশালী বিরোধী দল আছে বলেই তো এখন পর্যন্ত কথাগুলো আমরা বলছি।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘পার্লামেন্টে বিরোধী দল নেই তাদের (সরকার) কারণে। তারা দেশে গণতন্ত্রের কোনো স্পেস রাখেনি। গণতান্ত্রিক স্পেস না থাকলে একটা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রের মধ্যে উনি কোন ধরনের শক্তিশালী বিরোধী দল দেখতে চাচ্ছেন আমরা ঠিক সেটা বুঝি না। উনি যেটা চাচ্ছেন দেখতে, অতি অল্প সময়ের মধ্যে সেটা উনি দেখতে পাবেন।’ গতকাল শুক্রবার বিকেলে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভার সিদ্ধান্ত জানাতে এ সংবাদ সম্মেলন আহ্বান করা হয়।

স্থায়ী কমিটির সভায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের করা লিভ টু আপিল আবেদন খারিজ করা, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার রিপোর্টে সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারনাল, বাংলাদেশের গবেষণা প্রতিবেদনে স্বাস্থ্য খাতে ২৩ হাজার কোটি টাকার অনিয়ম এবং যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলা খারিজ হওয়ার বিষয়ে আলোচনার পর প্রতিক্রিয়া জানানো হয়।

জোবায়দার মামলা: ফরমায়েশি আদেশ

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী চিকিৎসক জোবায়দা রহমানের করা লিভ টু আপিল আবেদন খারিজের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে স্থায়ী কমিটি। সভা মনে করে, জোবায়দা রহমান একজন অরাজনৈতিক চিকিৎসক। তাঁকে দুদকের এ মামলায় জড়ানো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং প্রতিহিংসামূলক। কোনো ভিত্তি না থাকলেও শুধু জিয়া পরিবারকে হয়রানি ও হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য এ মামলা দায়ের করা হয়েছে । সভায় এ ধরনের হীন অপচেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়ে বিচার বিভাগকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সংবিধানের মূল চরিত্রকে অক্ষুণ্ন রেখে বিচারিক কর্ম সম্পাদনের আহ্বান জানানো হয়।

মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদন: প্রকৃত সত্য উদ্‌ঘাটিত

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার প্রতিবেদনে বিচার বিভাগ, নির্বাচন ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ‘প্রকৃত সত্যকে উদ্‌ঘাটিত করেছে’ বলে মনে করে স্থায়ী কমিটি। ১৩ এপ্রিল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে ‘২০২১ সালের কান্ট্রি রিপোর্টস অন হিউম্যান রাইটস প্র্যাকটিসেস’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

স্থায়ী কমিটির সভা মনে করে, ফ্যাসিবাদী এ সরকারের মারাত্মক মানবাধিকার লঙ্ঘন, সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গুম, খুন ও নির্যাতনের যেসব অভিযোগ উঠেছে, তা এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। র‍্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ও সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা সেই সত্যকে আরও প্রতিষ্ঠিত করেছে। বিশেষ করে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া ও কারাগারে পাঠানোকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত বলে উল্লেখ করা, প্রকৃত সত্যকে উদ্‌ঘাটিত করেছে। এতে প্রমাণিত হয়েছে, এ অনির্বাচিত ও অনৈতিক আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় অন্যায়ভাবে টিকে থাকতে চায়।

স্থায়ী কমিটি বলেছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি, সন্ত্রাস এবং আগের রাতে সিল মারা, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন করে ভোটকেন্দ্রে আসতে না দিয়ে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে নির্বাচনব্যবস্থাকে জালিয়াতিপূর্ণ বলে অভিহিত করায় প্রমাণিত হয়েছে, অনির্বাচিত–অবৈধ সরকার অধীন কখনো অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সম্ভব নয়।

রিজার্ভ চুরির মামলা খারিজে উদ্বেগ

মার্কিন আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলা খারিজ হওয়ায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি। সভা মনে করে, চুরির বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার উদ্দেশ্যেই একেবারে দায়সারা মামলা দায়ের করা হয় এবং সরকারের দায়িত্বহীনতার কারণেই মার্কিন আদালতের এখতিয়ারবহির্ভূত এ মামলা দায়ের করা হয়।

স্থায়ী কমিটি মনে করে, রিজার্ভ চুরির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে যেসব কর্মকর্তার নাম এসেছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করা থেকেই প্রমাণিত হয়, সরকারের কোনো মহল এ অপরাধের সঙ্গে জড়িত। সভা অবিলম্বে সঠিক তথ্য জনগণের সামনে উন্মোচন করে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়।

এ ছাড়া সভায় সম্প্রতি ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণায় কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রতিবেশী দেশগুলোর চেয়ে বেশি দামে টিকা কেনা এবং অর্থ ব্যয়ে চরম অস্বচ্ছতার কারণে ২৩ হাজার কোটি টাকার অনিয়মের তথ্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সভায় আগামী ১ মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস ও ৩ মে ‘ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম’ দিবস পালন করার সিদ্ধান্ত হয়।