রেকর্ড পেঁয়াজ চাষেও রাজশাহীর কৃষকের মাথায় হাত

রেকর্ড পেঁয়াজ চাষেও রাজশাহীর কৃষকের মাথায় হাত

দেশে গত কয়েক বছর ধরে পেঁয়াজের দাম আকাশছোঁয়া। এ কারণে পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো রাজশাহীতেও কৃষি বিভাগ কৃষকদের পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করে।

ফলে লাভের আশায় চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেন রাজশাহীর কৃষকরা। কিন্তু বাজারে বর্তমানে মণপ্রতি পেঁয়াজের যে দাম, তার চেয়ে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বেশি হয়েছে।

উৎপাদন ভালো হলেও পেঁয়াজ চাষ করে বিপুলসংখ্যক কৃষকের এখন মাথায় হাত। তবে সংশ্লিষ্ট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর রাজশাহীর কর্মকর্তারা বলছেন, কৃষক পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারলে লোকসান হবে না। এ কারণে জমি থেকে পেঁয়াজ উত্তোলনের পরেই বিক্রি না করার পরামর্শ দেন তারা।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২০-২১ মৌসুমে ১৭ হাজার ৯৯৩ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে এবার ১৮ হাজার ২৮৬ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। এর আগে ২০১৯-২০ মৌসুমে জেলায় ১৬ হাজার ৭৯১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়।

সে বছর পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছিল ২ লাখ ৮২ হাজার ৭৯৯ টন। আর এ বছর ৩ লাখ ৩০ হাজার টনের বেশি পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। জেলায় পেঁয়াজের চাহিদা ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টন। এবার প্রায় ২ লাখ ৬৫ হাজার টন পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থাকবে বলেও আশা করছে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

এদিকে কৃষকরা জানান, উৎপাদন ভালো হলেও তারা খুশি না। আগের বছরের চেয়ে এবার তাদের বাড়তি দামে পেঁয়াজ বীজ কিনতে হয়েছে। ২০১৯ সালে প্রতি কেজি বীজ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

কিন্তু ২০২০ সালে সেই বীজ চার থেকে পাঁচ হাজার টাকা কেজি দরে কিনতে হয়েছে। আর যেসব কৃষক বীজ থেকে হওয়া চারা কিনেছেন, তার দামও ছিল চার হাজার টাকা মণ। এছাড়া সেচ, শ্রমিক, সার এবং কীটনাশকসহ আনুষঙ্গিক ব্যয়ও রয়েছে। ফলে উৎপাদন ব্যয় অন্য মৌসুমের চেয়ে চলতি মৌসুমে অনেক বেশি হয়েছে।

জেলার গোদাগাড়ী উপজেলার সাহাব্দিপুরের কৃষক নিয়ামত আলী। তিনি এবার এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছেন। তিনি বলেন, আমার জমিতে ১০ মণ পেঁয়াজের চারা লেগেছে। কিনেছি ৪০ হাজার টাকায়। আর জমি লিজের জন্য ২০ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। শ্রমিক, কীটনাশক, সেচ, সার এবং আনুষঙ্গিক ব্যয়সহ আরও ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। বাজারে এখন নতুন পেঁয়াজ ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মণ। আর জমি থেকে পেঁয়াজ উঠেছে ৪৮ মণ। এ পরিমাণ পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি ৯০০ টাকা করে ধরলে ৪৩ হাজার ২০০ টাকা। আর মোট উৎপাদন ব্যয় হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। ফলে একবিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে লোকসান হয়েছে ২১ হাজার ৮০০ টাকা।

চারঘাটের চকগুচর নওদাপাড়া গ্রামের কৃষক আনসার আলী বলেন, আমার নিজের দেড় বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছি। জমির লিজের টাকা না দিতে হলেও সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৭২ হাজার টাকা। কিন্তু পেঁয়াজ পেয়েছি ৬৮ মণ। ফলে উৎপাদন ব্যয় ওঠেনি। পেঁয়াজের দাম নেই। আমার মতো অন্য কৃষকরাও চলতি মৌসুমে পেঁয়াজ চাষ করে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।

অপরদিকে রাজশাহী মহানগরীর কাঁচাবাজারগুলোতে দেখা গেছে, ক্রেতারা খুচরা বাজারে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনছেন।

অথচ কৃষক স্থানীয় হাটে ফড়িয়াদের কাছে এসব পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৩ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। হাটের ফড়িয়ারা মহানগরীর আড়তদারদের কাছে ২৬ থেকে ২৭ টাকা ৫০ পয়সা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করেছেন। ফলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

রাজশাহী মহানগর পাইকারি কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির ফাইজুল ইসলাম বলেন, আপাতত পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই। কেবল তো পেঁয়াজ উঠছে। এখনই খুব বেশি দাম বাড়বে না।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কেজেএম আবদুল আউয়াল বলেন, চলতি মৌসুমে আমরা কৃষকদের পেঁয়াজ চাষে উদ্বুদ্ধ করেছি। বিঘাপ্রতি গড় উৎপাদনও ৫০ মণের বেশি হয়েছে। উৎপাদন ভালো হলেও চাষের খরচ কিছুটা বেশি হয়েছে। ইতোমধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ জমি থেকে পেঁয়াজ উত্তোলন হয়েছে।

আর এক সপ্তাহের মধ্যে সব পেঁয়াজ জমি থেকে উঠে যাবে। এখন পেঁয়াজের দাম কিছুটা কম। তবে কৃষক যদি পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে কিছুদিন পর বিক্রি করেন, তা হলে লোকসানের আশঙ্কা থাকবে না।

এমজে/