সেচের অভাবে ৩ ফসলি হচ্ছে না উত্তরের ১২ লাখ হেক্টর জমি

সেচের অভাবে ৩ ফসলি হচ্ছে না উত্তরের ১২ লাখ হেক্টর জমি

উজানে (ভারত) অভিন্ন নদ-নদীর পানি একতরফা প্রত্যাহারের ফলে ভাটির (বাংলাদেশ) ভূ-উপরিস্থ পানির প্রাকৃতিক উৎসগুলো শুকিয়ে গেছে। এতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন সেচনির্ভর জমির মালিকেরা। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাওয়ায় সেচের পানির অভাবে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় প্রায় ১২ লাখ হেক্টর জমি এক ফসলি থেকে তিন ফসলিতে রূপান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না বলে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানো গেছে।

বাংলাদেশে পানির প্রয়োজন অনেক বেশি। মানুষের গৃহস্থালি ও চাষাবাদের জন্য যতটুকু পানির প্রয়োজন, তার চেয়ে অনেক বেশি পানির প্রয়োজন হয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নদীর পানির প্রয়োজনীয় খাতগুলো হচ্ছে সমুদ্রের লোনাপানি ঠেকানো, ভূ-গর্ভস্থ জলাধার পুনর্ভরণ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ, পরিবেশ ও চাষাবাদের জমিতে পুষ্টি সরবরাহ, নৌপথের নাব্যতা সংরক্ষণ এবং গৃহস্থালি ও কলকারখানার পানির জোগান দেয়া ইত্যাদি।

রাজশাহী ও রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সেচের পানির অভাবে উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলায় প্রায় ১২ লাখ হেক্টর এক ফসলি জমি তিন ফসলিতে রূপান্তর করা সম্ভব হচ্ছে না। এর মধ্যে রাজশাহী বিভাগের পাবনা জেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ এক লাখ ৯০ হাজার হেক্টর, সেচের আওতায় এসেছে ৫৬ হাজার হেক্টর, সিরাজগঞ্জে আবাদযোগ্য জমি এক লাখ ৯১ হাজার হেক্টর, সেচের আওতায় এসেছে এক লাখ হেক্টর। রাজশাহী জেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ এক লাখ ৭৭ হাজার হেক্টর, সেচের আওতায় এসেছে ৮৭ হাজার হেক্টর। নওগাঁয় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ দুই লাখ ৮০ হাজার হেক্টর, সেচের আওতায় এসেছে এক লাখ ৬০ হাজার হেক্টর।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আবাদযোগ্য এক লাখ ২২ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে ৩৫ হাজার হেক্টর। নাটোরে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ এক লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর, সেচের আওতায় এসেছে ৬৮ হাজার হেক্টর। বগুড়ায় আবাদযোগ্য জমি দুই লাখ ৩১ হাজার হেক্টর, সেচের আওতায় এসেছে দুই লাখ হেক্টর।

রংপুর বিভাগের জয়পুরহাটে জমির পরিমাণ ৮৪ হাজার হেক্টর, সেচের আওতায় এসেছে ৭০ হাজার হেক্টর। গাইবান্ধায় আবাদযোগ্য এক লাখ ৫৯ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে ৯০ হাজার হেক্টর। রংপুরে আবাদযোগ্য এক লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর জমির মধ্যে সেচের আওতায় এসেছে এক লাখ হেক্টর। নীলফামারীতে আবাদযোগ্য জমি এক লাখ ২২ হাজার হেক্টর, সেচের আওতায় এসেছে ৫৫ হাজার হেক্টর। লালমনিরহাটে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৯৫ হাজার হেক্টর, সেচের আওতায় এসেছে ৪৪ হাজার হেক্টর। কুড়িগ্রামে জমির পরিমাণ এক লাখ ৬৭ হাজার হেক্টর, সেচের আওতায় এসেছে ৬৭ হাজার হেক্টর। দিনাজপুরে আবাদযোগ্য জমি দুই লাখ ৮৭ হাজার হেক্টর, সেচের আওতায় এসেছে এক লাখ ৬২ হাজার হেক্টর। ঠাকুরগাঁওয়ে আবাদযোগ্য জমি এক লাখ ২৪ হাজার হেক্টর, সেচের আওতায় এসেছে ৬১ হাজার হেক্টর। পঞ্চগড়ে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ ৯৮ হাজার হেক্টর, সেচের আওতায় এসেছে মাত্র ১৯ হাজার হেক্টর।

গত পাঁচ দশকের ব্যবধানে দেশে গভীর-অগভীর নলকূপের (সেচযন্ত্র) সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৬ লাখে। এ সময়ে সেচের জমি বেড়েছে প্রায় ২২ লাখ হেক্টর। এসব সেচযন্ত্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের ছোট-বড় নদ-নদী ও নদীর সাথে সংযুক্ত অসংখ্য খাল, বিল ও হাওরের পানির ওপর নির্ভরশীল। ফলে কোনো একটি নদীর ওপর বাঁধ নির্মাণ হওয়ার অর্থ সরাসরি ওই নদীকেন্দ্রিক সেচব্যবস্থার ওপর আঘাত হানা। ভারত প্রত্যক্ষভাবে বাংলাদেশের কৃষি ব্যবস্থাকে এভাবেই অচল করে দিচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, আমাদের দেশে ভূ-উপরিস্থ প্রাকৃতিক পানির উৎসগুলো সঙ্কুচি হয়ে পড়ছে। কারণ সেচের প্রধান উৎস ভূগর্ভের পানির ব্যবহার বৃদ্ধির বিপরীতে ভূগর্ভে পানি রিচার্জ হতে পারছে না। ফলে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। গঙ্গা, তিস্তা, মহানন্দা, ব্রহ্মহ্মপুত্রসহ অভিন্ন নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে ভারত অধিক হারে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় বাংলাদেশের সেচব্যবস্থায় ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তাই সেচের পানির অভাবে উত্তরাঞ্চলের লাখ লাখ হেক্টর জমি তিন ফসলিতে রূপান্তর করা সম্ভব হয়ে উঠছে না।