এসএসসি পরীক্ষা ২০১৯

ভুল প্রশ্নের দায় নেবে কে?

ভুল প্রশ্নের দায় নেবে কে?

বাংলাদেশে এসএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন ছিল বাংলা প্রথম পত্র। পরীক্ষা দিয়ে বান্ধবীদের সাথে এমসিকিউ অংশ নিয়ে কথা বলছিলেন এক পরীক্ষার্থী। কিন্তু বুঝতে পারলেন, কোথায় যেন গোলমাল হয়েছে। বান্ধবীর সাথে তার প্রশ্নপত্রে কোন মিল নেই।

চট্টগ্রামের একজন অভিভাবক এভাবেই বর্ণনা করছিলেন - কিভাবে তার মেয়ে আবিষ্কার করলেন ভুল প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা দিয়ে এসেছেন।

তিনি বলছিলেন, "সে যখন পরীক্ষার হল থেকে বরে হয়ে যাচ্ছিলো তখন দেখে এক মেয়ে অঝোরে কান্না করছে।"

"সে জিজ্ঞেস করলো কাঁদছ কেন? তখন সে বলল তাকে ১৮ সালের সিলেবাসের উপরে নির্মিত নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্ন দেয়া হয়েছে। আমার মেয়েও দেখল তারও ২০১৮ সালের সিলেবাসের উপরে। কিন্তু সে নিয়মিত ছাত্রী ২০১৯ সালের সিলেবাসের উপরে।"

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই অভিভাবক বলছেন, তার মেয়েটি এখন বেশ মুষড়ে পরেছেন।

তিনি বলছেন, "ওর মানসিক অবস্থা এখন খুবই করুন। শুধু আমার মেয়ে না। আরও অনেক মেয়ের। জীবনের প্রথম একটা সার্টিফিকেট পরীক্ষা, তাও প্রথম দিনে এরকম একটা ঘটনা। সবার ওখানে সবার যে কান্না।"

এমন পরিস্থিতি হয়েছে শুধু বন্দরনগরী চট্টগ্রামের সাতটি কেন্দ্রেই। সেখানে ৩০ নম্বরের নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এটি হয়েছে।

দেশের আরও অন্তত ১০ টি জেলায় নানা কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র নিয়ে নানা ধরনের গোলমাল হয়েছে।

নিয়মিত পরীক্ষার্থীদের দেয়া হয়েছে অনিয়মিত পরীক্ষার্থীদের প্রশ্ন। যাদের সিলেবাস ভিন্ন।

কিছু কেন্দ্রে পুরনো সিলেবাসে তৈরি প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছে। দুটি জেলার কয়েকটি কেন্দ্রে সঠিক প্রশ্নপত্র আনতে গিয়ে পরীক্ষা শুরু হয়েছে ২০ মিনিট পর।

ভুল প্রশ্নেই পরীক্ষা হয়েছে অনেক কেন্দ্রে। মুন্সিগঞ্জ সদরের কে কে স্কুলের কিছু শিক্ষার্থী এমন ভুল প্রশ্নে পরীক্ষা দিয়েছেন।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মনসুর রহমান খান বলছেন, এসব শিক্ষার্থীদের অনেকেই এখন নম্বর কমে যাওয়ার আশংকায় রয়েছেন।

তিনি বলছেন, "ওদের তো সিলেবাসই ভিন্ন। তাই ওরা সবাই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে নাই। যেসব ভাল ছাত্র হয়ত এ প্লাস পাইতো এখন সে হয়ত তা পাবে না।"

তিনি আরও বলছেন, "ওদের খাতাটা আলাদাভাবে করে যদি মূল্যায়ন না করে, ওদের প্রতি বোর্ড যদি একটু লিবারেল না হয়, ওভার মার্কিং না করে তাহলে ওরা রেজাল্ট খারাপ করবে।"

বাংলাদেশে গত কয়েক বছরে যে খাতটি নানা ধরনের অনিয়মের জন্য সবচাইতে বেশি আলোচিত ও সমালোচিত হয়েছে শিক্ষা তার একটি। গত বছর প্রশ্নপত্র ফাঁসের ব্যাপক অভিযোগ জর্জরিত ছিল এসব গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।

তা ঠেকাতে নজরদারীর অংশ হিসেবে পরীক্ষার সময় কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হচ্ছে।

সেই প্রেক্ষাপটে অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষা।

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী সে নিয়ে ব্যাপক চাপের মুখে পরেছিলেন। এটি নতুন সরকার ও নতুন একজন শিক্ষামন্ত্রীর অধীনে প্রথম কোন গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম বলছেন, তার এলাকায় ওইসব কেন্দ্রের সচিবদের শোকজ করা হয়েছে।

তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কী হবে ভুলের শিকার এসব শিক্ষার্থীদের?

তিনি বলছেন, "কখনো যদি কোন আপদকালীন পরিস্থিতি হয়, যেমন ধরেন পাঁচটা খাতা হারিয়ে গেলো বা পুড়ে গেলো, সেক্ষেত্রে একটা টেবুলেশন নীতিমালা আন্ত-বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত থাকে।"

"সেই অনুযায়ী তাদেরকে অন্যপত্রে যা পেয়েছে তার থেকে আরও পাঁচ পার্সেন্ট নাম্বার বাড়িয়ে যোগ করে তাকে দেয়া হবে। ধরেন দ্বিতীয় পত্রে যতে পেয়েছে তার থেকে পাঁচ শতাংশ বেশি ঐ পত্রে দেয়া হবে।"

এবারের মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রায় ২০ লাখের মতো পরীক্ষার্থী সারা দেশের প্রায় ৫০০ টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দিচ্ছে।

ভুল প্রশ্নপত্রের অনিয়মের শিকার শিক্ষার্থীরা কিছু এলাকায় বিক্ষোভ করেছেন। কর্তৃপক্ষের প্রতিশ্রুতিতে তারা এখনো আশ্বস্ত হতে পারছেন না।-বিবিসি বাংলা

জিএস/