‘একজন শিক্ষার্থীও ভোট দিতে না পারলে প্রশাসনকে পদত্যাগে বাধ্য করব’(ভিডিও)

‘একজন শিক্ষার্থীও ভোট দিতে না পারলে প্রশাসনকে পদত্যাগে বাধ্য করব’(ভিডিও)

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য সমর্থিত সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী লিটন নন্দী বলেছেন, যদি একজন শিক্ষার্থীও এ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারে তাহলে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করব।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৫৬ একর আমরা ছেড়ে দেব না উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রশাসন যদি ভোট র্যাগিং করার চেষ্টা করে এবং তারা যদি একজন শিক্ষার্থীরও ভোট হরণ করার চেষ্টা করে তাহলে কিন্তু আমরা কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ছেড়ে কথা বলব না, আমরা প্রশাসনকে পদত্যাগে বাধ্য করব।

রবিবার গণমাধ্যমের লাইভে এসে এমন হুশিয়ারি দেন প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য সমর্থিত সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী লিটন নন্দী।

ডাকসু নির্বাচনে প্রচারণার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা যা সত্য তাই নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়েছি। আমাদের সুদীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের একটা ধারাবাহিকতা আছে। আমরা সেই জিনিসগুলো নিয়েই শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়েছি।

লিটন নন্দী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের বলেছি, শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ, শিক্ষা যে ব্যবসা, এটার বিরুদ্ধে বলে এসেছি। আমরা বলে এসেছি এই বিশ্ববিদ্যালয় একটা প্রাইভেট কোম্পানির মতো চলতে পারে না। আমরা যেসব বিষয়গুলো নিয়ে আন্দোলন করে এসেছি সেই বিষয়গুলো বলেছি।

২৮ বছর পর ছাত্রদের অধিকার আদায়ের এই নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা বলেছি যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল মত এবং পথকে ধারণ করা। অন্যের মতকে দমন করা বিশ্বাদিদ্যালয়ের কাজ নয়। সেই কথাগুলো আমরা আগেও বলেছি এখন ও বলছি, সেগুলো নিয়েই আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়েছি।

প্রশাসনের সমালোচনা করে নন্দী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু থাকার পরেও যে ক্ষতিটি আমাদের হয়েছে তা হলো রাজনীতির পুরো সংজ্ঞাটিই পরিবর্তন হয়ে গেছে। সেটা হচ্ছে মেধাভিত্তিক রাজনীতির পরিবর্তে একধরনের পেশি শক্তির চর্চা হয়েছে। তখন মেধা অপ্রয়োজনীয় হয়ে গেছে। আরেকটি বড় ক্ষতি হয়েছে এক ধরনের প্রশাসনিক দাদাগিরি জন্মে উঠেছে।

তিনি বলেন, সেটা হচ্ছে-বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু একটি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় অনেকগুলো স্টেক হোল্ডার আছে। যেমন ছাত্র-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারি। প্রতিটি স্টেহোল্ডারের দায়িত্ব কিন্তু সমান। বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে চলবে সেটা নির্ধারণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার। সবাই মিলেই নির্ধারণ করবে। কিন্তু এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় ব্যক্তি রয়েছে আর তারা ছাত্রদের ওপর বিভিন্ন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিচ্ছে।

লিটন নন্দী বলেন, বিভিন্ন ফি চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। এই যে শিক্ষার্থীদের কোনো মতামত না নিয়ে তাদের ওপর সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে। আমরা বলছি প্রশাসনের দাদাগিরিটা বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বন্ধ করতে হবে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০ টাকার খাবার পাওয়া যায় আবার ২০ টাকারও খাবার পাওয়া যায়। আমাদের দাবি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজে বৈষম্য তৈরি করা না। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতির সন্তান যে খাবার গ্রহণ করবে একজন কৃষকের সন্তানও সেই খাবার গ্রহণ করবে। এখানে যদি এরকম বৈষম্য দেখান যে, যার টাকা আছে সে ওখানে খাবে আর যার টাকা নাই সে এখানে খাবে তাহলেতো এই বৈষম্য সারা বাংলাদেশে প্রভাব পড়বে।

বৈষম্যের বিষয়ে নন্দী আরও বলেন, আমরা দেখি ছেলেদের হল সারা রাত খোলা থাকবে আর মেয়েদেরকে সাড়ে ৯টার মধ্যে ঢুকতেই হবে। এই যে বৈষম্য এগুলো করা চলবে না বলে আমরা জানিয়েছি। এছাড়া লাইব্রেরি ২৪ ঘণ্টা খোলা, পরিবহন সেবা বাড়ানো এসব দাবি তো আছেই।

গেস্টরুম নির্যাতনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনোভাবেই গেস্টরুম নির্যাতন চলবে না। যারা ইতিপূর্বে গেস্টরুম নির্যাতন করেছে তাদের সবার বিচার করতে হবে, বিভিন্ন খুনের বিচার করতে হবে।

আমরা নির্বাচনে জয়লাভ করতে পারব কি না জানি না উল্লেখ করে লিটন নন্দী বলেন, আমরা এমন কিছু বক্তব্য নিয়ে গেছি শিক্ষর্থীদের মাঝে, আমরা অন্যদেরকে, যারা আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আমরা তাদেরকে এই বক্তব্যে আসতে বাধ্য করেছি। এটাই আমাদের সফলতা। আমরা মনে করি আমরা এখানেই সফল। একজনকে জিততে হলে যা করতে হবে আমরা সেসব বিষয় তুলে ধরেছি।

তিনি বলেন, আমরা অফলাইন ক্যাম্পেইনও করেছি আবার অনলাইন ক্যাম্পেইনও করেছি। তবে আমরা অফলাইন ক্যাম্পেইনে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। অর্থাৎ স্টুডেন্ট স্টুডেন্ট কানেকশান। আমাদের যত জনবল রয়েছে সেই জনবল নিয়ে ক্যাম্পাসের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে বেরিয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদের বলেছি আপনারা যাকে খুশি তাকে ভোট দিন, তবে ভোটটা দিন। আপনারা যাকে ভাল মনে করেন, যারা আপনাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন করবে তাদেরই ভোট দিন। এসব দাবি দাওয়া বাস্তবায়নে আগামীকাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রকাশ করার জন্য লিটন নন্দী শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান।

এমআই