ভিপি ইমির শরীরে ডিম নিক্ষেপ, সারারাত শামসুন্নাহার হল গেটে অনশনের ঘোষণা

ভিপি ইমির শরীরে ডিম নিক্ষেপ, সারারাত শামসুন্নাহার হল গেটে অনশনের ঘোষণা

শামসুন্নাহার হলের ভিপি এসকে তাসনিম আফরোজ ইমির শরীরে ডিম নিক্ষেপ করা হয়েছে। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে সারারাত সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের গেটে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমানে ওই হলের গেটে অবস্থান করছেন ইমি।

এ বিষয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে তাসনিম আফরোজ ইমি স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘প্রোক্টর স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছি। তিনি আমার ফোন রিসিভ করেননি। অন্য কাউকে দিয়ে ফোন দেয়ালে ফোন কেটে দিয়েছেন। এ ঘটনা অবশ্য আমার ক্ষেত্রে নতুন নয়!’

যারা আজকে আমার সঙ্গে, আমাদের সঙ্গে এই ব্যবহার করল, ওরা ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আমি আজ রাতে এসএম হলের গেট থেকে যাব না। প্রয়োজনে সারারাত বসে থাকব।

আমি ভেতরে যখন এসএম হল ছাত্রলীগের সেক্রেটারি তাপসকে জিজ্ঞেস করলাম আমার গায়ে ডিম কেন মেরেছে, সে উল্টো আমাকে ধমকিয়েছে। ওরা ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আমি এসএম হলের গেট থেকে যাব না। প্রয়োজনে সারারাত বসে থাকব।’

ইমি গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের ওপর যে নির্মম অত্যাচার হয়েছে ইতিমধ্যে আপনারা তা জেনেছেন। ছেলেদের সবাইকে মারধর করা হয়েছে। মেয়েদের গায়ে ডিম ছুঁড়ে মারা হয়েছে।

ইমি বলেন, আমি বারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের কাছে কল করেছি। তিনি আমার কল রিসিভ করছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত ছাত্রলীগের গুণ্ডারা আমাদের কাছে ক্ষমা না চাইবে হলের সামনের গেট থেকে আমি নড়ছি না। প্রয়োজনে সারারাত এখানে দাঁড়িয়ে থাকব।

ফেসবুকের আরেক পোস্টে ইমি লেখেন, ‘দুই বছরের জন্যে বহিষ্কার এসএম হলের বেজন্মা সানাউল্লাহ সায়েম তার পোলাপান নিয়ে এখন মেয়েদেরকে উত্যক্ত করছে। আমরা বাইরে দাঁড়িয়ে আছি বিচারের জন্য। আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে। বলেছে আজকে বাইরে কোনো লাইট থাকবে না। মেয়েদেরকে উদ্দেশ্য করে এই বক্তব্যের মানে বুঝে নেন। কন্টিনিউয়াসলি আমাদেরকে উত্যক্ত করতেছে।’

এছাড়া আরেক পোস্টে তাসনিম আফরোজ ইমি লেখেন, ‘এসএম হলের বেজন্মারা শুধু ফরিদকে রক্তাক্ত করেই ক্ষান্ত হয়নি, আমরা যারা প্রোভোস্টের কাছে স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলাম, তাদের ওপর হামলা করেছে।

ডাকসুর ভিপি, সমাজসেবা সম্পাদককে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। মেয়েদের লাঞ্ছিত করেছে। আমাদের গায়ে ডিম ছুঁড়েছে। আমার গায়ে ডিম ছুঁড়েছে। এর শেষ না দেখে ছাড়ছিনা এবার আর।

একজন নির্বাচিত হল সংসদের ভিপির সঙ্গে যা করেছে ওরা, তার বিচার করতে হবে। এই বেজন্মারাই একটা ক্যালকুলেটরের জন্য আহসানের চোখ গেলে দিয়েছিল।’

এরআগে, ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরসহ কয়েকজনকে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে ‘অবরুদ্ধ’ করে রাখে ছাত্রলীগ।

মঙ্গলবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই হলে তাকে অবরুদ্ধ করে ছাত্রলীগ। নুরের সঙ্গে ডাকসুর সমাজসেবা সম্পাদক আকতারসহ বিভিন্ন প্যানেলের শিক্ষার্থীরা আছেন বলে জানা গেছে।

অবরুদ্ধ করার কারণ হিসেবে জানা যায়, সোমবার রাত ১২টার দিকে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ফরিদ হাসান নামে একজনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ছাত্রলীগ এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। এই ঘটনায় মঙ্গলবার বিকালে নুরের নেতৃত্বে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এরপর তারা মিছিল শেষ করে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে যান এবং প্রভোস্টের কাছে বিচার দাবি করেন।

এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এসএম হলে জড়ো হয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নুরদের লক্ষ্য করে ডিম নিক্ষেপ করতে থাকে। এ সময় হলে নুরদেরকে অবরুদ্ধ করে রাখে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

প্রসঙ্গত, সোমবার রাত ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে ডাকসুর হল সংসদের প্রার্থী (জিএস) ফরিদ হাসানকে মারধর করে ছাত্রলীগ।

মারধরের শিকার ফরিদ ওই হল শাখা ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্রলীগ থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। ফরিদ হাসান বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র।

ডাকসু নির্বাচনের সময় অভিযোগ ছিল, বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য করে তাকে হল থেকে বিতাড়িত করেছে ছাত্রলীগ।

সেই ঘটনার সূত্র ধরে সোমবার রাতে এসএম হল সংসদের জিএস জুলিয়াস সিজার ও হল শাখা ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের নেতৃত্বে তাকে আবারও মারধর করার অভিযোগ উঠে। মারধরে আহত ফরিদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। তার কপালের ডান পাশ থেকে ডান কান পর্যন্ত ৩২টি সেলাই পড়েছে বলে জানা গেছে।

এমআই