দেরিতে খাতা দেখেন শিক্ষক, ফল পান না ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা

দেরিতে খাতা দেখেন শিক্ষক, ফল পান না ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের অবহেলা ও সময়ক্ষেপণের কারণেই সেশনজটে পড়েছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, শিক্ষকরা সময়মতো উত্তরপত্র মূল্যায়ন না করায় এ ঘটনা ঘটছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে উদাসীন মনোভাব প্রকাশ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিভিন্ন বর্ষের বিভিন্ন সেশনের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ৬-৭ মাস পার হয়ে গেলেও ফল প্রকাশ হচ্ছে না। অথচ এই ফল প্রকাশ হওয়ার কথা পরীক্ষা শেষ হওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে। উত্তরপত্র হাতে পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নম্বর জমা দেয়ার কথা থাকলেও মাসের পর মাস আটকে রেখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সাত কলেজের ৬১ জন শিক্ষক। তাদের কারণেই সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ভয়াবহ সেশনজটে পড়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাবির ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সানিয়া সিতারা জানুয়ারিতে তৃতীয় বর্ষের ৩৫৭টি খাতা নেন মূল্যায়নের জন্য। তিন মাস ১৬ দিন পর তিনি ১৬ মে জমা দেন। ঢাবির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম ৩৮২টি উত্তরপত্র নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি জমা দেয়ার কথা থাকলেও জমা দেন ১৪ মে। ঢাবির ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মনিকা চক্রবর্তী চতুর্থ বর্ষের ১০১টি খাতা নেন ১৮ ফেব্রুয়ারি। প্রায় তিন মাস পর জমা দেন ৭ মে।

বিলম্বে খাতা জমা দেয়ার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই সাত কলেজের শিক্ষকরাও। কবি নজরুল সরকারি কলেজের সহযোগী অধ্যাপক কল্যাণ ব্যানার্জি খাতা নেন ৩ মার্চ, জমা দেন ৫ মে। ঢাকা কলেজের ইতিহাসের শিক্ষক তাসলিমা খাতুন দুই মাস ১০ দিন পর খাতা জমা দেন। অনার্স তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের উত্তরপত্র নিয়ে যথাসময়ে জমা না দেয়া এ পর্যন্ত ৬১ শিক্ষকের নাম পাওয়া গেছে।

জানতে চাইলে ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, ‘কিছু শিক্ষকের উত্তরপত্র বিলম্বে জমা দেয়া হয়েছে। আমরা তদারকি বাড়িয়েছি। এর ফলে সমস্যার সমাধান হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। ৩-৪ দিনের মধ্যে এর ফল দৃশ্যমান হবে।’

সোমবার সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। স্মারকলিপিতে দ্রুত ফলাফল প্রকাশের দাবি জানান তারা। এ সময় তারা উত্তরপত্র মূল্যায়নে অস্বাভাবিক বিলম্বের অভিযোগ করেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করে বলেন, বেশিরভাগ শিক্ষাবর্ষেরই পরীক্ষা শেষ হয়েছে ছয় মাসের বেশি হলো। অথচ ফল প্রকাশ করা হয়নি।

ইতিহাসের তৃতীয় বর্ষের এক ছাত্র বলেন, সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে আছি আমরা। পরীক্ষার ফল ছয় মাসেও প্রকাশ করা হলো না। অথচ আমাদের সঙ্গে প্রথম বর্ষে (২০১৪-২০১৫ সেশনে) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের অনার্স পরীক্ষা চলছে। আর ঢাবিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা মাস্টার্সে ক্লাস করছেন। একইভাবে চতুর্থ বর্ষের রসায়ন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, হিসাববিজ্ঞানসহ অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ৫-৬ মাসেও ফল প্রকাশ না করায় ক্ষোভ জানান।

ফল প্রকাশের দাবিসহ শিক্ষার্থীদের গত কয়েকদিনের ৫ দফা দাবিতে আন্দোলনের পর গত রোববার বিকেলে সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন ঢাবি উপাচার্য। সেখানে বিলম্বে উত্তরপত্র জমা দেয়ার বিষয় নিয়ে কথা হয়। যারা যথাসময়ে উত্তরপত্র জমা দেননি, তাদের কাছ থেকে উত্তরপত্র নিয়ে অন্যদের দিয়ে তা মূল্যায়নের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যারা উত্তরপত্র জমা দিতে বিলম্ব করছেন তাদেরকে অতিসত্তর জমা দেয়ার তাগিদ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য আখতারুজ্জামান। দ্রুতই ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানান উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।

এদিকে নিজেদের দাবি-দাওয়া নিয়ে সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে বৈঠকে ৯০ দিনের মধ্যে ফল প্রকাশের আশ্বাস পেয়ে আন্দোলন স্থগিত করেছেন সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বৈঠক শেষে আন্দোলনের আহ্বায়ক ঢাকা কলেজের ছাত্র মো. আবু বকর বলেন, উপাচার্য স্যার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি আশ্বস্ত করেছেন, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের ফলাফল ৯০ দিনের আগেই প্রকাশ করা হবে। তাই এ বিষয়ে বিশেষ পদ্ধতি গ্রহণ করা হবে; যা বাস্তবায়ন করতে ৪-৬ মাস সময় লাগবে এবং চলমান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে আগের মতো দেরি হবে না।

উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুর বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ- এই সাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অধিভুক্ত করা হয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে অধ্যয়নরত আড়াই লক্ষাধিক শিক্ষার্থী।

এমআই