নবজাতক মায়েদের জন্য যা নিষিদ্ধ

নবজাতক মায়েদের জন্য যা নিষিদ্ধ ছবি: ইউনিসেফ বাংলাদেশ

নবজাতক মা প্রসবের আগ পর্যন্ত সর্বদাই উদ্বিগ্ন থাকেন যাতে বাচ্চার কোনো ক্ষতি না হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মাকে বাচ্চা প্রসবের পর তার খাবার বিষয়ে সচেতন হওয়া উচিত। স্তন প্রদানকালীন যে সব খাবার খেলে বাচ্চার শরীরের জন্য ক্ষতিকর সে সব খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলতে হবে। অনেক নবজাতক মা আছেন তারা না জেনে যেকোনো পছন্দসই খাবার খেয়ে থাকেন যার শক্তিশালী উপাদান স্তনের স্বাদ পরিবর্তন করে ফেলে। যেটি বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

কিছু কিছু বাচ্চা আছে, মায়ের স্তনের ভ্যারাইটিকে সহ্য করতে পারে না যেটি তার শরীরেরও জন্য ক্ষতিকর। তাই মায়েদের উচিত স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, কারণ মা যে খাবার খাবেন বাচ্চার শরীরে তারই প্রভাব পড়বে। বাচ্চার শরীরের জন্য মায়ের বুকের স্তন পান করানো খুবই স্বাস্থ্যকর।

সবসময় খেয়াল রাখতে হবে যে, স্তন পান করার পর বাচ্চার রি-অ্যাকশন বা প্রতিক্রিয়া হয় কিনা। কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে দু-এক সপ্তাহ অন্তর শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে হবে। নিচে কিছু খাবারের তালিকা তুলে ধরা হলো, যে খাবারগুলো নবজাতক মাকে স্তন প্রদানকালীন সময়ে পরিহার করা উচিত।

ক্যাফেইন
যখন একজন মা কফি-চা কিংবা পানীয় সোডা পান করে থাকেন তার কিছু অংশ মায়ের দুধের সঙ্গে মিশে যায়। এক্ষেত্রে বাচ্চারা বড়দের মতো দ্রুত মায়ের দুধের সঙ্গে মিশে থাকা ক্যাফেইন খেয়ে সহজে হজম করতে পারে না। ফলে বাচ্চাদের পেটে জ্বালাপোড়া, খিটখিটে মেজাজসহ অনিদ্রার মতো নানা সমস্যা দেখা দেয়। এতে অতি চঞ্চল বাচ্চারা একেবারের ঘুমাতে পারে না। ফলে বাচ্চার সঙ্গে মাকেও সজাগ থাকতে হয়। ক্যাফেইন বাচ্চার বেড়ে ওঠাকে ব্যাহত করে। কাজেই মাকে নবজাতকের মঙ্গলের কথা চিন্তা করে ক্যাফেইন জাতীয় খাবার পরিহার করা উচিত।

রসুন
রসুনের তৈরি রুটি কিংবা সস খুবই মজাদার একটি খাবার। কিন্তু নবজাতকের কথা মাথায় রেখে রসুন কিংবা সরাসরি রসুনের তৈরি কোনো খাদ্য মায়ের খাওয়া উচিত নয়। যদিও রসুন অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে থাকে। কিন্তু বাচ্চাদের শরীরের জন্য এটি উপযুক্ত খাবার নয়। রসুন নবজাতক মায়েদের জন্য এতই ক্ষতিকর যে, এটি খাওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে মায়ের দুধে প্রবেশ করে এর স্বাদ পরিবর্তন করে দেয়। বাচ্চা মায়ের স্তন পান করার পর তার মুখে রসুনের গন্ধ চলে আসে। তাই প্রায়ই দেখা যায় যে, মা রসুন খাওয়ার পর বাচ্চাকে স্তন পান করাতে গেলে সে চিৎকার-চেঁচামেচি করে, অনীহা ও অরুচি দেখায়। কারণ বাচ্চা মায়ের স্তন থেকে রসুনের গন্ধ অনুভব করতে পারে।

উচ্চমাত্রার পারদসমৃদ্ধ মাছ
নবজাতকের মায়েরা যে একেবারেই মাছ খেতে পারবেন না এমন কোনো নিয়ম নেই। কিন্তু মাছ খাওয়ার ক্ষেত্রে নির্বাচন করতে হবে যেটি বাচ্চার শরীরে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না। কিছু মাছ আছে যেগুলো উচ্চমাত্রায় পারদসমৃদ্ধ। যেটি মায়ের স্তনের সঙ্গে মিশে শিশুর শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। সার্ক, কিছু সামুদ্রিক মাছ, টেলিফিশ ও কিং ম্যাকেরাল না খাওয়াই ভালো। এ জাতীয় মাছ সাধারণত উচ্চমাত্রায় পারদ বহন করে থাকে। তাই এই ধরনের খাবার থেকে মায়েদের বিরত থাকা শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। বেসরকারি সংস্থা এফডিএর মতে, একজন মায়ের ১২ আউন্স মাছ খাওয়া উচিত প্রতি সপ্তাহে, যার মধ্যে থাকবে বিভিন্ন ধরনের মাছ। এর মধ্যে পারদের পরিমাণ কম, আঁশবিহীন যেমন কাজলী, বাসপাতা, মলাঢেলাসহ নানা প্রকার দেশি মাছ, যেগুলোতে পারদের মাত্রা তুলনামূলক কম থাকে।

অ্যালকোহল
বাচ্চা প্রসবের ৯-১০ মাস আগে থেকেই অ্যালকোহল পানের অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে মাকে। যদি সে খুব বেশি আসক্ত হয়ে থাকে তবে তাকে বাচ্চার মঙ্গল ও ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অ্যালকোহল পরিহার করতে হবে। যতদিন পর্যন্ত না বাচ্চা স্তন পান বন্ধ করে ততদিন অ্যালকোহল থেকে মাকে দূরে থাকতে হবে। কারণ নবজাতকের মা অ্যালকোহল পান করলে সেটি সরাসরি শিশুর ওপর প্রভাব ফেলবে।

মেন্থল
উচ্চমাত্রার মেন্থল বাচ্চার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। নবজাতকের মা যদি মেন্থল গ্রহণ করে সেটি পাকস্থলিতে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্তনের নার্ভে খুব দ্রুত পৌঁছে যায়। যেটি বাচ্চার শ্বাসকষ্ট, দুগ্ধপানে অনীহাসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। কাজেই বাচ্চা স্তন পানের সময় মাকে মেন্থল গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা ভালো।

ডেইরি বা দুগ্ধ জাতীয় পণ্য
আমরা সচরাচার দেখতে পাই, অধিকাংশ বাচ্চাই গরুর দুধ কিংবা দুগ্ধ জাতীয় পণ্য একদমই সহ্য করতে পারে না। যখন একজন মা গরুর দুধ কিংবা দুগ্ধ জাতীয় পণ্য যেমন আইসক্রিম, পনির, দইসহ নানা দুগ্ধ জাতীয় খাবার খেয়ে থাকেন যেগুলো দুধে অ্যালার্জি হিসেবে কাজ করে। ফলে বাচ্চার শরীরে লাল ফুসকুড়ি, চোখ ফুলে ওঠা, মুখ ও ঠোঁটে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। এছাড়া প্রচুর কাশি, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া, কোষ্টকাঠিন্য, বমি, ক্ষুধামান্দ্যসহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এমআই