
পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর বৃটেনে থাকা সম্পত্তি জব্দ করেছে দেশটির জাতীয় অপরাধ সংস্থা (এনএসএ)। এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানী দল (আই-ইউনিট)। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অনুরোধে এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে তারা।
বুধবার (১১ জুন) ‘ইউকে ক্রাইম এজেন্সি ফ্রিজেস অ্যাসেটস অব ডিসগ্রেস শেখ হাসিনাস অ্যালাই’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাইফুজ্জামান চৌধুরী সম্প্রতি ক্ষমতাচ্যুত ও (সাময়িক) নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের নেত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক মিত্র হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত করছে বাংলাদেশ।
গত রাতে আই-ইউনিটকে দেয়া এক বিবৃতিতে এনএসএ-এর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, আমরা নিশ্চিত করে বলছি- চলমান তদন্তের অংশ হিসেবে সাইফুজ্জামানের একাধিক সম্পদ জব্দের নির্দেশ পেয়েছে এনএসএ। সম্পদ জব্দের অর্থ হচ্ছে চৌধুরী এখন আর এগুলো বিক্রি করতে পারবেন না।
এমন এক সময় তার সম্পত্তি জব্দের খবর এলো যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস লন্ডন সফরে আছেন।
গত বছর ৫৬ বছর বয়সী সাইফুজ্জামানের বৃটেনের সম্পদের খবর প্রথম প্রকাশ করে আল জাজিরা। সংবাদমাধ্যমটি জানায় সেখানে সাবেক ওই মন্ত্রীর ৩৫০টির বেশি সম্পত্তি রয়েছে। তবে এসব সম্পত্তির ঠিক কতটি জব্দ করা হয়েছে তা স্পষ্ট করেনি বৃটেনের জাতীয় অপরাধ সংস্থা। তবে আল জাজিরার আই-ইউনিট জানিয়েছে, লন্ডনের সেন্ট জন’স উড এলাকায় ১১ মিলিয়ন পাউন্ড ( ১৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের একটি বিলাসবহুল বাড়ি এই জব্দের আওতায় আছে। এই বাড়িতেই আল জাজিরার অনুসন্ধানী দল চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এখানেই তিনি দামি স্যুট ও কুমিরের বাচ্চার চামড়ার তৈরি জুতার প্রতি তার আগ্রহের কথা জানিয়েছিলেন। সেসময় শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি তো ওনার ছেলের মতো। এছাড়া চৌধুরীর যে লন্ডনে ব্যবসা আছে সে বিষয়টিও জানতেন শেখ হাসিনা।
আই-ইউনিটের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী বার্ষিক বৈদেশিক লেনদেনের সীমা মাত্র ১২ হাজার ডলার থাকলেও বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন চট্টগ্রামের প্রভাবশালী পরিবার থেকে উঠে আসা সাবেক ওই মন্ত্রী। অনুসন্ধানে দেখা যায়, লন্ডন, দুবাই ও নিউইয়র্কে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি কিনেছেন সাইফুজ্জামান। তবে বাংলাদেশের ট্যাক্স রিটার্নে এসব সম্পদের কোনো উল্লেখ নেই।
‘দ্য মিনিস্টার’স মিলিয়নিয়ার্স’ শিরোনামে একটি প্রমাণ্যচিত্রের মাধ্যমে এসব তথ্য তুলে ধরে আল জাজিরা।
সাইফুজ্জামান ছিলেন শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। তার আমলে তাকে মন্ত্রীও করেছিলেন তিনি। গত বছর ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ সহিংসভাবে দমন করেন হাসিনা। তাতে শত শত মানুষের প্রাণ গেছে। তবুও বিক্ষোভ দমনে ব্যর্থ হয়ে গত বছরের ৫ই আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন সাবেক ওই প্রধানমন্ত্রী। পতনের পর তার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার।
আওয়ামী সরকারের পতনের পর সাইফুজ্জামানকে লন্ডনের লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড সংলগ্ন অভিজাত এক এলাকায় হাঁটতে দেখা গিয়েছে বলে খবর প্রকাশ করেছে আই-ইউনিট।
এর আগে বিদেশে সম্পত্তি বৈধ উপায়ে অর্জিত বলে দাবি করেন সাইফুজ্জামান। তিনি আরও দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ থেকে এসব তদন্ত শুরু করেছে বর্তমান সরকার।