জাতিসংঘের ৩ সংস্থার হুশিয়ারি

‘করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে’

‘করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় ব্যর্থ হলে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে’

বুধবার তিনটি বৈশ্বিক সংস্থার প্রধানরা হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, চলমান করোনাভাইরাস সঙ্কট সঠিকভাবে মোকাবেলা করতে ব্যর্থ হলে বিশ্বব্যাপী সম্ভাব্য ‌‌‌‌‘খাদ্য ঘাটতি’ দেখা দিতে পারে। বিশ্বজুড়ে অনেক সরকার ভাইরাসের বিস্তার রোধে তাদের জনগণকে লকডাউনে ফেলেছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও খাদ্য সরবরাহের চেইনে মারাত্মক ধীরগতি দেখা দিয়েছে।

ইতিমধ্যে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া লোকেরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছেন। একারণে অনেক দেশে সুপারমার্কেটের তাকগুলি খালি হয়েছে। এটা সরবরাহ চেইনের ভঙ্গুরতা নির্দেশ করছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রধান কোয়েড ডংইউ, ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন প্রধান টেড্রাস অ্যাধনাম ঘেরবাইয়াসিস এবং ওয়ার্ল্ড ট্রেড অর্গানাইজেশন এর পরিচালক রবার্তো আজেভেদো এর স্বাক্ষরিত ওই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘খাদ্য প্রাপ্যতা সম্পর্কে অনিশ্চয়তা তৈরি হলে তা রফতানি নিষেধাজ্ঞা ডেকে আনতে পারে এবং এরফলে বিশ্ববাজারে খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে।’

এটি একটি নিষ্ক্রিয় হুমকি নয়। ২০০৭ সালে বিশ্বব্যাপী আর্থিক সঙ্কটের পরে, ধান উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও ভিয়েতনাম প্রত্যাশিত দাম বৃদ্ধিকে রুদ্ধ করতে তাদের রফতানি সীমিত করেছিল। এরফলে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার পরে বেশ কয়েকটি উন্নয়নশীল দেশে খাদ্য দাঙ্গা দেখা দিয়েছিল।

এই সতর্কবার্তাটি রাশিয়ার উদ্দেশ্য নির্দেশিত হতে পারে। কারণ সেখানে কর্মকর্তারা গম রফতানি নিয়ন্ত্রণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন এবং দাম যাতে লাফিয়ে না বাড়ে তা নিশ্চিত করার জন্য ইতিমধ্যে দেশটির মজুদ সিল করে দিয়েছেন।

ওই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ লকডাউনের মাঝে বাণিজ্য যাতে যথাসম্ভব অবাধে প্রবাহিত হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য অবশ্যই বিশেষ প্রচেষ্টা করতে হবে, বিশেষত খাদ্যের ঘাটতির কবল থেকে বাঁচার জন্য।’

‘নাগরিকদের স্বাস্থ্য ও সুস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় কাজ করার সময়, দেশগুলিকে এটা নিশ্চিত করা উচিত যে বাণিজ্য সম্পর্কিত যে কোনও পদক্ষেপ এমনভাবে নিতে হবে যাতে খাদ্য সরবরাহ কোনোভাবে ব্যাহত না হয়।’ যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়।

‘দীর্ঘমেয়াদে, খাদ্য সরবারাহে নিয়ন্ত্রণ এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার কারণে কৃষি শ্রম না পাওয়া এবং বাজারে খাদ্যের প্রাচুর্যতায় সংকট তৈরি করতে পারে। কৃষি ও খাদ্য শিল্পের শ্রমিকদের চলাচলে বাধাগ্রস্ত করা বিরুপ ফল বয়ে আনতে পারে। খাদ্য বোঝাই কন্টেইনার সীমান্ত পাড়ি দিতে বিলম্ব বয়ে আনবে। পচনশীল খাবারের পরিবহনে অপচয় বাড়বে। সবমিলিয়ে খাদ্য বর্জ্য বাড়িয়ে তুলবে।’ ওই তিন নেতা উল্লেখ করেছেন।

সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া নির্দিষ্ট দেশগুলি প্রমাণ করল যে, ফসল ঘরে তুলে আনতে তারা বিদেশী কর্মীদের উপর কতটা নির্ভরশীল।

দ্রুত সমাধান না পাওয়া গেলে মেক্সিকো থেকে মৌসুমী খামারীদের অভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক ফসলের উত্পাদনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে। পশ্চিম ইউরোপে উত্তর আফ্রিকা এবং পূর্ব ইউরোপের শ্রমিকদের অনুপস্থিতিও একইরকম ফল বয়ে আনতে পারে।

এফএও-র সিনিয়র অর্থনীতিবিদ আবদুলরেজা আববাসিয়ান বলেছেন, ‘আমরা এই সঙ্কটের কেবলমাত্র শুরুর পর্যায়ে আছি।’ যিনি বিষয়টিকে উত্পাদনের চেয়ে পরিবহন ও সরবরাহ সংকটের জায়গা থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন।

তিনি বিশ্বাস করেন যে, ভারতে যা ঘটছে, যেমন দেশব্যাপী আরও দুই সপ্তাহ ধরে লকডাউন থাকে, তাহলে দেশটির অবস্থাটা তাদের জনসংখ্যার আকার মনে করাবে। এবং রফতানিকারী হিসেবে তার ভবিষ্যত ভূমিকা আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে। ‘কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ফসল কাটা শুরু হচ্ছে, তাই পণ্যগুলোর অবাধ চলাচল নিশ্চিত করতে হবে।’ তিনি বলেছিলেন।

এফএও, ডাব্লুএইচও এবং ডব্লিউটিও নেতারা খাদ্য উত্পাদন, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিতরণে নিযুক্ত কর্মীদের রক্ষা করার পাশাপাশি খাদ্য সরবরাহের শৃঙ্খলা বজায় রাখার ওপর জোর দেন।

সুপারমার্কেটের ক্যাশিয়াররা ইতালি এবং ফ্রান্সে ভাইরাসে যারা মারা গেছেন, সেখানে কিছু সহকর্মী শ্রমিক তাদের সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা ও সরঞ্জামের অভাবে ওয়াকআউট করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের পাইকারি খাবার বাজারগুলিও কর্মবিরতির মুখোমুখি হচ্ছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক চুক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে দুর্বল করে রেখেছে।

তবে এফএও, ডব্লিউএইচও এবং ডব্লিউটিও বলেছে যে, নোভেল করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য খাদ্য ঘাটতি এড়াতে একসাথে কাজ করা দরকার। খবর ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির।