এ কি করলো আকায়েদ উল্লাহ!

উৎকন্ঠিত নিউইয়র্ক, হতভম্ব বাংলাদেশীরা

উৎকন্ঠিত নিউইয়র্ক, হতভম্ব বাংলাদেশীরা

নিউইয়র্ক থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারী, ১২ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : নিউইয়র্কের ব্যস্ততম টাইম স্কয়ার সাবওয়ে স্টেশন থেকে পোর্ট অথরিটি বাস স্টেশনে যাতায়াতের আন্ডার গ্রাউন্ডে সোমবার সকালে বোমা হামলা চালিয়েছে বাংলাদেশী বংশোদভূত যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেন্ট আকায়েদ উল্লাহ।

বোমা বিস্ফোরণে সে নিজেও গুরুতর আহত হয়েছে। নিউইয়র্ক পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে জীবিত অবস্থায় আকায়েদ উল্লাহকে পাকড়াও করতে সমর্থ হয়। পুলিশ হেফাজতে থাকা আকায়েদ উল্লাহ জিঙ্গাসাবাদে নানা চমকপ্রদ তথ্য দিচ্ছে। জানিয়েছে সে নিজেই ছিল বোমার কারিগর। নিজের তৈরি বোমা শরীরে স্থাপন করে নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল সে। বোমা তৈরির কৌশল রপ্ত করেছিল অনলাইনে। নাশকতার উদ্দেশ্যে নিজের বাসায়ই তৈরি করেছিল বোমা। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সে বলেছে, অনলাইনের মাধ্যমেই সে উগ্রপন্থায় ঝুঁকে। গত পাঁচবছরে কয়েকটি দেশ সফরের অভিজ্ঞতাও রয়েছে তার।

২৭ বছরের বয়সের আকায়েদ উল্লাহ ২০১১ সালে পারিবারিক অভিবাসন ভিসায় নিউইয়র্কে আসে।
পরিবারের সঙ্গে ব্রুকলিনে থাকতে সে । আকায়েদ উল্লাহর দেশের বাড়ি সন্দ্বীপের মুছাপুরে। বাবা সানাউল্লাহ মিয়া। যুক্তরাষ্ট্রে আসার আগে সে ঢাকার হাজারীবাগ এলাকায় বসবাস করতো বলে জানা গেছে।তার স্ত্রী ও শিশু সন্তান এখনো ঢাকায়।

বাংলাদেশ সরকার তরফে ম্যানহাটনের বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আটক আকায়েদ উল্লাহর বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার কোনও রেকর্ড নেই বলে যুক্তরাষ্ট্রকে জানানো হয়েছে। তাকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘হোম গ্রোন’ সন্ত্রাসী বলেও আখ্যা দিয়েছে বাংলাদেশ। পুলিশের আইজি কে এম শহীদুল হকও সোমবার সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আকায়েদের নামে বাংলাদেশে কোনও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড নেই।’

বাংলাদেশি আকায়েদ উল্লাহ নিউ ইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন আইন সংস্কারে ফের তাগিদ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেন, বিদ্যমান অভিবাসন নীতিতে অনেক ত্রুটি রয়েছে। যে ফ্যামিলি অভিবাসন ভিসায় আকায়েদ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছে তার সমালোচনা করে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এমন ফ্যামিলি ভিসা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রেস সেক্রেটারী সারা সেনডার্স বলেছেন, পোর্ট অথোরিটি বাস টার্মিনালে হামলার ঘটনা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসন সংস্কারের আহ্বানের যথার্থতা প্রমাণ করে। পারিবারিক অভিবাসনের বদলে মেরিট অনুসারে অভিবাসন প্রদানের যে আহ্বান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করছেন, এ নিয়ে কংগ্রেসকে দ্রুত উদ্যোগ গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়েছে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে।

অ্যাটর্নি জেনারেল জেফ সেশন এক বিবৃতি বলেছেন, ‘মাত্র দুই মাসের মধ্যে নিউইয়র্কে দুটি জঙ্গি হামলার জন্য আমাদের ব্যর্থ ইমিগ্রেশন আইন দায়ী।’ লটারি ভিসা বা পারিবারিক ভিসায় আসা অভিবাসনে আমেরিকার কোনো স্বার্থ সংরক্ষিত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমেরিকার একজন নাগরিকের বোনের ২০ বছরের এক ছেলের পারিবারিক অভিবাসনে আমেরিকার কোনো স্বার্থ জড়িত নেই। মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে যাচাই বাছাই করে অভিবাসন ভিসা দেয়া হলে আমেরিকা উপকৃত হবে এবং নিরাপত্তাও অক্ষুণ্ন থাকবে।

বাংলাদেশী আকায়েদ উল্লাহর এই অপকর্মে হতভম্ব হয়ে পড়েছে নিউইয়র্ক সহ গোটা যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বসবাসরত বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী। মূলধারার সকল মিডিয়া জুড়ে আকায়েদ উল্লাহর খবর আর বিশ্লেষণ। টেলিভিশনের পর্দায় দিনভর চলছে এক্সপার্ট অপিনিয়ন। বারবার উঠে আসছে বাংলাদেশের নাম। এতে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও সমাজ উন্নয়নের অন্যতম অংশীদার এসব বাংলাদেশীরা যতোটা ক্ষুব্ধ ততোটাই অপমানিত বোধ করছেন। সেই সাথে কাজ করছে এক অজনা শংকা ও অনিশ্চয়তা। জীবিকার অন্বেষণে অনেকে পরদিন কাজে পর্যন্ত যোগ দেননি। চরম ঘৃণা প্রকাশ করছেন এই পথভ্রষ্ট, বিভ্রান্ত ও বাংলাদেশী নামক কলঙ্ক আকায়েদ উল্লাহর প্রতি। বারবার একই প্রশ্ন দোলা দিচ্ছি সকলের মনে- এ কি করলো আকায়েদ উল্লাহ!