ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে মডেলসহ গ্রেপ্তার ৪

ঢাকায় বিমানবন্দর থেকে মডেলসহ গ্রেপ্তার ৪

পালিয়ে দেশত্যাগ করার সময় রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কথিত মডেলসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। র‌্যাব বলছে, গ্রেপ্তারকৃতরা নরসিংদী ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ অস্ত্রের কারবার, মাদককারবার, চাঁদাবাজিসহ নারীঘটিত অসামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। তারা হুন্ডের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার করেছে।

গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব-১ অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুল। তিনি বলেন, অনুসন্ধানে র‌্যাব জানতে পারে, গ্রুপটি দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ গোপনে দেশের বাইরে পাচার করে আসছে। টাকা পাচারের পর তারা গোপনে দেশত্যাগের জন্য বিমানবন্দরে অবস্থান করছে এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে র‌্যাব-১ এর একটি আভিযানিক দল হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শামিমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ (২৮) এবং তার স্বামী ও অপরাধের সহযোগী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী ওরফে মতি সুমন (৩৮), সাব্বির খন্দকার (২৯), ও শেখ তায়্যিবাকে (২২) গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৭টি পাসপোর্ট, ২ লাখ ১২ হাজার ২৭০ টাকা, ২৫ হাজার টাকা মূল্যের জালনোট, ৬০০ ভারতীয় রুপি ৩১০, ৪২০ শ্রীলংকান মুদ্রা, ১১ হাজার ইউএস ডলার এবং ৭টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়।

লে. কর্নেল শফিউল্লাহ বুলবুল প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানান, অবৈধভাবে অর্থপাচার ও জাল টাকা প্রস্তুতকারী এ গ্রুপের প্রধান শামিমা নূর পাপিয়া এবং তার স্বামী মফিজুর রহমান সুমন তার সহযোগী। এ ছাড়া সাব্বির খন্দকার ও শেখ তায়্যিবা তার ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস)।

র‌্যাব জানায়, শামিমা নূর পাপিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে পেশায় একজন ব্যবসায়ী। তেজগাঁও এফডিসি গেট সংলগ্ন এলাকায় অংশীদারিত্বে তার একটি ‘কার একচেঞ্জ’ নামে গাড়ির শোরুম আছে। নরসিংদীতে ‘কেএমসি কার ওয়াশ অ্যান্ড অটো সলিউশন’ নামক একটি গাড়ি সার্ভিসিং সেন্টার আছে। এ সব ব্যবসার আড়ালে তিনি অবৈধ অস্ত্র, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত। সমাজসেবার নামে নরসিংদী এলাকায় অসহায় নারীদের আর্থিক অসক্ষমতার সুযোগ নিয়ে সহযোগিতার নামে তাদের অনৈতিক কাজে লিপ্ত করেন। বছরের অধিকাংশ সময় তিনি নরসিংদী ও রাজধানীর বিভিন্ন বিলাসবহুল হোটেলে অবস্থান করেন এবং সেখান থেকে তার ও তার স্বামীর ব্যবসায়িক অংশীদারদের অনৈতিক কাজে নারী সবরবরাহ করেন। নরসিংদী এলাকায় চাঁদাবাজির জন্য তার একটি ক্যাডার বাহিনী আছে।

এ ছাড়া তার স্বামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় অবৈধ অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি নরসিংদী ও ঢাকায় একাধিক বিলাসবহুল বাড়ি, গাড়ি, ফ্ল্যাট, প্লটসহ বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের মালিক হয়েছেন। মফিজুর রহমান সুমন পেশায় একজন ব্যবসায়ী। থাইল্যান্ডে তার বারের ব্যবসা আছে। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অস্ত্র, মাদককারবার, চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত সুমন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা বিচারাধীন। তিনি স্ত্রীর মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসহায় ও সহজ-সরল নারীদের রাজধানীতে নিয়ে আসেন এবং তাদের অনৈতিক কাজে লিপ্ত হতে বাধ্য করেন। সাব্বির খন্দকার হচ্ছেন পাপিয়ার ব্যক্তিগত সহকারী, দূর সম্পর্কের ভাইও। তিনি পাপিয়ার ব্যক্তিগত সম্পত্তির হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখাশোনা করেন। তার সব অবৈধ কারবারে প্রত্যক্ষ সহযোগিতাসহ অর্থপাচারের দোসর। আর শেখ তায়্যিবা হচ্ছেন মফিজুর রহমান সুমনের ব্যক্তিগত সহকারী। তিনি মফিজুর রহমান সুমনের ব্যক্তিগত সম্পত্তির হিসাব রক্ষণাবেক্ষণ ও দেখাশোনা করেন। পাশাপাশি তার সব অবৈধ কারবারসহ অর্থপাচারে সহযোগিতা করেন। পাপিয়া ও শেখ তায়্যিবা নিজেদের মডেল হিসেবে পরিচয় দেন। তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে র‌্যাব।

এমজে/