নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন : খালেদা জিয়া

নির্বাচন ও আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন : খালেদা জিয়া

ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর (জাস্ট নিউজ) : আন্দোলন ও নির্বাচনকে সামনে রেখে আগামীতে কর্মসূচি দেয়ার ইঙ্গিত দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ দলের নেতা-কর্মীদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। রবিবার বিকালে রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে দলের মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এই আহবান জানান।

বেগম খালেদা জিয়া বলেন, দেশে গণতন্ত্র নেই, দেশে নির্বাচন হয় না। আমরা আজকে বলতে চাই, আগামী দিনে যে কর্মসূচি আসবে সেজন্য সকলকে প্রস্তুত হতে হবে। আন্দোলন, সংগ্রাম ও নির্বাচন সবকিছুর জন্য আপনাদের প্রস্তুতি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি আমরা সফল হবো। আবারো বিএনপির মাধ্যমে এদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে।

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহবান রেখে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, মুক্তিযোদ্ধা ভাইদের বলব, আপনাদের বয়স হয়েছে, অভিজ্ঞতা আছে। আপনারা দেশ স্বাধীন করেছিলেন। সেই স্বাধীন দেশ আওয়ামী লীগের পরাধীনতার শৃঙ্খলে বন্দি। বাংলাদেশকে তাদের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করতে হবে। এই শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে হলে জেগে উঠতে হবে, সবাই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। অন্যান্য রাজনৈতিক দল যারা আছেন, তাদের সকলকে আমি আহবান জানাবো, আসুন আমরা-আপনারা ভুক্তভোগী। তাই আমরা সকলে মিলে প্রতিবাদ করি, গণতন্ত্রের সংগ্রাম করি, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠা করি-এটাই হোক আমাদের শপথ।

একাদশ নির্বাচনের আগেই সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান বেগম খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে ভোট কেন্দ্রে জনগণকে আসতে দেয়া হয় না, তারা ভোটারবিহীন নির্বাচন করে। হাসিনার অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। আমাদের দাবি হচ্ছে, আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু করতে হলে শেখ হাসিনাকে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। শেখ হাসিনা বা আওয়ামী লীগকে রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।

সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে ক্ষমতাসীন দলের এই বক্তব্য খণ্ডন করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, তারা (ক্ষমতাসীন) কথায় কথায় সংবিধানের কথা বলে। সংবিধান তো তারাই লঙ্ঘন করেছেনি। কারণ ১৫৪ জন বিনা ভোটে এমপি হয়েছেন। আর বাকিরা ৫%ও ভোট পায়নি। এই সংসদ কী সংসদ আছে নাকি। এই সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এই সংসদ নির্বাচিত নয়। এদের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না, হবে না। সেজন্য নিরপেক্ষ সরকার দরকার। যেহেতু তারাই নির্বাচিত সরকার নয়, তাহলে তারা কী করে দাবি করবে যে, নির্বাচিত সরকার না হলে সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে। ক্ষমতাসীনরাই তো সংবিধান লঙ্ঘন করে ফেলেছে।

গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের উদ্যোগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের এই সমাবেশ হয়। এতে সারাদেশ থেকে রনাঙ্গনে শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ উপলক্ষে মহানগর নাট্যমঞ্চের মিলনায়তন ও এর বহিরাঙ্গন ব্যানার-ফেষ্টুন ও মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিকৃতি দিয়ে বর্ণিলভাবে সাজানো হয়। সকালে অনুষ্ঠানস্থলে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও ৭ বীর শ্রেষ্ঠের স্মরণে ৭টি কবুতর মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধা দলের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন-২০১৭-এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এই সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত সভাপতি ও সাদেক আহমেদ খান সাধারণ সম্পাদক পুননির্বাচিত হন।

এক ব্যক্তির শাসনে দেশ চলছে অভিযোগ করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, একদলীয় বাকশালের দিকে দেশকে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে। এখন এক ব্যক্তির শাসন চলছে। এক ব্যক্তি যা বলবেন সেটাই সবকিছু। তার নির্দেশই পৌঁছে দেয়া হচ্ছে সব জায়গায়। কাজে আজকে আওয়ামী লীগের লোকজন যত অপরাধই করুক না কেনো, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয় না, তাদের কোনো শাস্তি হয় না। আর বিএনপির লোকজন কোনো অপরাধ না করলেও একটা মামলা দিয়ে বাড়ি-ঘর থেকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। গুম করা হবে, খুন করা হবে। আমি আদালতের যাই, সেখান থেকে আমাদের কর্মীদের ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কারাগারগুলো আমাদের কর্মী দিয়ে ভর্তি করা হয়েছে।

বেগম খালেদা জিয়া আরো অভিযোগ করে বলেন, তারা (ক্ষমতাসীন) একতরফা সমাবেশ করছে। অন্যকোনো রাজনৈতিক দলকে তারা সমাবেশ করতে দেবে না, ঘরের ভেতরেও দেবে না। এমনকি বিরোধী দল যারা আছে তারা দলের প্রোগ্রাম করতে চাইলে, সেটাও করতে দেবে না। এর নাম কী গণতন্ত্র? আমরা বলতে চাই, আমরা অশান্তি চাই না। আমরা চাই নির্বাচন করতে। আমরা জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়ে আসতে চাই। আমরা আপনাদের মতো বিনা ভোটে নয়। কাজেই সভা-সমাবেশ করার সুযোগ দিন এবং ঘরে-বাইরে উভয় জায়গায় সুযোগ দিন।আপনার ভোট চাইছেন আর বিএনপি ঘরে বসেও সভা করতে পারবে না-এটা হতে পারে না। এসব বন্ধ করুন।

পদত্যাগকারী প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে জোর করে সরকার পদত্যাগ করিয়ে জুডিশিয়াল ক্যু করেছে বলে অভিযোগ করেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, তিনি (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) পদত্যাগ করতে চাননি। তাকে জোর করা হয়েছে, এমনভাবে তাকে ফোর্স করা হয়েছে তিনি বাধ্য হয়ে দিয়েছেন। এসবের সাথে সম্পূর্ণ সরকার জড়িত। এরা জুডিশিয়াল ক্যু করেছে। এরা তো অপরাধী। এই জুডিশিয়াল ক্যু’র জন্য তাদের বিচার হওয়া উচিৎ।

জনপ্রশাসনে সাম্প্রতিক যুগ্ম সচিব পদ পদোন্নতির প্রসঙ্গ টেনে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, আজকে সচিবালয়ে দেখেন কতজনকে রাতে অন্ধকারে প্রমোশন দেয়া হলো। আজকে সেখানে সব দলীয় লোকজন। আর ভালো ভালো কর্মকর্তা যারা তাদেরকে কিন্তু ওএসডি করে রেখে দেয়া হয়েছে। ফলে এরকম করে থাকতে থাকতে এসময় তাদেরকে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, পুলিশ সার্ভিসেও একই অবস্থা। সেখানে সিনিয়র-জুনিয়র কিছুই মানা হয় না। সেখানে চলছে একতরফাভাবে সব কিছু। দলীয় ও নিজের নিজের দেশের লোকজনকে ঢুকানো। ভালো অফিসারকে ভালো পোস্টিং দেয়া হয় না, তাদেরকে ওএসডি করে রাখা হয়। এভাবে একদিন তাদেরও বাড়ি চলে যেতে হয়।

আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা সেই চেতনা বিশ্বাস করলে দেশে একদলীয় শাসন প্রবর্তন করতো না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো বহুদলীয় গণতন্ত্র।সেজন্য সাধারণ মানুষ আজকে পরিবর্তন চায়। তারা দেশের ভালো কিছু দেখতে চায়।

দ্রব্যমূল্যে উধর্বগতিতে সাধারণ মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন। একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দল ‘লুটপাট’ করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে বলে অভিযোগও করেন তিনি।


আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে বিএনপি কি করতে চায় এর একটি রূপরেখা ‘ভিশন-২০৩০’ কিছুটা মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের পরিচালনায় সমাবেশে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি অলি আহমেদ, বিএনপির সিনিয়র ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক জয়নুল আবেদীন এবং মুক্তিযোদ্ধা দলের মিজানুর রহমান খান, নজরুল ইসলাম খোকা, আবদুল মালেক খান, সামাদ মোল্লা প্রমূখ বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতা সেলিমা রহমান, আহমেদ আজম খান, আমানউল্লাহ আমান, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিব উন নবী খান সোহেল, ফজলুল হক মিলন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, এম এ মালেক, শিরিন সুলতানা, মুক্তিযোদ্ধা দলের আবুল হোসেন, শাহ মো. আবু জাফর, আবু তালেব চৌধুরী, মোকসেদ আলী মুঙ্গলিয়া, মোজাফফর হোসেন, যুব দলের সাইফুল ইসলাম নিরব, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্র দলের রাজীব আহসানসহ অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০৪৮ঘ.)