৬০০ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে ইউরোপ

৬০০ বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে ইউরোপ

 

একসময় ইউরোপের শহরগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত নৈশপ্রহরীরা। মধ্যযুগের শহর ও নগরের বেশিরভাগ ঘরবাড়িই তৈরি করা হতো কাঠ দিয়ে।

কাঠের তৈরি এসব ঘরবাড়ির জন্য প্রধান হুমকি ছিল আগুন। শহরগুলো যে প্রায়ই আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে যেত তার প্রমাণ রয়েছে ইতিহাসের পাতায়। আগুন থেকে বাঁচতে সে সময় নৈশপ্রহরীরা ছিল একমাত্র ভরসা। গড়ে তোলা হয়েছিল প্রহরীদের বিশাল এক নেটওয়ার্ক।

লাখ লাখ না হলেও হাজার হাজার নৈশপ্রহরী ছিল। সারারাত শহরের রাস্তা ও অলিগলিতে টহল দিত তারা। ক্যাথেড্রালের প্রহরীকে মোতায়েন রাখা হতো বেল বাজানোর কাজে। কোথাও একটু ধোঁয়া উঠলেই কিংবা কোথায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই দ্রুত খবর দেয়া ক্যাথেড্রালে। আর তৎক্ষণাৎ শিঙায় ফুঁ দিয়ে শহরবাসীকে জানিয়ে দিত নৈশপ্রহরী।

সেই মধ্যযুগ পার হয়ে এসেছে আধুনিককাল। আধুনিককাল পার হয়ে মানুষ অত্যাধুনিক যুগে এসে দাঁড়িয়েছে। এখন বিজ্ঞানের উৎকর্ষের এ যুগে সেভাবে আর প্রয়োজন নেই নৈশপ্রহরীর। কিন্তু শত শত বছরের সেই ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছে ইউরোপ।
পুরনো আমলের সেই নৈশপ্রহরীর অনুকরণেই এখনও নৈশপ্রহরী ক্যাথেড্রালেই চূড়ায় উঠে হাঁক দেয়। তবে এখন আর কোনো অগ্নিকাণ্ডের সতর্কতা নয়। শুধু ঘণ্টায় সময় সতর্কতা জানিয়ে দেয়।

বর্তমানে ইউরোপের মোট সাতটি বড় শহরে এই ঐতিহ্য টিকে আছে। এর মধ্যে রয়েছে জার্মানির আন্নাবার্গ, সেলি ও নর্ডলিংজেন, ব্রিটেনের রিপন, পোল্যান্ডের ক্রাকো এবং সুইডেনের ইস্তাদ শহর। সুইজারল্যান্ডের লুসানের অন্যতম।

ইউরোপের অন্যতম সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ সুইজারল্যান্ডের লুসান শহরের বাসিন্দা মারকো কারারা। বয়স ৩০-এর কোঠায়। ইউরোপের ৬০০ বছরের ঐতিহ্য এখনও যারা ধরে রেখেছেন তাদের একজন হচ্ছেন মারকো। মাথায় কালো হ্যাট টুপি আর গায়ে শীতের জ্যাকেট। এক হাতে লাঠি, আরেক হাতে ধরা লণ্ঠন। সন্ধ্যার অন্ধকার ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ছুটে যান লুসান ক্যাথেড্রাল বেল টাওয়ারের দিকে। সিঁড়ি বেয়ে বেয়ে উঠে পড়েন একেবারের টাওয়ারের চূড়ায়।

এরপরই লেগে পড়েন নিজের কাজে। মুখ দিয়ে তীব্র আওয়াজ করে সময় জানিয়ে দেন লুজানবাসীদের। প্রত্যেক ঘণ্টায় একবার-এভাবেই রাত ১০টা থেকে ২টা অবধি। গত বছরের ডিসেম্বরে লুসান ক্যাথেড্রালের কাছে এএফপিকে এক সাক্ষাৎকারে মারকো স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে এ কাজের সত্যিকার কোনো প্রয়োজন নেই।

তারপরও প্রাচীন ঐতিহ্যের সঙ্গে খুব ভালোভাবেই সম্পৃক্ত এই শহর। লুসান পৌরসভার সদস্য ডেভিড পেয়োট তার সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ‘ইতিহাসকে বাঁচিয়ে রাখার একমাত্র উপায় এটাই।’
এমজে/