যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম অচলাবস্থার অবসান

যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম অচলাবস্থার অবসান

যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের বরাদ্দ না পেলেও সাময়িকভাবে কাজ চালু করতে রাজি হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ শাটডাউনের অবসান হতে চলছে। এর মাধ্যমে অন্যতম নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন থেকে কিছুটা পিছু হটতে হচ্ছে ট্রাম্পকে।

যুক্তরাষ্ট্রের অর্থবছর শুরু হয় ১ অক্টোবর। তার আগেই বাজেট অনুমোদন করিয়ে নেওয়ার সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকে। কিন্তু সমঝোতার অভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস কখনও কখনও তা পাস করাতে ব্যর্থ হয়। এমন অবস্থায় অস্থায়ী বাজেট বরাদ্দের মধ্য দিয়ে সরকার পরিচালনার তহবিল জোগান দেওয়া হয়। অস্থায়ী এই বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে দুই কক্ষের অনুমোদনসহ প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষরের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের তিন চতুর্থাংশ কার্যক্রম পরিচালনার অর্থ বরাদ্দ করা আছে। বাকি এক চতুর্থাংশের বাজেট ফুরিয়ে যাওয়ায় অচলাবস্থা ঠেকাতে গত ২১ ডিসেম্বর নতুন অস্থায়ী বাজেট বরাদ্দ ছিল অপরিহার্য। তবে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের বরাদ্দ প্রশ্নে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদের মধ্যে সমঝোতা না হওয়ায় সৃষ্টি হয় ‘অচলাবস্থা’। বরাদ্দ কম পড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ১৫টি কেন্দ্রীয় দফতরের মধ্যে ৯টিতে তখন থেকে আংশিক শাটডাউন শুরু হয়। এর ফলে লাখ লাখ সরকারি কর্মচারি বেতন ছাড়া কাজ বা বাধ্যতামূলক ছুটিতে যেতে বাধ্য হয়।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দেয়াল নির্মাণ অর্থায়নের জন্য অনড় অবস্থানে থাকায় দেশটির সরকার ব্যবস্থা বিভক্ত হয়ে পড়ে। হোয়াইট হাউস ও কংগ্রেসের দূরত্ব বাড়ে। এই টানাপড়েনে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘতম শাটডাউন ৩৫ দিনে গড়ায়। শুক্রবার (২৫ জানুয়ারি) ট্রাম্প আগামী তিন সপ্তাহের জন্য সরকার চালু করার বিলে সম্মতি দিলে এই শাটডাউনের অবসান হয়। ডেমোক্র্যাটিক স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির এটা বড় জয়। প্রতিনিধি পরিষদে ডেমোক্র্যাটদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর মাত্র তিন সপ্তাহ আগে স্পিকারের দায়িত্ব নেন তিনি।

সমঝোতা হওয়ার পর ন্যান্সি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের বৈচিত্র্যতা আমাদের সবলতা। কিন্তু আমাদের ঐক্য হলো আমাদের শক্তি। এটাই হয়ত প্রেসিডেন্ট বুঝতে পারেননি।’

শুক্রবার হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে দুপুরে দেওয়া ভাষণে সমঝোতার কথা ঘোষণা দেন। সন্ধ্যায় সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ পরিকল্পনাটি কণ্ঠভোটে পাস করে। পরে উভয় কক্ষই মুলতবী ঘোষণা করা হয়।

সমঝোতার ঘোষণায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘শক্তিশালী দেয়াল বা স্টিলের ব্যারিয়ার নির্মাণের বাইরে সত্যিই আমাদের আর কোনও উপায় নেই। কংগ্রেস যদি কোনও যথাযথ চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারে তাহলে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে সরকার আবারও অচলাবস্থায় পড়বে। অথবা আমি এই জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় আইন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রদত্ত ক্ষমতা ব্যবহার করব।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আরো বলেন, চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারি কার্যক্রমে অর্থায়ন নিশ্চিত হয়েছে। তারা পূর্ণ মজুরি পাবেন। এসময় তিনি ‘রাজনৈতিক জটিলতায়’ যেসব সরকারি কর্মচারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের ‘অভাবনীয় দেশপ্রেমিক’ আখ্যা দেন। শুক্রবার মধ্যরাতে বিলটিতে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। এতে করে ৮ লাখ সরকারি কর্মীর উদ্বেগের অবসান হলো। শাটডাউনের সময় বেতন না পাওয়া এসব কর্মীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করা হবে। এই চুক্তি অনুসারে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকার চালু থাকবে। এর মধ্যে সর্বদলীয় একটি কমিটি গঠন করা হবে যারা সীমান্ত সুরক্ষার জন্য ব্যয় নিরূপণের জন্য।

এমআই