নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে সন্ত্রাসী হামলা

ভয়াল সতের মিনিট

ভয়াল সতের মিনিট

শুক্রবার ভয়ঙ্কর এক হামলা প্রত্যক্ষ করেছে ক্রাইস্টচার্চ। সেখানে দুইটি মসজিদে ঢুকে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় জঙ্গি বন্দুকধারীরা। মুসল্লিদের মৃত্যু নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে গুলিরবৃষ্টি। কয়েক মিনিটের মধ্যেই প্রাণ হারান ৪৯ জন। ভাগ্যক্রমে প্রাণ বাঁচাতে পারলেও আহত হয়েছেন আরো অন্তত দু’ডজন মানুষ।

দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে প্রথম গোলাগুলি শুরু হয়। এক যুবক গাড়ি চালিয়ে এসে ক্রাইস্টচার্চ মসজিদের সামনে নামেন। গাড়ি থেকে শোনা যাচ্ছিল গানের সুর। খুবই স্বাভাবিকভাবে নেমে গাড়ির পেছনে থাকা অস্ত্রগুলে থেকে বেছে নেন একটি স্বয়ংক্রিয় বন্দুক। মাথায় রাখা গোপন ক্যামেরায় তার এসব কর্মযজ্ঞ সরাসরি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রচারিত হচ্ছিল। অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবে ঘটে চলা এসব ঘটনায় কেউই ধারণা করতে পারেন নি যে, ওই যুবক কি নৃশংস ঘটনা ঘটাতে চলেছেন। স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হাতে এগিয়ে চলেন মসজিদের দিকে।

এই সময়ে ভেতরে জুমার নামাজ চলছিল। দরজা থেকেই নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকেন তিনি। সামনে যাকে পান, তাকেই গুলি করে ভূপাতিত করছেন। কেউ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বেঁচে আছেন, এমনটা বুঝতে পারলে আবারো তার ওপর গুলি চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেন তিনি। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে শুরু হওয়া ওই হত্যাযজ্ঞ চলে ১৭ মিনিট ধরে। নিচে ওই হামলার ঘটনাপ্রবাহ তুলে ধরা হলো।

১.৪০: সেন্ট্রাল ক্রাইস্টচার্চে প্রথম গুলির শব্দ পাওয়া যায়। এক ব্যক্তি স্বয়ংক্রিয় বন্দুক হাতে মসজিদে প্রবেশ করেন ও ভেতরে থাকা মানুষদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকেন।

২.১১: ক্রাইস্টচার্চে অভিযান শুরু করে পুলিশ। তখন ডিনস এভিনিউয়ের মাসিদ আল নুর মসজিদের বাইরের প্রাঙ্গণ থেকে গোলাগুলির শব্দ শোনা যাচ্ছিল।

২.১৭: ক্রাইস্টচার্চের একাধিক স্কুল বন্ধ করে দেয়া হয়। মসজিদের ভেতরে অবস্থানকারী ব্যক্তিরা গুলিবিদ্ধ ও রক্তস্নাত অবস্থায় বের হয়ে আসতে শুরু করে।

২.৪৭: প্রাথমিকভাবে জানানো হয়, মসজিদে বন্দুকধারীর গুলিতে ৬ জন নিহত হয়েছেন। তিন জনের অবস্থা সংকটাপন্ন ও অন্য তিনজন গুরুতর আহত।

২.৫৪: পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ বলেন, পরিস্থিতি খুবই গুরুতর ও এর অবনতি ঘটছে। তিনি স্থানীয় অধিবাসীদের ঘরের মধ্যে অবস্থান করতে ও রাস্তা এড়িয়ে চলতে বলেন।

৩.১২: নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আর্দার্ন তার নির্ধারিত কর্মসূচি বাতিল করেন।

৩.২১: ক্রাইস্টচার্চ সেন্ট্রাল সিটি কাউন্সিল শহরের বেশিরভাগ ভবন তালাবদ্ধ করে রাখে।

৩.৪০: পুলিশ জানায়, ক্রাইস্টচার্চের মসজিদগুলোতে একই সময়ে একাধিক হামলা চালানো হয়েছে।

৩.৪৫: ঘটনাস্থলে আবারো গোলাগুলির খবর আসে। এটা অব্যাহতভাবে চলতে থাকে।

৩.৫৯: হামলার শিকার প্রায় ৩০০ জন মসজিদের ভেতরে অবস্থান করছিল।

৪.০০: ঘটনাস্থল থেকে এক ব্যক্তিকে আটক করে কাস্টডিতে নেয় পুলিশ। কিন্তু সতর্কবার্তা জারি করা হয় যে, আরো হামলাকারী থাকতে পারে। পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ নিউজিল্যান্ডের মুসলিমদেরকে তাদের স্থানীয় মসজিদ থেকে দূরে থাকার অনুরোধ করেন।

৪.১০: প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আর্দার্ন দিনটিকে ‘নিউজিল্যান্ডের সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনগুলোর একটি’ বলে আখ্যা দেন।

৫.২৭: আরেকটি মসজিদে গোলাগুলির খবর পাওয়া যায়। প্রত্যক্ষদর্শী একজন জানান, লিনউডের মসজিদের একাধিক বন্দুকধারী গুলি করতে থাকে। একজন মুসলিম দৌড়ে ওই বন্দুকধারীদের থেকে আত্মরক্ষা করেছেন।

৫.৩১: সন্দেহভাজন ৪ ব্যক্তিকে পুলিশ কাস্টডিতে নেয়া হয়। এদের মধ্যে এক নারীও ছিলেন। এ সময় লিনউডে একাধিক ব্যক্তির হতাহতের খবর পাওয়া যায়।

৭.০৭: বন্দুকধারীরা এআর-১৫ রাইফেলের ব্যবহার করেছে বলে জানায় পুলিশ।

৭.২০: খবর পাওয়া যায়, বন্দুকধারীরা আল-হুদা মসজিদেও হামলার পরিকল্পনা করছে। পরে ডানেডিন স্ট্রিট বন্ধ করে দেয়া হয়।

৭.২৬: প্রধানমন্ত্রী জাসিন্দা আর্দার্ন অন্তত ৪০ জনের নিহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

৭.৩৪: আহত ৪৮ ব্যক্তি চিকিৎসাধীন আছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়।

৭.৪৬: ব্রিটমার্ট রেল স্টেশনে এ পরিত্যক্ত ব্যাগ পাওয়া যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে স্টেশন থেকে সবাইকে বের করে দেয়া হয়। পরে ওই ব্যাগে সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায়নি।

৮.৩৫: নিউজিল্যান্ড সরকার নিশ্চিত করে যে, এই প্রথম দেশে এত বড় মাত্রার সন্ত্রাসী কার্যক্রম দেখলো।

৯.০৩: পুলিশ কমিশনার মাইক বুশ জানান, মৃতের সংখ্যা ৪৯ জনে পৌঁছেছে। তিনি আরো জানান, হত্যাকাণ্ডের দায়ে এক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাকে শনিবার আদালতে তোলা হবে।

এমআই