মোদিকে চান না গ্রামবাংলার নারীরা

মোদিকে চান না গ্রামবাংলার নারীরা

বিজেপি মানে সহিংসতা আর কুসংস্কার। যেখানে বিজেপি সেখানেই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। গুজরাট, আসাম, ওড়িষা, উত্তরপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা কোথাও আজ বাদ নেই। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর তা আরও বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রতিবছর দেশজুড়ে পরিকল্পিতভাবে শত শত দাঙ্গা বাধানো হয়েছে। সরকারের এক পরিসংখ্যান মতে, ২০১৭ সালে বিভিন্ন রাজ্যে ৮২২টি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে। এতে নিহত হয় ১১১ জন। আর আহত ২ হাজার ৩৮৪ জন। দাঙ্গার ক্ষেত্রে ওই বছর শীর্ষে ছিল সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশ। সেখানে দাঙ্গা হয় ১৯৫টি। নিহত হয় ৪৪ জন। আহত ৫৪২ জন। সেখানে দাঙ্গার ভয়ে সব সময় তটস্থ থাকেন মুসলিমরা।

সেই ভয় এখন গ্রাস করেছে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম বাসিন্দাদের মন। দাঙ্গাভয়ের সঙ্গে যোগ হয়েছে তিন তালাক আইন। সর্বশেষ আদমশুমারি মতে, পশ্চিমবঙ্গে মোট জনসংখ্যা ৯ কোটি ১২ লাখ। এর মধ্যে হিন্দু ৬ কোটি ৪ লাখ। মোট জনসংখ্যার ৭০.৫৩ শতাংশ হিন্দু। মুসলিম জনসংখ্যা ২ কোটি ৪ লাখ। মোট জনসংখ্যার ২৭.০১ শতাংশ। তিন জেলায় এগিয়ে রয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়। মুর্শিদাবাদে মুসলিম জনসংখ্যা ৪৭ লাখ, হিন্দু ২৩ লাখ। মালদায় ২০ লাখ মুসলিম, হিন্দু ১৯ লাখ।

উত্তর দিনাজপুরে ১৫ লাখ মুসলিম, ১৪ লাখ হিন্দু। ভারতের অন্যতম বড় এ রাজ্যে লোকসভার আসন ৪২টি। বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু বর্তমানে রাজ্যে বাড়ছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপির প্রভাব। গত বছরের স্থানীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনে ২০২ আসনের মধ্যে দলটি পেয়েছে মাত্র ২৯টি।

রাজ্যটিতে মুসলিম জনসংখ্যাকে ‘হিন্দুদের জন্য চ্যালেঞ্জ’ দাবি করে প্রভাব বৃদ্ধির সব চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে বিজেপি। তিন তালাক আইনের মতো বিতর্কিত ইস্যু, দাঙ্গা ও ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টির অপকৌশল তাদের প্রধান হাতিয়ার। দলটি ক্ষমতায় আসার পর ইতিমধ্যে কয়েকটি দাঙ্গা হয়ে গেছে। এবারের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ৪২ প্রার্থীর বিপরীতে সব কটি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে দলটি।

লক্ষ্য তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়া। ইতিমধ্যে দলটির প্রার্থীরা নানা বিতর্কিত মন্তব্য ছুড়ে দিয়েছেন।

মালদার দক্ষিণ আসন থেকে বিজেপির প্রার্থী শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও পোস্ট করে বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গে এখন দু-দুটো সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হওয়া দরকার। একটি কালীঘাটে, আরেকটি কোতোয়ালিতে।’ তিনি আরও বলেন, ‘লোকসভায় তিন তালাক বিল পাস হলে এখানকার মুসলিম এমপিরা এর বিরোধিতা করেছিলেন। এটা ন্যক্কারজনক।’

ঠিক একই সময়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবকের সাবেক সদস্য ও মালদা বিজেপির জেলা সভাপতি সঞ্জিত মিশ্রের বক্তব্যে উঠে আসে মুসলিম বিদ্বেষ ও ঘৃণা। হাফপোস্ট ইন্ডিয়াকে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, মালদায় এখন হিন্দুরা সংখ্যালঘু। এ কারণে তারা সবসময় সেখানে ভয়ের মধ্যে থাকে।’

সম্প্রতি গরুর ব্যবসা করার অভিযোগে মালদার এক গ্রামের যুবক আফরাজুল খানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এরপর থেকে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে ভয় আরও দানা বাধছে। জেলার নয়াগ্রামের ৪৫ বছর বয়সী মুনজেরিনা বিবির কণ্ঠে উঠে আসে সেই শঙ্কা।

তিনি বলেন, ‘শুনতে পাই, দেশের প্রত্যেকটা জায়গায় মুসলিমদের পিটিয়ে মারছে মোদি ও তার দলের লোকেরা। এরা যেন আমাদের এখানে না আসতে পারে।’

এমজে/