মোদিকে ৪৯ বিশিষ্টজনের চিঠি

‘জয় শ্রী রাম’ এখন ‘ওয়ার ক্রাই’ ধ্বনি!

‘জয় শ্রী রাম’ এখন ‘ওয়ার ক্রাই’ ধ্বনি!

ভারত জুড়ে বেড়ে চলা গণপিটুনির ঘটনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে খোলা চিঠি দিলেন আদুর গোপালকৃষ্ণ, শ্যাম বেনেগাল, মণি রত্মম, অনুরাগ কাশ্যম, অপর্ণা সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বিনায়ক সেন এর মতো ৪৯ জন খ্যাতনামা বিশিষ্টজন।

চিঠিতে ‘জয় শ্রী রাম’ ধ্বনি নিয়ে বাড়াবাড়িরও অভিযোগ এনে তারা বলেছেন, ‘রাম হল সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের কাছে খুবই পবিত্র, তাই রামের নাম কলুষিত করা বন্ধ হোক। তাদের সকলেরই অভিমত এই স্লোগানটি এখন ‘ওয়ার ক্রাই’ (রণনাদ) এ পরিণত হয়েছে।

গত ২৩ জুলাই মোদিকে উদ্দেশে করে লেখা চিঠিতে বুদ্ধিজীবীরা একজোট হয়ে লেখেন ‘সাম্প্রতিক সময়ে আমাদের এই প্রিয় দেশে একাধিক দুঃখজনক ঘটনা ঘটে চলেছে, যা দেখে শান্তি প্রিয় ও গর্বিত ভারতীয় হিসেবে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন।

আমাদের সংবিধানই বলে যে ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র-যেখানে সমস্ত ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ, বর্ণের মানুষই সমান। তাই সংবিধান অনুযায়ী প্রতিটি ভারতবাসীর সমান অধিকার সুনিশ্চিত করতে হবে।

এরপরই ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (এনসিআরবি) তথ্য উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘মুসলিম, দলিত এবং অন্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা এখনই বন্ধ হওয়া উচিত। এনসিআরবি’র থেকে পাওয়া তথ্যে আমরা যথেষ্ট আতঙ্কিত যে ২০১৬ সালে শুধু দলিতদের ওপরেই ৮৪০ টি হামলা ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু সেই তুলনায় সাজার পরিমাণ নেহাতই কম।

২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত ২৫৪ টি ধর্মীয় পরিচয় ভিত্তিক অপরাধের ঘটনা ঘটেছে। ৯১ জন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন, ৫৭৯ জন ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এক্ষেত্রে ৬২ শতাংশ ঘটনায় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ হামলার শিকার হয়েছেন এবং ১৪ শতাংশ ঘটনায় শিকার হয়েছে খ্রিষ্টানরা। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় ২০১৪ সালের মে মাসে মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ৯০ শতাংশ হামলার ঘটনা ঘটেছে।

চিঠিতে জানানো হয়েছে, ‘প্রধানমন্ত্রী আপনি সংসদে দাঁড়িয়ে এই ধরনের গণপিটুনির ঘটনার নিন্দা করেছেন, কিন্তু শুধু এটাই যথেষ্ট নয়। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? আমরা মনে করি যে এই সমস্ত ক্ষেত্রে অপরাধীদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারা প্রয়োগ করা উচিত এবং তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত।’

চিঠিতে এও বলা হয়েছে ‘জয় শ্রী রাম’ স্লোগান এখন ‘ওয়ার ক্রাই’ (রণনাদ)-এ পরিণত হয়েছে। যার ফলে আইন- শৃঙ্খলা জনিত সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং এই ধ্বনি দিয়ে অনেক গণপিটুনির ঘটনা ঘটে চলেছে। এটা খুবই উদ্বেগের যে ধর্মের নামে সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এটা মধ্যযুগীয় নয়! ভারতে অধিকাংশ মানুষের কাছেই রামের নাম এখনও পবিত্র। তাই এভাবে রামের নামকে কলুষিত করাটা আপনাকে এখনই বন্ধ করতে হবে।

চিঠিতে স্বাক্ষর করা ৪৯ জনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সৌমিত্র চ্যাটার্জি, অপর্ণা সেনের পাশাপাশি পরিচালক গৌতম ঘোষ, অঞ্জন দত্ত, অভিনেতা পরমব্রত চ্যাটার্জি, কঙ্কনা সেন শর্মা, কৌশিক সেন, ঋদ্ধি সেন, গায়ক অনুপম রায়, রূপম ইসলাম, সামাজিক কর্মী বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ, চিকিৎসক তাপস রায় চৌধুরী ও শিবাজী বসুর মতো বিশিষ্টরা।

যদিও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, অসহিষ্ণুতা নিয়ে বিদ্বজনেদের অভিযোগ ভিত্তিহীন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিশান রেড্ডি রাজ্যসভার অধিবেশনে জিরো আওয়ারে জানান, ‘সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে কেন্দ্র। দেশজুড়ে আগের চেয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা কমেছে।’

এসময় পরিসংখ্যান দিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘২০১৩ সালে দেশে ৮২৩ টি সহিংসতার ঘটনা ঘটেছিল, ২০১৮ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭০৮।’

এমআই