কাশ্মীরে গণগ্রেফতার বহু পরিবার জানে না সন্তান কোথায়

কাশ্মীরে গণগ্রেফতার বহু পরিবার জানে না সন্তান কোথায়

জম্মু-কাশ্মীরে অব্যাহতভাবে গণগ্রেফতার চলছে। যাকে খুশি তাকে আটক করছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী। উপত্যকার স্বায়ত্তশাসন বাতিলের পর গত তিন সপ্তাহে সাঁড়াশি অভিযানে কয়েক হাজার কাশ্মীরিকে আটক করা হয়েছে। 

সাবেক দুই মুখ্যমন্ত্রীসহ খ্যাতনামা রাজনীতিক, আইনজীবী ও ব্যবসায়ীসহ সমাজের সব শ্রেণির লোক রয়েছে এই তালিকায়। আটক ব্যক্তিদের বেশির ভাগই তরুণ। কাশ্মীরের কারাগারগুলোয় তিলধারণের ঠাঁই নেই।

অনেককেই কাশ্মীরের বাইরে উত্তরপ্রদেশের লক্ষ্ণৌ, রায়বেরেলি ও আগ্রার কারাগারগুলোয় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোনো অভিযোগ ও বিচার ছাড়াই বিতর্কিত জননিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। কারাগারগুলোয় কাউকে যেতে দেয়া হচ্ছে না।

বহু পরিবারই জানে না নিরাপত্তা বাহিনী তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের সন্তানদের কোথায় রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।

এএফপি ও এপির প্রতিবেদন মতে, উপত্যকাজুড়ে এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ১০০ জনকে গ্রেফতার করেছে নিরাপত্তা বাহিনী। ৬০৮ জনের বিরুদ্ধে বিতর্কিত জননিরাপত্তা আইনে মামলা দেয়া হয়েছে। তাদের প্রায় সবাইকেই উপত্যকার বাইরে উত্তর প্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের নানা জেলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

শ্রীনগরের নাসির সেই হতভাগাদের একজন। চলতি সপ্তাহে তানভির শেখ নামে ১৭ বছর বয়সী কিশোরকে আটকের জন্য তার বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ।

দরজায় একটি মাত্র টোকা দিয়েই হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়ে। দরজা-জানালা দিয়ে এ ঘরে ও ঘরে উঁকিঝুঁকি মেরে তানভিরকে খুঁজতে থাকে।

তানভিরের মা মরিয়ম বলেন, ‘ঘরে আমার যুবতী মেয়ে রয়েছে। ঘুম থেকে তাদের টেনে তোলা হয়। আমি পুলিশ কর্মকর্তাদের জিজ্ঞেস করলাম, এভাবে জোর করে কারও ঘরে ঢোকা যায় কি না। পরিবারের তথ্যমতে, তানভির সেদিন ঘরে ছিল না। তার বদলি চাচা নাসিরকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। তানভিরকে কেন আটক করতে চায়, তারও ব্যাখ্যা দেয়নি তারা।

ধ্বংসের মুখে কাশ্মীরের পর্যটন শিল্প : জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরের ডাল লেকের পাড়ের শৈল্পিক কারুকাজে সুশোভিত হাউসবোটগুলো বছরের এই সময়টাতে স্বাভাবিকভাবেই পর্যটকে ঠাসা থাকত।

কিন্তু ভূস্বর্গ খ্যাত এই উপত্যকার স্বায়ত্তশাসন ও বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নেয়ার পর গত তিন সপ্তাহ ধরে একেবারেই খালি। কিছুদিন আগেও যেসব রাস্তাঘাট স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটকের পদভারে গমগম করত সেই একই জায়গা এখন মরুভূমির মতো পড়ে আছে। মোড়ে মোড়ে কাঁটাতারের বেড়া, নিরাপত্তা বাহিনীর তল্লাশি চৌকি আর লাখ লাখ সেনা-পুলিশের অবিরাম টহল। নেমে এসেছে স্থবিরতা। পরিণাম ধ্বংসের মুখে এক সময়ের সমৃদ্ধ পর্যটন শিল্প।

বিপর্যস্ত কাশ্মীরের অর্থনীতি। পর্যটক সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে আসায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এএফপির এক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। জম্মু-কাশ্মীরকে যেন প্রকৃতি সাজিয়েছে তার নিজের মতো করে।

সুন্দর এ রাজ্য সারা বিশ্বের মানুষের কাছে ভ্রমণের জন্য অত্যন্ত জনপ্রিয় স্থান। শুধু ভারতের মুকুট হিসেবেই নয়, সারা বিশ্বের মানুষের কাছে ভূস্বর্গ হিসেবে পরিচিত জম্মু-কাশ্মীর। অঞ্চলটির পাহাড়, ঝরনা ও তুষারপাতের জন্য পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হলেও অন্যান্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও বিমোহিত করে তাদের। অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতি বছর দেশ-বিদেশের লাখ লাখ পর্যটক এখানে ছুটে আসেন।

ব্রিটিশ আমল থেকে কাশ্মীর একটা আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র। ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান ভাগের পর এর জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পায়। কিন্তু কাশ্মীরে ভারতের কঠোর দমনপীড়নের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৮৯ সালে সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন শুরু হওয়ার থেকে ধীরে ধীরে পর্যটনে ভাটা পড়তে থাকে।

এরপরও এক হিসাবে ২০১২ সালে ‘প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড’ খ্যাত কাশ্মীরে ১৩ লাখ পর্যটক ছিল। সংঘাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমতে কমতে ২০১৮ সালে ৮ লাখ ৫০ হাজারে এসে ঠেকে। কিন্তু চলতি বছর পর্যটক বাড়ার সম্ভাবনা ছিল।

এমজে/