আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ-ভাঙচুরে বন্ধ রেল, বিচ্ছিন্ন পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলা

আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ-ভাঙচুরে বন্ধ রেল, বিচ্ছিন্ন পশ্চিমবঙ্গের কয়েকটি জেলা

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে টানা চারদিন ধরে বিক্ষোভ, ভাঙচুর এবং অবরোধের জেরে অশান্ত পশ্চিমবঙ্গ। বিক্ষোভকারীদের মূল লক্ষ্যই যেন গণপরিবহন ব্যবস্থা। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেল। রাজ্যের উত্তর এবং দক্ষিণ অংশের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রাজ্যের রেল যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে একাধিক স্টেশন চত্বরে চলছে অবাধে ভাঙচুর। ট্রেনের কামরা পর্যন্ত পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, পশ্চিমবঙ্গের মালদহের পর থেকে ভালুক রোড-হরিশচন্দ্রপুরের পর জায়গায় জায়গায় রেল লাইন উপড়ে ফেলা হয়েছে। যার ফলে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গোটা উত্তরবঙ্গ।

সড়ক পথেও চলছে ‘তাণ্ডব’। সরকারি-বেসরকারি বাসে ভাঙচুর হচ্ছে। তারপর আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাসে। রেল এবং সড়ক পথে এই তাণ্ডবের জেরে যাত্রীরা যেমন ভোগান্তিতে পড়ছেন, তেমনই এই পরিস্থিতিতে মহাবিপদে পশ্চিমবঙ্গের পড়েছেন ব্যবসায়ীরাও। লরি-ট্রেন আটকে যাওয়ায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পরিবহনেও আশঙ্কা চরমে।
পশ্চিমবঙ্গ রেল সূত্র জানাচ্ছে, এই আন্দোলনের জেরে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

আজিমগঞ্জ-নিউ ফারাক্কা, কৃষ্ণনগর-লালগোলা, নলহাটি-আজিমগঞ্জ, শিয়ালদহ-বজবজ, শিয়ালদহ-ডায়মন্ড হারবার লাইনে ট্রেন চলাচল মুখ থুবড়ে পড়েছে। কবে থেকে স্বাভাবিকভাবে ট্রেন চালানো যাবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না রেল কর্তৃপক্ষ।

ভালুকা এবং হরিশচন্দ্রপুরের পর বিভিন্ন জায়গায় রেলের ফিসপ্লেট ও প্যান্ড্রোল ক্লিপ খুলে রেললাইন উপড়ে ফেলেছেন আন্দোলনকারীরা। বিভিন্ন জায়গায় রেলের প্যানেল বোর্ড ভাঙচুর করা হয়েছে। যার ফলে সিগন্যাল ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে মালদহের পর আর উত্তরবঙ্গে ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। সোমবারও দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেসসহ উত্তরবঙ্গগামী ২০টি ট্রেন বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, লাইনের কোথায় কী অবস্থা রয়েছে, তা খতিয়ে না দেখে ট্রেন চালানো সম্ভব হবে নয়।

নিউ জলপাইগুড়ির পর থেকে মালদহ পর্যন্ত লাইনে কোথায় কী সমস্যা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাওয়ার পরে তবেই উত্তরবঙ্গগামী ট্রেন চালানো হবে।

পূর্ব রেলের প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা নিখিল চক্রবর্তী জানান, রামপুরহাট-পাকুড় এবং আজিমগঞ্জ নিউ ফারাক্কা হয়ে হাওড়া-শিয়ালদহের সঙ্গে উত্তরবঙ্গে ট্রেন চালাচল করে। ওই পথে মালদহ পর্যন্ত যদিও ট্রেন যেতে পারে। কিন্তু তারপর আর ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না।

পশ্চিমবঙ্গের রেল সূত্র বলছে, লাইন উপড়ে ফেলা হয়েছে বহু জায়গায়। ফলে ট্রেন চালাতে গিয়ে যদি বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তার দায় এসে পড়বে রেলের উপরেই। সে কারণেই ট্রেন চালানো হচ্ছে না। ওই সূত্রটির দাবি, শুধুমাত্র কৃষ্ণপুর এবং লালগোলা স্টেশনে দূরপাল্লা, ইএমইউ এবং যাত্রীরা মিলিয়ে একাধিক ট্রেনের মোট ৫২টি কোচে আগুন লাগানো হয়েছে।

সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আজিমগঞ্জ-নিউ ফারাক্কা শাখা। ওই শাখার নিমতিতা, সুজনিপাড়া, ধুলিয়ান গঙ্গা, নওয়াপাড়া, বাসুদেবপুর, মণিগ্রাম স্টেশনে ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। উপড়ে ফেলা হয়েছে সাতটি লেভেল ক্রসিং গেট। কৃষ্ণনগর-লালগোলা শাখার লালগোলা, কৃষ্ণপুর, বেলডাঙা, সারগাছি, রেজিনগর স্টেশনও ক্ষতিগ্রস্ত। নলহাটি-আজিমগঞ্জ শাখার বারালা স্টেশনেও ভাঙচুর চলে। শিয়ালদহ-বজবজ শাখার আক্রা স্টেশন মাস দু’য়েক আগে সাজানো হয়েছিল। '

রবিবারের তাণ্ডবের জেরে সব গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শিয়ালদহ-ডায়মন্ড হারবার শাখার দেউলা স্টেশনেও চলেছে ভাঙচুর। সব ট্রেন বাতিলের জেরে শুধু উত্তরবঙ্গের মানুষই বিপদে পড়েছেন এমন নয়। আসাম, সিকিম, ত্রিপুরার-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গেও পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বাতিলের তালিকায় রয়েছে গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের মতো বহু ট্রেনও। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

এমজে/