হিন্দুত্ববাদীদের পেশি প্রদর্শনের পর বিক্ষোভ বেড়েছে

হিন্দুত্ববাদীদের পেশি প্রদর্শনের পর বিক্ষোভ বেড়েছে

ভারতীয় বর্ণবাদী ও মুসলমানবিদ্বেষী নাগরিকত্ব আইন বাতিলের দাবিতে বৃহস্পতিবারও হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছেন। এর একদিন আগে সরকারপন্থী কট্টর হিন্দুরা ঘোড়া, ঢোল ও লাঠিসোটা নিয়ে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করেছেন।

গত দুই সপ্তাহের বিক্ষোভে পুলিশের নৃশংসতায় এখন পর্যন্ত ২৭ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দেশজুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ২০১৪ সালে বিপুল ব্যবধানে জয়ী হয়ে ক্ষমতার আসার পর হিন্দুত্ববাদী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।-খবর এএফপির

পার্শ্ববর্তী তিন মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অমুসলিমদের নাগরিকত্ব দিতে এই আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। ভারতকে একটি খাঁটি হিন্দু রাষ্ট্রে রূপ দেয়ার বড় পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই এটি করা হয়েছে বলে সমালোচকদের দাবি।

জাতীয় নাগরিকত্ব নিবন্ধনের একজোড়া পরিকল্পনার পর ভারতের ২০ কোটি মুসলমানকে কোণঠাসা করতেই এতসব আয়োজন বলে দেশে ও দেশের বাইরে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

বুধবার হিন্দু কট্টরপন্থী একটি গোষ্ঠীর কয়েক হাজার কর্মী লাঠিসোটা নিয়ে উত্তরাঞ্চলীয় শহর হায়দরাবাদে একটি পদযাত্রার আয়োজন করে। এ সময় তারা মোদি সরকারের প্রতি নিজেদের সমর্থন ব্যক্ত করেছেন।

হিন্দুদের প্রভাব বিস্তারে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় যুদ্ধংদেহী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ (আরএসএস)। মোদিও এই সংগঠনের আজীবন সদস্য। ঢোল ও ভেঁপু বাজিয়ে এদিন তারা রাস্তায় নিজেদের পেশি প্রদর্শন করেন।

বিক্ষোভ শুরু হওয়ার আগেই এই পদযাত্রার আয়োজন করা হয়েছে। দেখা গেছে, আরএসএসের স্বেচ্ছাসেবীরা গান গেয়ে, ঘোড়ায় চড়ে, লাঠির খেলা দেখিয়ে নিজেদের শক্তি জাহির করেন।

সাম্প্রতিক নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভে লোকসংখ্যা কমে গেলেও তারা রাস্তা ছাড়ছেন বলে মনে হচ্ছে না। অর্থনৈতিক রাজধানী মুম্বাইয়ে বৃহস্পতিবার আড়াই হাজার বিক্ষোভকারী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে নিজেদের ক্ষোভ জানিয়েছেন।

পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর কলকাতায়ও প্রতিবাদকারীদের দেখা গেছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর কর্নাটকে কয়েকশ মুসলমান নারী বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। গত সপ্তাহে সেখানে পুলিশের গুলিতে দুই ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।

অধিকাংশ বিক্ষোভই ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু পুলিশের অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে কখনও কখনও তা সহিংসতায় রূপ নিতে দেখা গেছে।

ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশে ১৯ জনকে হত্যা ও কয়েক হাজার লোককে গ্রেফতার করেছে কর্তৃপক্ষ। এ ছাড়া সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস ও দাঙ্গার অভিযোগে শতাধিক লোকের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে সরকার।

গত এক সপ্তাহের মধ্যে ৫০ লাখ রুপি দিতে ১৩০ জনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। না হলে তাদের সম্পদ জব্দ করে তা নিলামের হুমকি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

মুসলমান অধ্যুষিত উত্তরপ্রদেশে শুক্রবারও বিক্ষোভ হতে যাচ্ছে। রাজ্যটির বড় একটি অংশে মোবাইল ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।

এমজে/