করোনাভাইরাস: ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়ায় জরুরি অবস্থা

করোনাভাইরাস: ওয়াশিংটন, ক্যালিফোর্নিয়ায় জরুরি অবস্থা

নতুন করোনা ভাইরাসে বা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাওয়ার পর ওয়াশিংটন ও ক্যালিফোর্নিয়াতে স্বাস্থ্য বিষয়ক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে ক্যালিফোর্নিয়াতে প্রথমবারের মতো ৭১ বছর বয়সী একজন মারা গেছেন। এর ফলেই সেখানে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।

এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে এ ভাইরাস সংক্রমণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১১। এর মধ্যে ১০ জনই ওয়াশিংটনে মারা গেছেন। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের ১৬ রাজ্যে কমপক্ষে ১৫০ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলছে, ক্যালিফোর্নিয়ার সাক্রামেন্টোতে মৃত ব্যক্তির বয়স ৭১ বছর। তিনি একটি হাসপাতালে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ছিলেন। একটি প্রমোদতরীতে করে ভ্রমণে বেরিয়েছিলেন তিনি।

ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেখান থেকে সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারেন। গত মাসে তিনি প্রিন্সেস ক্রুজ নামের একটি প্রমোদতরীতে করে সফর করেছেন মেক্সিকো। তারপর তিনি সান ফ্রান্সিসকোতে নামেন। তার দেহে করোনা ভাইরাস পাওয়ার পর ওই প্রমোদতরীকে সান ফ্রান্সিসকো বন্দরে ফেরত যেতে বলা হয়েছে। এই প্রমোদতরীটি পরিচালনা করে কার্নিভাল নামে একটি সংস্থা। তাদের পরিচালিত ডায়মন্ড প্রিন্সেস প্রমোদতরীকে গত মাসে জাপানে কোয়ারেন্টাইন করে রাখা হয়েছিল। এর কয়েক ডজন আরোহীর দেহে করোনা পজেটিভ পাওয়ার পর এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়। ওদিকে বুধবার পুরো যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাস সনাক্তকরণ পরীক্ষার ক্ষেত্র বিস্তৃত করেছে হোয়াইট হাউজ।

সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা কমপক্ষে ৯২০০০। এর মধ্যে ৮০ হাজারের বেশি আক্রান্ত হয়েছেন চীনে। মারা গেছেন কমপক্ষে ৩০০০। এর মধ্যে বেশির ভাগ মারা গেছেন চীনে। বাকিরা মারা গেছেন ইরান, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া সহ বিভিন্ন দেশে। মার্কিন কর্তৃপক্ষ বলছে, করোনা ভাইরাস দ্রুত গতিতে ছড়িয়ে পড়ছে টেক্সাস ও নেব্রাসকাতে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প করোনা পরিস্থিতির দায়িত্ব দিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে। ফলে বুধবার মাইক পেন্স বলেছেন, যদি কোনো চিকিৎসক কোনো মার্কিনিকে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দেন তাহলে তাকে এই পরীক্ষা করাতে হবে। তিনি আরো বলেছেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে অন-ক্যামেরা ব্রিফিং করবে হোয়াইট হাউজ। তবে এই ভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন ধীর গতিতে অগ্রসর হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন কিছু স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকর্তা।

মাইক পেন্স বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সেন্টার টেস্ট করার ওপর বিদ্যমান বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করবে। নতুন নির্দেশনা দেবে যাতে টেস্ট দ্রুততর করা হয়, যারা আশঙ্কা করছেন করোনা আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। তিনি আরো বলেন, এ নিয়ে আমি কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, হাল্কা লক্ষণ দেখা দিলে তাতে সবাইকে টেস্ট করানো উচিত নয়। তবে আমরা এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দিচ্ছি। তাহলো চিকিৎসক নির্দেশ দিলেই মার্কিনিরা পরীক্ষা করাবেন। কিন্তু কিভাবে তার এ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হবে তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, সরকারি স্বাস্থ্য বিষয়ক ল্যাবরেটরিগুলো বলছে, এসব পরীক্ষা পদ্ধতিতে তাদের সক্ষমতা বিধিনিষেধে আবদ্ধ। এ ছাড়া টেস্টের খরচ নিয়েও প্রশ্ন আছে। এতে বলা হচ্ছে, যেসব মার্কিনির ইন্সুরেন্স করা নেই তাদের জন্য এই পরীক্ষা করাতে ১০০০ ডলারের বেশি খরচ হতে পারে।

ওদিকে করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বুধবার ৮৩০ কোটি ডলারের জরুরি সহায়তা অনুমোদন করেছে কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদ। এদিন প্রতিনিধি পরিষদে ভোটের সময় ফ্লোরিডার একজন কংগ্রেসম্যান ম্যাট গায়েটজ মুখে গ্যাস মাস্ক পরে প্রবেশ করেন। কিন্তু কেন তা জানা যায় নি। নিউ ইয়র্ক সিটির আশপাশে করোনা ভাইরাস আনাগোনা করছে। ফলে মার্কিন কর্তৃপক্ষ এই ভাইরাসকে মোকাবিলা করার চ্যালেঞ্জ নিয়েছে। ম্যানহাটানে ৫০ বছর বয়সী একজন আইনজীবী এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। এরপর তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকেও করোনা পজেটিভ পাওয়া যায়। এরপর তার এক প্রতিবেশীরও একই অবস্থা পাওয়া যায়। ওই প্রতিবেশী ওই আইনজীবীকে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

ওয়েস্টচেস্টার কাউন্টিতে নিজেরাই কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ১০০০। ফেব্রুয়ারি থেকেই যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেসব বিদেশী চীন সফর করেছেন তাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। ইউএস ট্রাভেল এসোসিয়েশন মঙ্গলবার বলেছে, তাদের আশঙ্কা এ জন্য এখন ও মে মাসের মধ্যে ভ্রমণকারীর সংখ্যা শতকরা ৬ ভাগ কমে যাবে। ২০০৮ সালের অর্থনৈতিক মন্দর পর এটাই হবে সবচেয়ে কম পর্যটকের সংখ্যা। গত বছর প্রায় ৭ কোটি ৯৩ লাখ বিদেশী পর্যটক যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছে।

এখন পর্যন্ত চীনের বাইরে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা দক্ষিণ কোরিয়ায়। বুধবার সেখানে নতুন করে ৫১৬ জন আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে সেখানে মোট আক্রান্ত হয়েছেন ৫৩২৮ জন। মারা গেছেন মোট ৩৫ জন। তবে মৃতের সংখ্যা ইরানে বেশি। সেখানে প্রায় ৬০ জন মারা গেছেন। ওদিকে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত দেশগুলোকে সহায়তার জন্য বিশ্বব্যাংক ১২০০ কোটি ডলার দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।