রাহুলের হালভাঙা নেতৃত্বে পাল ছিঁড়ল কংগ্রেসের

রাহুলের হালভাঙা নেতৃত্বে পাল ছিঁড়ল কংগ্রেসের

মধ্যপ্রদেশের নিয়ন্ত্রণ হারাতে যাচ্ছে কংগ্রেস। রাজ্য ক্ষমতায় কংগ্রেস থাকবে কি থাকবে না- তা নিয়ে আস্থা ভোট আজ।

শনিবার রাতেই কংগ্রেসের কমলনাথ সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের নির্দেশ দেন রাজ্যপাল লালজি ট্যান্ডন। সোমবার থেকেই বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন শুরু হবে।

শনিবার রাজ্যপালের কাছে এমন আর্জিই জানান বিজেপি নেতৃত্ব। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল যান রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে।

সেদিন মাঝ রাতেই কমলনাথ সরকারকে আস্থা ভোটের নির্দেশ দেন রাজ্যপাল। আস্থা ভোটের পরিণতি কী হবে? কাদের দখলে যাবে মধ্যপ্রদেশের কুর্সি- এই সহজ অঙ্কটা চোখ বুজেই কষে ফেলা যায়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

মধ্যপ্রদেশ নিয়ে টালমাটাল অবস্থা না কাটতেই গুজরাটেও সেই একই পাঁকে পড়েছে কংগ্রেস। রাজ্যসভা নির্বাচন যখন শিয়রে, ঠিক সেই সময় রাজ্য বিধানসভা থেকে কংগ্রেসের পাঁচ বিধায়ক ইস্তফা দিলেন।

রোববার স্পিকার রাজেন্দ্র সূর্যপ্রসাদ ত্রিবেদীর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন তারা। পদত্যাগের কথা স্বীকার করেনি কংগ্রেস। ১৮২ আসনের গুজরাট বিধানসভায় বিজেপির দখলে রয়েছে ১০৩টি আসন। ৭৩টি আসন রয়েছে কংগ্রেসের। বিজেপির তরফে এখনও রাজ্যসভার জন্য তিনজনকে মনোনীত করা হয়েছে। কংগ্রেস থেকেও তিনজন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। গুজরাট থেকে রাজ্যসভায় চারটি আসনে নির্বাচন হচ্ছে এ বছর।

তার মধ্যে দু’টি জিততে হলে কংগ্রেসের প্রয়োজন ৭৪ জনের সমর্থন। দলের বিধায়করা ছাড়াও নির্দল বিধায়ক জিগনেশ মেবানি তাদের সমর্থন করতে রাজি হয়েছেন।

কিন্তু রাজ্যসভার দুটির বেশি আসন জিততে গেলে বিজেপির ১১১ বিধায়কের সমর্থন প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসের ঘরভাঙা ছাড়া উপায় নেই তাদের।

এ অবস্থায় পাঁচ বিধায়কের পদত্যাগে সমস্যায় কংগ্রেস। রাজস্থান, কর্নাটক, হিমাচল প্রদেশেও একই অশনিসঙ্কেত।

প্রশ্ন উঠছে , কেন একের পর এক দল ছাড়ছেন কংগ্রেস নেতারা? কেন মোদি-অমিত শাহের টোপ গিলছেন কংগ্রেস বিধায়করা? কংগ্রেস কী নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছে? দলের একাংশের অভিযোগ কংগ্রেস শিরোমণি রাহুল গান্ধীর কাঁচা নেতৃত্বই দিনে দিনে তল শূন্য হচ্ছে ভারতের এই ঐতিহাসিক দল।

মধ্যপ্রদেশে কোনো ‘তৃতীয়’ রাজনৈতিক দলও গড়ে ওঠেনি। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর, গত ১৬ মাস ধরে কমল নাথ মুখ্যমন্ত্রী ও দলের রাজ্য সভাপতি। হাইকমান্ড কোনো নেতাকেই রাজ্য সভাপতি করার মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

রাজস্থানেও একইভাবে শচীন পাইলট গত ১৬ মাস ধরে উপমুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সভাপতি। ভয়ঙ্কর অন্তর্কলহ চলছে সেখানেও। অথচ টুটি চেপে বসে আছেন রাহুল।

রাহুল গান্ধী বলতে পারেন যে, তিনি এখন সভাপতি নন, মা সোনিয়া গান্ধীই দলনেত্রী। তবে তাও তো অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য। প্রশ্ন হচ্ছে, রাহুল যদি সত্যিই আর সভাপতি হতে না চান, রাজনীতি থেকেই দূরে সরে যেতে চান, তবে সেটা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছেন না কেন?

মধ্যপ্রদেশে কমল নাথ মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই শোনা যাচ্ছিল, সিন্ধিয়া বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। তবু সোনিয়া এবং রাহুল এই সম্ভাব্য বিপদকে কেন গুরুত্ব দিলেন না, কেন যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করলেন না, সে এক অমীমাংসিত প্রশ্ন।

জ্যোতিরাদিত্য গোয়ালিয়রে সিন্ধিয়া রাজবংশের উত্তরাধিকারী রাজনেতা। আধা-পুঁজিবাদী, আধা-সামন্তবাদী মধ্যপ্রদেশে আজও মহারাজার জনপ্রিয়তা কম নয়। সে রাজ্যে বহু কংগ্রেস কর্মী আহ্লাদিত।

যে কথাটা দিল্লিতে সবাই জানেন, আলোচনা হয় আড্ডায়, তবু কেউ লেখেন না, সেটা হল : রাহুল-জ্যোতিরাদিত্য সম্পর্ক। যারা ২৪ আকবর রোডের হাঁড়ির খবর রাখেন, তারা জানেন, এ সম্পর্ক যতটা বাহ্য, ততটা বাস্তবে নয়।

রাহুল সংসদে তাকে চোখের ইশারা করতে পারেন, কিন্তু সোনিয়া-রাহুল কেউই রাহুলের ইস্তফার পর জ্যোতিরাদিত্যকে দলের দায়িত্ব দিতে রাজি হননি।

রাজ্যসভার সদস্যপদ চেয়েছিলেন, তাও তাকে দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়নি। এই আত্মঘাতী কংগ্রেস, রাহুল গান্ধীর হালভাঙা পালছেঁড়া নেতৃত্ব, আর যাই হোক, নরেন্দ্র মোদির মতো শক্তিশালী জনপ্রিয় নেতাকে সরাতে পারে না। এটা বোঝার জন্য রকেট সায়েন্স বা কোয়ান্টাম থিওরি জানার দরকার নেই।

এমজে/