পথে বাধা-ভোগান্তির অভিযোগ

১৭ শিশুসহ আরো ৩২৮ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ঢাকা ছাড়লেন

১৭ শিশুসহ আরো ৩২৮ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ঢাকা ছাড়লেন

করোনা পরিস্থিতি আরো অবনতির আশঙ্কায় ১৭ শিশুসহ আরো ৩২৮ যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ঢাকা ছেড়ে গেলেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভাড়া করা কাতার এয়ারওয়েজের বিশেষ ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৬টার দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের নিয়ে রওনা করে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আর্ল রবার্ট মিলান বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের বিদায় জানান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দূতাবাস সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

সূত্র জানায়, কাতার এয়ারওয়েজের বোয়িং-৭৭৭ উড়োজাহাজে গত ৩০শে মার্চ প্রথম ফ্লাইটে ২৬৯ জন এবং ৫ই এপ্রিল দ্বিতীয় স্পেশাল ফ্লাইটে ৩২২ নাগরিক, কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের ঢাকা থেকে সরিয়ে নেয় যুক্তরাষ্ট্র। সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের পোষা ৯টি কুকুর ও একটি বিড়ালকেও ফেরানো হয়। কিন্তু পরবর্তীতে বাংলাদেশে অবস্থান করা আরো তিন শতাধিক নাগরিক আবেদন করলে তাদের ফেরাতে তৃতীয় ফ্লাইট পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র সরকার। আগের দু'টি ফ্লাইটে যাওয়া যাত্রীরা প্রায় নির্বিঘ্নে ঢাকা ছাড়লেও সোমবারের ফ্লাইটের একাধিক যাত্রী ঢাকা পৌছার পথে পুলিশি বাধা এবং ভোগান্তির অভিযোগে করেছেন।

সিলেটে থেকে আসা দুজন যাত্রী বলেন, দূতাবাসের সরবরাহ করা ডকুমেন্ট প্রদর্শন সত্ত্বেও তাদের গাড়ি দু’টি আটকে রাখে পুলিশ। বিমানবন্দরে থাকা দূতাবাস টিমের কাছে অভিযোগ দাখিল করেছেন জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগানের হেমট্রামিক এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ এ খান হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ থানাধীন এলাকায় সমীরণ নামের এক পুলিশ অফিসারের অকথ্য নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন। বলেন, গোলাপগঞ্জের কদমরসুল এলাকা থেকে রাত আড়াইটার দিকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা করি। গোলাপগঞ্জ-সিলেট সড়ক ধরে কদমতলীস্থ হুমায়ুন রশিদ স্কয়ারে আসার পর প্রথম পুলিশি বাধা পাই। সে সময় দূতাবাসের সরবরাহ করা ডকুমেন্ট ও পাসপোর্ট দেখিয়ে ছাড়া পেলেও রাত ৩টার দিকে শেরপুর এলাকায় আমাকে বেশ হয়রানীতে ফেলে দেয় পুলিশ। মিস্টার খান বলেন, আচমকা পুলিশ আমাদের গাড়িটি থামায়। আমরা বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি কিন্তু কিছুতেই তারা ছাড়বে না। গাড়ি থানায় নিবে, ভেঙ্গে ফেলবে ইত্যাদি বলে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন এক এসআই। পরে অনেক টেলিফোন এবং তদবিরে আমরা ছাড়া পাই।

মিশিগানের অপর বাসিন্দা ষাটোর্ধ মো আবদুল মতিনও নবীগঞ্জের ওই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে বাধা পাওয়ার অভিযোগ করেন। অবশ্য মানবজমিন প্রতিবেদক ওই কর্মকর্তাকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলার পর তিনিসহ আটকা অন্য যাত্রীরা ছাড়া পান। তবে মিস্টার মতিনকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেয়ার পর তাকে বহনকারী গাড়িটি (ফেরার পথে) হবিগঞ্জের মাধবপুরে ঘন্টাখানেক আটক রাখার অভিযোগ পাওয়া যায়। পরে তার জামাই’র বন্ধু এক পুলিশ কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে গাড়িটি ছাড়া পায় বলেও জানান তিনি।

হবিগঞ্জ এলাকাতে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের হয়রানীর শিকার হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, নারায়নগঞ্জ থেকে যাতে কেউ তার এলাকায় ঢুকতে না পারে এজন্য জেলা প্রশাসন ও সদর আসনের এমপি মিলে জেলাটি লকডাউনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই সময় স্পেশাল ফ্লাইটের বিমানযাত্রী মুভমেন্টের আগাম তথ্য না থাকায় কিছু সমস্যা হতে পারে স্বীকার করলেও তিনি তাদের দীর্ঘ সময় আটকে রাখা বা দুর্ব্যবহারকে হয়রানী বলতে নারাজ। এসপি এ বিষয়ে স্থানীয় এমপি বা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিয়ে লাইনটি কেটে দেন।

এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করেই জানিয়েছে প্রত্যেকটি স্পেশাল ফ্লাইটের যাত্রী মুভমেন্টের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর অবহিত। মঙ্গলবারও ৩২০ জন যাত্রীর মুভমেন্ট হবে জানিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে অবহিতকরণ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সংক্রান্ত চিঠি এরইমধ্যে পৌঁছে গেছে।