জন বোল্টনের লেখা বইয়ে বিষ্ফোরক মন্তব্য

‘ফের ক্ষমতায় আসতে চীনের সহায়তা চান ট্রাম্প, সমর্থন যুগিয়েছেন উইঘুরে মুসলমানদের আটকে’

‘ফের ক্ষমতায় আসতে চীনের সহায়তা চান ট্রাম্প, সমর্থন যুগিয়েছেন উইঘুরে মুসলমানদের আটকে’

দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের কাছে সহায়তা চেয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন তাঁর লেখা এক বইয়ে এমন বিস্ফোরক তথ্য দিয়েছেন।

চীনে উইঘুর মুসলিমদের দমন-নিপীড়নে যে নির্যাতন ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছিলো তাতেও সমর্থন দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

জন বোল্টনের ‘ইন দ্য রুম হোয়্যার ইট হ্যাপেন্ড: এ হোয়াইট হাউস মেমোয়ের’ নামে প্রকাশিতব্য বইয়ে বলা হয়, ‘শি জিনপিং গত বছর (২০১৯) ট্রাম্পকে জানান উইঘুর মুসলমানদের গণহারে আটক রাখতে নির্যাতন ক্যাম্প তৈরি করছে চীন। তখন ট্রাম্প ক্যাম্পের কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত বলে শি জিনপিংকে সমর্থন যুগান।’

ট্রাম্পের বিবেচনায় নির্যাতন ক্যাম্প তৈরির চীনের এই পদক্ষেপ যথার্থ ছিলো বলে বইটিতে উল্লেখ করা হয়।

বোল্টন আরো বলেন, আশ্চর্যজনক কথা হলো হোয়াইট হাউসের কার্যক্রম কীভাবে চালানো হয় প্রেসিডেন্টকে সেসব বিষয়ে কোনো কিছু জানানো হয় না।

সাবেক নিরাপত্তা উপদেষ্টার এমন মন্তব্যে নাখোশ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি বোল্টনকে মিথ্যাবাদী দাবি করে বুধবার ওয়াল স্ট্রীট জার্নালকে বলেন, ‘হোয়াইট হাউসের সবাই বোল্টনকে ঘৃণা করে।’

ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘বোল্টন রাষ্ট্রের অতিগোপনীয় জিনিস প্রকাশ করে দিয়েছেন। তার এটা করার কোনো সুযোগ নেই।’

জাপানের ওসাকায় গত বছরের জুন মাসে জি-২০ সম্মেলনে ট্রাম্প ও শি’র মধ্যে হওয়া এক বৈঠককে ঘিরেই মূলত সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বইটিতে বোল্টন লিখেন, ‘বেঠকে ট্রাম্প অনেকটা বিস্ময়করভাবেই তাদের আলোচনার মোড় ২০২০ সালে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দিকে ঘুরিয়ে দেন। তিনি চীনের অর্থনৈতিক সামর্থ্যের প্রশংসা করে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিততে শি’কে সমর্থন দিতে বলেন।’

বোল্টন বইতে লিখেছেন, ‘ট্রাম্প কৃষকদের ভোট নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। এর জন্য চীনকে বেশি করে সয়াবিন ও গম আমদানির অনুরোধ জানিয়েছিলেন যাতে নির্বাচনের সুবিধা বাগিয়ে নেয়া যায়।’

জি-২০ সম্মেলনের শুরুর দিকে এক ডিনারে চীনে উইঘুরদের জন্য জিনজিয়াং প্রদেশে তৈরি করা নির্যাতন ক্যাম্প নিয়ে কথা বলেন এই দুই প্রেসিডেন্ট। তখন ট্রাম্প বলেন, ‘নির্যাতন ক্যাম্প তৈরির কাজ অবশ্যই চালিয়ে নেয়া উচিত। যে কাজটা করা হচ্ছে সেটা যথার্থ একটা কাজ।’

২০১৮ সালের এপ্রিলে হোয়াইট হাউসে যোগ দেন বোল্টন কিন্তু একই বছরের সেপ্টেম্বরে জানান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদটি ছেড়ে দিতে হয়।প্রেসিডেন্টের সাথে মতবিরোধের কারণেই তাকে চাকরিচ্যুত করা হয় বলে দাবি ট্রাম্পের।

সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৩ জুন বইটি প্রকাশ হবার কথা রয়েছে। বইটি যাতে প্রকাশ না করা হয় সেজন্য দ্রুত আদেশ জারি করার আহবান জানিয়েছে ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস। ট্রাম্প প্রশাসন থেকে অভিযোগ করে বলা হয়েছে, বইটিতে অনেক ক্লাসিফায়েড বা অফিসিয়াল সিক্রেট তথ্য রয়েছে। এসব প্রকাশ হওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে। প্রশাসনের এ পদক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়েছে বইটির প্রকাশক সাইমন অ্যান্ড শুস্টার। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন বইয়ের দোকানে এরই মধ্যে বইটির কয়েক হাজার কপি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলেও জানিয়েছে তারা।

মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে শুক্রবার। সব মিলে বিষয়টিকে দেখা হচ্ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রতি তার শীর্ষ উপদেষ্টাদের একজনের তরফ থেকে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে। গত বছর ডেমোক্রেটিক দল নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যে অভিশংসন প্রক্রিয়া শুরু করে তার চেয়েও বড় আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে বোল্টনের এই অভিযোগকে।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ডেমোক্রেট দল থেকে আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে ক্ষতিকর তথ্য সরবরাহের জন্য চাপ দিয়েছিলেন ইউক্রেনে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কিকে। ওই দেশটিকে দেয়া সামরিক সহায়তার বিপুলি পরিমাণ অর্থ স্থগিত করেছিলেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে জন বোল্টন লিখেছেন, যদি ২০১৯ সালে ইউক্রেনে সামরিক সহযোগিতা বিষয়ে ডেমোক্রেটিকরা অতোটা আচ্ছন্ন না হতে, তারা যদি পুরো পররাষ্ট্রনীতিতে ট্রাম্পের ধারাবাহিকতা অনুসন্ধানে আরো সময় নিতে, তাহলে অভিশংসনের ফল ভিন্ন হতে পারতো।

চলমান সমালোচনার মুখে আসন্ন নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেট নেতা জো বাইডেন এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘যেসব অভিযোগের কথা শুনা যাচ্ছে, এগুলো যদি সত্যি হয় তাহলে বলবো এটা শুধু নৈতিকতাবিরোধী কাজই হয়নি বরং ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের দেয়া পবিত্র দায়িত্বের বরখেলাপ করেছেন।’

জন বল্টনের এই তথ্য এখন প্রকাশ করা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত ডেমোক্রেট দলের প্রতিনিধি পরিষদের সদস্য এডাম শিফ। রিপাবলিকান ট্রাম্প শিবিরের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে তিনিই নেতৃত্ব দেন।

এডাম শিফ বলেছেন, জন বোল্টনের বিরুদ্ধেই মামলা করা উচিত। তিনি এ তথ্য জেনেও তা আগে প্রকাশ করেননি, জমা করে রেখেছেন বইয়ের জন্য। জন বল্টন একজন লেখক হতে পারেন। কিন্তু একজন দেশপ্রেমিক নন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিষয়ক প্রতিনিধি রবার্ট লাইটিজার সিনেটে সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, জন বোল্টনের দেয়া তথ্য চরমভাবে অসত্য। তিনি সাক্ষ্যে বলেছেন, (ট্রাম্প-শি’র) ওই মিটিংয়ে আমিও সেখানে ছিলাম। সেখানে তো আমি এমন কিছু স্মরণ করতে পারি না। এমন কথা কখনোই হয় নি, আমি নিশ্চিত।

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র ক্যালি ম্যাকইনানি এ বিষয়ে কথা বলেছেন। তিনি পররাষ্ট্রনীতিতে একজন ভ্রান্ত মানুষ বলে আখ্যায়িত করেছেন জন বোল্টনকে।

জিএস/