ট্রাম্পকে নিয়ে রিপাবলিকান শিবিরে প্রচণ্ড হতাশা

ট্রাম্পকে নিয়ে রিপাবলিকান শিবিরে প্রচণ্ড হতাশা

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি। আসন্ন নির্বাচনে বিপর্যয়ের আশঙ্কা করা রিপাবলিকানদের জন্য প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে ঝেড়ে ফেলার এটাই সবচেয়ে নিরাপদ সময়। অন্তত, তার থেকে নিজেদের দূর করতে চাইছেন অনেকেই। সাম্প্রতিক দিনগুলোয় দলীয় নেতাদের নানা মন্তব্য রিপাবলিকান পার্টির ভেতরকার এমন ফাটল ফুটে ওঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি বিষয়ক সংবাদ মাধ্যম পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে।

এতে বলা হয়, গত চার বছর ধরে বেশিরভাগ সময়ই রিপাবলিকান রাজনীতিবিদরা সবচেয়ে বেশি ভীত ছিলেন যে বিষয়টি নিয়ে সেটি হচ্ছে, তাদের আচরণে প্রেসিডেন্ট ও তার সমর্থকরা যেন ক্ষেপে না যান। তারা ভীত ছিলেন, হয়তো তাদের কোনো মন্তব্য বা তুচ্ছ কোনো আচরণ প্রেসিডেন্ট পর্যাপ্ত শ্রদ্ধাপূর্ণ মনে করবেন না। কিন্তু এখন বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান নেতার মধ্যে নতুন ভয় ঢুকেছে যে, এমনভাবে থাকলে ভোটাররা তাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে স্বাধীন মনে করবে না।

এটা কোনো বিদ্রোহ নয়। কেন্দ্রীয় রিপাবলিকান নেতারা সরাসরি খুব একটা ট্রাম্পবিরোধী অবস্থানে নেই। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তার প্রতি হতাশ হয়ে মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নিয়েছেন তারা। এর অন্যতম দৃষ্টান্ত দেখা গেছে, করোনা ভাইরাস মহামারি সামলানো নিয়ে প্রেসিডেন্টের ভূমিকার ক্ষেত্রে।

গত শুক্রবার সিএনবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে টেক্সাসের রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজ স্বীকার করেছেন যে, আগামী নির্বাচন নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন। তার ভাষ্যমতে, ভোটাররা নির্বাচনের দিন করোনা মহামারি ও অর্থনীতি কিভাবে বিবেচনা করবে তার ওপর ভিত্তি করে, নির্বাচনটি ওয়াটারগেট কেলেঙ্কারির সমপরিমাণ ক্ষতি বয়ে আনতে পারে দলের জন্য।

সিনেট সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মিচ ম্যাককনেল বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানান, দুই মাসের বেশি সময় ধরে তিনি হোয়াইট হাউজে যান না। কারণ, ট্রাম্প ও তার টিম করোনা ভাইরাস সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে মেনে চলেন না।

নর্থ ক্যারোলিনায় পুননির্বাচনের দৌড়ে সংকটময় অবস্থা পার করতে থাকা সিনেটর থম টিলস এক সাক্ষাতকারে বলেন, জো বাইডেনের প্রেসিডেন্সি ঠেকাতে ও সিনেটে রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখার স্বার্থে তাকে ভোট দেওয়া উচিত জনগণের।

অ্যারিজোনায় পুননির্বাচনের দৌড়ে পিছিয়ে আছেন সিনেটর মার্থা ম্যাকস্যালি। তার ডেমোক্র্যাট প্রতিদ্বন্দ্বী মার্ক কেলির সঙ্গে এক বিতর্কে বারবার তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, তিনি একজন ট্রাম্প সমর্থক হিসেবে নিজেকে গর্বিত মনে করেন কিনা। এর সরাসরি উত্তর দেননি তিনি। বলেছিলেন, আমি আরিজোনার নাগরিকদের জন্য লড়তে পেরে গর্বিত।

সিনেটর জন করনিন হিউস্টন ক্রনিকলকে বলেন, ট্রাম্প করোনা মোকাবিলায় নিয়ম মেনে চলার চর্চা করেননি। এমনকি করোনা নিয়ে প্রেসিডেন্টের দেওয়া নানা বক্তব্য জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে।

সাধারণত ডেমোক্র্যাটপন্থি রাজ্য হিসেবে পরিচিত ম্যাসাচুসেটসে গত নির্বাচনে ক্ষমতায় আসেন রিপাবলিকান গভর্নর চার্লি বেকার। এ সপ্তাহে তিনি বলেন, জনস্বাস্থ্য বিষয়ে অসংখ্য মানুষের পরামর্শ অগ্রাহ্য করে গেছেন ট্রাম্প। নিজের কথা ও কাজে অবিশ্বাস্যরকমের দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন তিনি।

চলতি সপ্তাহে ট্রাম্প করোনায় ধসে পড়া অর্থনীতি রক্ষায় নতুন একটি সহায়তা পরিকল্পনার আলোচনা বাতিল করে দেন। তার এ সিদ্ধান্তের পর জনসম্মুখে তার সমালোচনা করেছেন কয়েকজন রিপাবলিকান। মেইন রাজ্যের সিনেটর সুজান কলিন্স বলেছেন, ট্রাম্প মহা ভুল করেছেন। আগামী নির্বাচনে রিপাবলিকানদের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ রিপাবলিকান সিনেটরদের একজন কলিন্স। এদিকে, নিউ ইয়র্কের রিপাবলিকান নেতা জন কাটকো বলেন, তিনি স্পষ্টভাবে ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তের বিরোধীতা করছেন।

ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র, সাউথ ক্যারোলিনার সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম পর্যন্ত ট্রাম্পকে আলোচনায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তীব্র সমালোচনার মুখে ট্রাম্প নিজের অবস্থান পাল্টেছেন বটে, তবে শেষমেষ কোনদিকে মোড় নেবেন তা এখনো অনিশ্চিত।

সবমিলিয়ে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছে। অতীতে ট্রাম্প কার্যকরীভাবে এসব সামাল দিতে পারলেও এবার তিনি নিয়ন্ত্রণ নিতে পারছেন না। দিন দিন ট্রাম্পের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া রিপাবলিকানের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গণমাধ্যম এড়িয়ে চলছেন অনেকে।

রিপাবলিকান ন্যাশনাল পার্টির সাবেক যোগাযোগ বিষয়ক পরিচালক ডৌগ হেয়ে রিপাবলিকান নেতাদের আচরণকে ‘ভূমিকম্পের আগে প্রাণীদের আচরণ’-এর সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ভূমিকম্পের আগে কিছু প্রাণী যেমন টের পেয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজ শুরু করে, তেমনি ‘বিপর্যয়কারী নির্বাচনের আগে’ রিপাবলিকানরা নিজেদের অবস্থান ঠিক করে নিচ্ছেন।

এমজে/