‘বাংলাদেশি’ তকমায় বাড়ি ফিরতে চাইলেন হিন্দু যুবতী

‘বাংলাদেশি’ তকমায় বাড়ি ফিরতে চাইলেন হিন্দু যুবতী

মুসলিম যুবক সৈয়দ মুস্তাফার সঙ্গে প্রেম করছিলেন পশ্চিমবঙ্গের এক যুবতী। এক পর্যায়ে গত বছর শেষের দিকে ওই যুবতী তার প্রেমিকের সঙ্গে বেরিয়ে গিয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। কিন্তু তার পরিবার মেনে নিতে পারছিলেন না বিষয়টি। এক পর্যায়ে তারা মেয়েকে বোঝান- সৈয়দ মুস্তাফা ‘বাংলাদেশি’। তার ধর্মও আলাদা। এর সঙ্গে আরো কিছু তথ্য দিয়ে তারা মেয়ের মন নরম করে ফেলেন। তারপর দিল্লি হাইকোর্ট সোমবার তার পরিবারকে অনুমতি দিয়েছে মেয়েকে ফেরত নিতে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

এতে বলা হয়, পশ্চিমবঙ্গের ওই যুবতীর সঙ্গে মুস্তাফার প্রেম ছিল ২০১৯ সাল থেকে। এক পর্যায়ে তারা পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন। এর প্রতিবাদ জানিয়ে গত মাসে ওই যুবতীর পিতা আদালতের মুখোমুখি হন। তিনি দাবি করেন, তার মেয়েকে ট্রেনে করে কলকাতা নিয়ে গিয়েছে মুস্তাফা। এর ফলে ২২ শে ডিসেম্বর আদালত ক্রাইম ব্রাঞ্চকে একটি মামলা নিবন্ধিত করে ওই যুবতীকে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেয়। এর প্রেক্ষিতে সোমবার ক্রাইম ব্রাঞ্চ তাকে দিল্লিতে নিয়ে যায়। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আদালতে উপস্থিত করা হয়। এ সময় শুনানিতে অংশ নেয় তার পরিবারের সদস্যরা। আদালতে পিতামাতার দাবিকে মিথ্যা দাবি করে তিনি আদালতে বলেন, তিনি নিজের ইচ্ছায় মুস্তাফার হাত ধরে ঘর ছেড়েছেন। বি.টেক সম্পন্ন করে তিনি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু তার বাড়ির পরিবেশ তার উপযোগী ছিল না। কারণ, বাড়িতে সব সময় ঝগড়া বিবাদ লেগেই থাকতো।

ভারতীয় দ-বিধির ১৬৪ ধারার অধীনে তিনি বিবৃতিতে মুস্তাফার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেন এবং বলেন, তার কারণেই মুস্তাফা তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। এরপর বাড়ি ছেড়ে তারা একজন আইনজীবীর কাছে যান। নিকাহনামা সম্পন্ন করতে তারা ওই আইনজীবীকে ১০ হাজার রুপি ফি দেন। ডাকা হয় কাজি।

গত ৭ই নভেম্বর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিমবঙ্গে। সেখানে মুস্তাফার এক আন্টের কাছে তিনি অবস্থান করেন প্রায় ২০ দিন। এর মধ্যে তারা কয়েকবার মুস্তাফার গ্রামে গিয়েছেন। কিন্তু মুস্তাফার পিতামাতা তাকে গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। এমনকি তারা মুস্তাফাকে বকাঝকা করেন।

আদালতের কাছে ওই যুবতী আরো বলেছেন, তিনি দিল্লির নারী নিকেতন ছেড়ে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চান। তার পিতামাতা তাকে বাড়ি নিয়ে যেতে চাইলে আদালত তাতে সম্মতি দেন। যুবতীকে তার মা বোঝান- তোমার ভাইবোনদের কথা একবার চিন্তা করো। পরিবারের সম্মানের কথা চিন্তা করো। মুস্তাফা একজন হিন্দু নয়। তা ছাড়া সে তোমাকে বাংলাদেশে নিয়ে বিক্রি করে দেবে। এ সময় তার পিতাও তাকে বোঝান। ফলে ওই যুবতী নারী নিকেতন ছেড়ে বাড়ি ফিরে যেতে রাজি হন।

আদালত বলেন, তিনি ধর্মান্তরিত হয়ে ইসলাম গ্রহণের কথা জানান নি। ফলে নিকাহনামা মুসলিম বিবাহ উপযোগী ছিল কিনা তা দেখতে হবে। এ ছাড়া আদালত তার পরিবারকে বাড়িতে এমন পরিবেশ সৃষ্টির নির্দেশ দেন, যাতে তিনি আবার পড়াশোনা শুরু করতে পারেন।

এমজে/