করোনা ভাইরাস নিয়ে ড. ফাউচির বিরুদ্ধাচরণ চীনা রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার

করোনা ভাইরাস নিয়ে ড. ফাউচির বিরুদ্ধাচরণ চীনা রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার

যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ সংক্রামক ব্যাধি বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউচিকে নিয়ে এতদিন কড়া সমালোচনা করেছেন রিপাবলিকানরা। কিন্তু এবার দেশের বাইরে তার নতুন এক সমালোচকের উদ্ভব হয়েছে। এবার তার সমালোচক চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া। তাকে আক্রমণ করে অসম্ভব কড়া ভাষায় একটি মতামত কলাম প্রকাশিত হয়েছে চীনের রাষ্ট্র পরিচালিত পত্রিকা গ্লোবাল টাইমসে। এ সপ্তাহে এ কলাম লিখেছেন পত্রিকাটির প্রধান সম্পাদক হু সিজিন। ইংরেজিতে এর শিরোনাম- ‘ইউএস এলিটস ডিজেনারেট ফারদার ইন মোরালিটি, অ্যান্ড ফাউচি ইজ ওয়ান অব দেম’। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের অভিজাত শ্রেণির আরো নৈতিক অবক্ষয় হয়েছে। তার মধ্যে ফাউচি অন্যতম।

এ খবর দিয়েছে অনলাইন সিএনএন। ওই মন্তব্য প্রতিবেদনে ড. অ্যান্থনি ফাউচির বিরুদ্ধে চীনবিরোধী ‘হিউজ’ মিথ্যা উস্কে দেয়ার অভিযোগ করেছেন হু সিজিন। এতে তিনি বলেছেন, প্রতারণাপূর্ণ থিওরি দেয়া হচ্ছে যে, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে উহানের একটি গবেষণাগার থেকে। গ্লোবাল টাইমসের আরেকটি আর্টিকেলে বলা হয়েছে, চীনা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন ফাউচি।

উল্লেখ্য, এ মাসে ড. অ্যান্থনি ফাউচি বলেছেন, তিনি আর বিশ্বাস করেন না যে- কোভিড-১৯ মহামারির শুরু হয়েছে প্রাকৃতিকভাবে। তার এ মন্তব্যকে কেন্দ্র করে চীনে ওই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। গত ১১ই মে ফ্যাক্ট-চেকিং বিষয়ক এক সিম্পোজিয়ামে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এলার্জি অ্যান্ড ইনফেকশিয়াস ডিজিজেজ-এর পরিচালক ড. অ্যান্থনি ফাউচি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত কি ঘটেছিল তার উত্তম সমাধান খুঁজে না পাবো ততদিন পর্যন্ত আমি মনে করি আমাদের তদন্ত অব্যাহত রাখতে হবে চীনের ব্যাপারে।

এর আগে প্রাথমিকভাবে তিনি বলেছিলেন, করোনা ভাইরাস পশু থেকে মানবদেহে সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে বলে তিনি মনে করেন। কিন্তু ১১ই মে দেয়া ওই বক্তব্য তার আগের অবস্থান থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দেয়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর রিপোর্টকে উদ্ধৃত করে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল একটি এক্সক্লুসিভ রিপোর্ট প্রকাশ করে। তারই সূত্র ধরে ড. অ্যান্থনি ফাউচি ওই মন্তব্য করেন। যুক্তরাষ্ট্রের ওই গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়, করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার অনেক আগে উহান ইনস্টিটিউটট অব ভাইরোলজির তিনজন গবেষক অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন। যদি এটা সত্য হয়, তাহলে ওই গবেষণাগার থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল কিনা তা আরো তদন্তের দাবি রাখে।

এখানে লক্ষ্য করার বিষয়, সঙ্গে সঙ্গে জোর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার ওই রিপোর্ট প্রত্যাখ্যান করেছে চীন। আগের মতো করে তারা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, তাদের কোনো গবেষণাগার থেকে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েনি। এ নিয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেছেন, এই রিপোর্ট পুরোপুরি অসামঞ্জস্যপূর্ণ। অন্যদিকে ওই গবেষণাগারের পরিচালক রিপোর্টকে পুরো মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। পাশাপাশি চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ড. অ্যান্থনি ফাউচির বিরুদ্ধে লেগে যায়। তাতে দাবি করা হয়, তিনি চীনের বিরুদ্ধে মতামতযুদ্ধে নেমেছেন। এর আগে চীন অ্যান্থনি ফাউচিকে যেভাবে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরতো, এখন তাদের সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন করোনা মহামারি যেভাবে মোকাবিলা করছিল, তার বিরুদ্ধে বার বার কথা বলেছেন ফাউচি। তখন এই বিজ্ঞানীর পেশাদারিত্ব এবং সত্য কথা বলার সাহসের প্রশংসা জানিয়েছে চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া।

এমজে/