আফগানিস্তান থেকে ফিরে তালেবানের প্রশংসায় ভারতীয় নাগরিক

আফগানিস্তান থেকে ফিরে তালেবানের প্রশংসায় ভারতীয় নাগরিক

ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমানে করে আফগানিস্তান থেকে দিল্লি হয়ে কলকাতায় ফিরেছেন দুই বাঙালি। নিরাপদে দেশে ফিরলেও কলকাতার নিমতার বাসিন্দা তমাল ভট্টাচার্য এবং লেক ভিউয়ের বাসিন্দা স্মরজিৎ মুখোপাধ্যায়ের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ। তমাল ভট্টাচার্য জানান, একটি আন্তর্জাতিক স্কুলে শিক্ষকতা করতে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন তিনি। তবে সরজিৎ কেনো সেখানে গিয়েছিলেন তা জানাননি।

তালেবানের নিষ্ঠুরতা নিয়ে বিশ্বব্যাপী যেখানে সমালোচনার ঝড় চাইছে সেখানে কলকাতায় ফিরে তমাল জানালেন, তালেবান সদস্যরা তাঁদের সংগে ভালো ব্যবহার করেছেন। ভালো খেতে দিয়েছেন। এমনকি, ক্রিকেটও খেলেছেন।

তমাল বলেন, ১৫ আগস্ট আমি যখন স্কুল থেকে আমার ক্লিয়ারেন্স কাগজ নিয়ে ফিরছিলাম তখন হঠাৎ করে রাস্তায় প্রচুর বিশৃঙ্খলা লক্ষ্য করি। মানুষ এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছিলো। মোটরসাইকেল-গাড়ি নিয়ে বিশৃঙ্খলভাবে ছুটছিলো। মানুষ বলছিলো, তালিবস আসছে। ওরা তালেবান সদস্যদের 'তালিবস' বলে।

তিনি বলেন, পরিস্থিতি দেখে আমিও একটু ঘাবড়ে গেলাম। তখন আমার গাড়ির ড্রাইভার এবং স্কুলের অন্য যেসব শিক্ষক ছিলেন তারাও ভয় পেয়ে গেলেন। তখন একজন পুলিশ কর্মকর্তা এসে বললেন, স্যার, আপনাদের যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফিরে যেতে হবে। তালিবস আসছে। তারা কাবুলের ঢুকে পড়ছে। এরপর আমি দুই ঘণ্টার যানজট পেরিয়ে সেখানে যে বাসায় থাকতাম সেখানে গেলাম। এর আধা ঘণ্টা পর তালেবান ঝড়ের বেগে কাবুলে ঢুকে গেলো।

তমাল বলেন, কাবুলে কোনো যুদ্ধ হয়নি। খুবই শান্তপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। একটা গুলিও চলেনি।

'তালেবান সদস্যরা এসে প্রথমেই আমাদের বললো, 'ওস্তাদ, ওরা ওস্তাদ বলে, আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না। আপনারা সরকারেরও না দেশেরও না, কারোরই না। আমরা আপনাদের নিরাপত্তা দেবো, সেবাও করবো।

এরপর আমি আমার বাসা থেকে স্কুলে চলে গেলাম। কারণ, ওই জায়গাটা তুলনামূলক নিরাপদ ছিলো। স্কুলে তালেবান কমান্ডারদের সংগে আমাদের কথা হয়েছিলো। সেখানে আমরা সবাই ছিলাম। তারা আমাদের বললো, আপনারা কোনো ভয় পাবেন না। আমরা আপনাদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেবো। যাতে তৃতীয় পক্ষ কোনো ক্ষতি করতে না পারে। তৃতীয় পক্ষ বলতে সেখানে বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন থাকতে পারে। তালেবান চাইছিলো না যে, ওদের কোনো বদনাম হোক।

তমালের পরিবারের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এবিপি আনন্দ জানিয়েছে, শুক্রবার রাত থেকেই কাবুল বিমানবন্দরে প্রবেশের চেষ্টা করছিলেন তমাল। এরপর শনিবার দুপুরে কাবুল থেকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো মেসেজে তমাল লেখেন, 'পিকড আপ বাই তালেবান'। পরে তাঁর পরিবার জানায়, তমালকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর মা জানিয়েছিলেন, তালেবানরা তাঁকে কিছু প্রশ্ন করেছে। ভালো খাইয়েছে। তারপর ছেড়ে দিয়েছে।

কাবুল থেকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর বিমানে দিল্লি পৌঁছান মোট ১৬৮ জন নাগরিক।