বাইডেন-পুতিন ২য় ফোনালাপ

ইউক্রেন নিয়ে সতর্কবার্তা বাইডেনের, সম্পর্ক ভাঙার হুমকি পুতিনের

ইউক্রেন নিয়ে সতর্কবার্তা বাইডেনের, সম্পর্ক ভাঙার হুমকি পুতিনের

ইউক্রেন ইস্যুতে একে অপরকে সতর্কবার্তা দিল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ। যুক্তরাষ্ট প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সম্পর্ক ভাঙার হুঁশিয়ারি দিয়েছের রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। জবাবে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সাফ কথা ইউক্রেনে কোন ধরণের হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা তার জবাব দেবে।

বৃহস্পতিবার রাতে দুই নেতার মধ্যে এক ফোনালাপে পুতিন বলেন, ইউক্রেন নিয়ে যদি রাশিয়ার উপর নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তাহলে দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক সম্পূর্ণভাবে ভেঙে যেতে পারে। একইসঙ্গে এই ধরনের নিষেধাজ্ঞা একটি ‘বড় ধরণের ভুল’ বলেও জানিয়ে দেন পুতিন।

পুতিনের এমন বক্তব্যের পাল্টা জবাবও দিয়েছেন বাইডেন। পুতিনকে তিনি বলেন, ইউক্রেনে কোন ধরণের হামলা হলে যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্ররা রাশিয়াকে সে মোতাবেক জবাব দেবে। রাশিয়ার পক্ষ থেকে আসা এই ফোন কলে দুই নেতার কথোপকথন প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলে। চলতি মাসে তাদের মধ্যে এবার দ্বিতীয়বারের মতো টেলিফোন আলাপ হল।

রাশিয়ার সাথে ইউক্রেনের পূর্ব সীমান্তে উত্তেজনা চরমে বিরাজ করছে। ধারণা করা হচ্ছিল, এই ফোনালাপ সেটি প্রশমিত করবে।

ইউক্রেন দাবি করেছে, তাদের সীমান্তে প্রায় ১ লাখ রুশ সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে এই উত্তেজনা পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যেও উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এমন অবস্থায় পুতিনকে বাইডেন বলেন, ইউক্রেন যদি আক্রমণের শিকার হয় তাহলে এমন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে যেটা তিনি কখনও দেখেননি।

এদিকে প্রথম থেকেই রাশিয়া ইউক্রেনে হামলার পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে আসছে। দেশটির দাবি, ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনারা অনুশীলনের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে। নিজের মাটিতে অবাধে সৈন্যদের চলাফেরার অধিকার আছে বলেও জানিয়ে দেয় রাশিয়া। যদিও টেলিফোনে আলাপ চলাকালীন উভয় পক্ষ একে অপরকে সতর্কবার্তা দিয়েছে বলে জানা গেছে। এরপরেও রাশিয়ার পররাষ্ট্র নীতি বিষয়ক উপদেষ্টা ইউরি উশাকভ ফোনালাপের পর বলেন, এই কথোপকথনে সন্তুষ্ট হয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এই ফোনালাপ ভবিষ্যতে আলোচনার জন্য একটি ভাল প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে। তবে একজন ঊর্ধ্বতন মার্কিন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, উভয় নেতার আলোচনার বক্তব্যের সুর ছিল রাশভারী এবং বাস্তবিক।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকি জানান- প্রেসিডেন্ট বাইডেন আবারো বলেছেন যে, এই সংলাপে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি তখনই হবে, যখন উত্তেজনা প্রশমনের পরিবেশ তৈরি হবে। তিনি স্পষ্ট করেছেন যে রাশিয়া যদি ইউক্রেনে পুনরায় আক্রমণ চালায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র, তার মিত্র এবং অংশীদাররা অবশ্যই এর জবাব দেবে। মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তারা আগামী মাসে জেনেভায় ব্যক্তিগত বৈঠক করতে যাচ্ছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে যে, বাইডেন রুশ প্রেসিডেন্টকে এ সমস্যার কূটনৈতিক সমাধানের অনুরোধ জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ওই ফোন কলের আগে হলিডে বা ছুটির বার্তায়, পুতিন বাইডেনকে বলেছিলেন যে তিনি প্রত্যাশা করেন যে এই দুই দেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং একে অপরের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে একসাথে কাজ করতে পারে। তার মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, মস্কো আলোচনার মেজাজেই ছিল। আমরা বিশ্বাস করি কেবল আলোচনার মাধ্যমেই আমাদের মধ্যে থাকা সমস্ত সংকটগুলোর সমাধান করা সম্ভব।

মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়ার ইঙ্গিতগুলো অশুভ। তাই তারা কূটনৈতিক আলোচনার গতি বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এ কারণে বৃহস্পতিবার এই দুই নেতার মধ্যে আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে দেখছে হোয়াইট হাউস। নতুন বছরেও যাতে এই আলোচনার পথ খোলা থাকে তা নিশ্চিত করার জন্য তারা যথাসাধ্য চেষ্টা করছে।

এর আগে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডিসেম্বরের শুরুতে পার্লামেন্টে বলেছিলেন যে, রাশিয়া সীমান্তের কাছে কয়েক হাজার সৈন্য মোতায়েন করেছে। তার দাবি ছিল, জানুয়ারির শেষে ইউক্রেনের উপরে বড় ধরণের সামরিক আক্রমণ করতে পারে রাশিয়া। যদিও মস্কো বলছে, সীমান্তে তাদের এই সেনা মোতায়েন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা। তারা নিশ্চয়তা চায় যে, ন্যাটো রাশিয়ার দিকে অগ্রসর হবে না এবং ইউক্রেনকে কোন বিশেষ ধরণের অস্ত্র দেবে না। যদিও ক্রেমলিনের এই দাবি যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাখ্যান করেছে।

উল্লেখ্য, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য না হলেও দেশটির সঙ্গে জোটটির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। ২০১৪ সালে রাশিয়া ইউক্রেনের ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করে নেয়। এরপর থেকে দেশটি ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সক্রিয় থাকা বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সমর্থন দিতে থাকে। এসব ইস্যুতে একের পর এক লড়াইয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ১৪ হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।