কাশ্মীরে আসিফা হত্যার ঘটনায় উত্তাল ভারত

কাশ্মীরে আসিফা হত্যার ঘটনায় উত্তাল ভারত

ঢাকা, ১৩ এপ্রিল (জাস্ট নিউজ): কাশ্মীরে মুসলিম শিশুকন্যা আসিফাকে ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারত।

একদিকে অভিযুক্তদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছে ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতারা, আসিফাকে ধর্ষণ ও হত্যাকারীদের বিচার দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছেন কংগ্রেস (সহসভাপতি) রাহুল গান্ধী

জানুয়ারি মাসের ওই ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশ ১৯ বছরের এক তরুণকে গ্রেফতার করে।

তরুণের জবানবন্দির ভিত্তিতে তার চাচা মন্দিরের (যে মন্দিরে আসিফাকে আটকে রেখে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়) পরিচালক সাবেক সরকারি কর্মকর্তা সানজি রাম এবং পুলিশ কর্মকর্তা দীপক খাজুরিয়াকে গ্রেফতার করে।

এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার চতুর্থ ব্যক্তি স্পেশাল পুলিশ অফিসার সুরিন্দর কুমার। তাকে প্রত্যক্ষদর্শীরা ঘটনাস্থলে দেখছিল। ওই তরুণের বন্ধু প্রবেশ কুমারও শিশুটিকে ধর্ষণ করেছে। তাকে খুঁজছে পুলিশ।

এ ঘটনার পর তাদের মুক্তির দাবিতে ও গোটা ঘটনা কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করাতে জম্মু অঞ্চলে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো বিক্ষোভ দেখিয়েছে।

এছাড়া গ্রেফতার ব্যক্তিরা হিন্দু হওয়ায় হিন্দু-অধ্যুষিত জম্মুর কয়েকটি হিন্দু রাইট-উইং গ্রুপ তাদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে।

শুধুমাত্র ধর্মের কারণে এ রকম নৃশংস একটি ঘটনার পরও অভিযুক্তদের মুক্তি দাবি এবং ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীদের তা সমর্থন করায় পুরো ভারত ক্ষোভে ফেটে পড়ে।

বৃহস্পতিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #Kathua and #justiceforAsifa হ্যাশট্যাগ ছড়িয়ে পড়ে।

বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানী দিল্লিতে আসিফা হত্যা মামলায় ন্যায়বিচারের দাবিতে ইন্ডিয়া গেট অভিমুখে ‘ক্যান্ডেললাইট মার্চের’ নেতৃত্ব দেন ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস পার্টির প্রধান রাহুল গান্ধী।

রাহুল বলেন, “আমরা কি দেখছি, এ দেশে নারী ও শিশুরা ক্রমাগত ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি। এটা কোনো রাজনৈতিক বিষয় নয়, এটা জাতীয় বিষয়।”

সোনিয়া গান্ধী এবং প্রিয়াংকা ভদ্র গান্ধীও ওই প্রতিবাদ মিছিলে যোগ দেন।

নারী ও শিশুদের অধিক সুরক্ষার দাবিতে দিল্লি কমিশন ফর উইম্যানের প্রধান শুক্রবার থেকে আমরণ অনশনে বসার ঘোষণা দিয়েছেন।

কী রয়েছে অভিযোগপত্রে

জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য পুলিশের অপরাধ শাখা বলছে, আট বছরের ওই কন্যাশিশুকে জম্মুর কাঠুয়া জেলায় তার বাড়ির কাছ থেকে অপহরণ করা হয়েছিল।

যাযাবর গুজ্জর জাতিগোষ্ঠীর শিশুটিকে এ বছরের ১০ জানুয়ারি অপহরণ করা হয়, যখন সে পোষা ঘোড়া আর ভেড়াগুলোকে চড়াতে নিয়ে গিয়েছিল।

পরদিন তার পরিবার হীরানগর থানায় অপহরণের মামলা করে।

সাত দিন পর তার মরদেহ পাওয়া যায় কাঠুয়া জেলারই বসানা গ্রামে।

ঘটনাটি নিয়ে ধীরে ধীরে ক্ষোভ বাড়তে থাকে, একসময়ে বিষয়টি পৌঁছায় রাজ্য বিধানসভায়।

সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি অপরাধ শাখাকে দিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার কথা ঘোষণা দেন।

তদন্তের শুরুতেই দেখা যায় যে, ওই কন্যাশিশুর খোঁজ করতে পুলিশ কর্মীরা যখন জঙ্গলে গিয়েছিলেন, তার মধ্যেই এমন দুজন ছিলেন, যারা মৃতদেহটির পোশাক পরীক্ষার জন্য পাঠানোর আগে একবার জলে ধুয়ে নিয়েছিল।

সন্দেহ বাড়ায় তাদের জেরা শুরু হয়। ফেব্রুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে ওই দুই পুলিশ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। তারা দুজনেই ওই হীরানগর থানায় কর্মরত ছিলেন।

তল্লাশি চালিয়ে বসানা গ্রামের একটি মন্দির থেকে কিছু চুল খুঁজে পান তদন্তকারীরা। তাদের সন্দেহ হয় যে ওই চুল অপহৃত কন্যাশিশুটির হতে পারে।

অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ওই মন্দিরের দেখভালের দায়িত্বে ছিলেন সাঞ্জি রাম নামে যে ব্যক্তি, তিনিই নিজের ছেলে আর ভাইয়ের ছেলের সঙ্গে বসে ওই কন্যাশিশুকে অপহরণ করার পরিকল্পনা করেছিলেন।

গুজ্জর সম্প্রদায়ের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করাই উদ্দেশ্য ছিল, যাতে তারা ওই এলাকা ছেড়ে চলে যায়।

চার্জশিটে বলা হয়েছে, স্থানীয় হিন্দুদের মধ্যে এ রকম একটা ধারণা প্রচলিত আছে যে, বাকারওয়াল বা যাযাবর সম্প্রদায়ের ওই মানুষরা গরু জবাই করে আর মাদকের কারবার করে।

এ নিয়ে এর আগে দুই তরফেই পুলিশের কাছে বহু অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ জমা হয়েছে।

চার্জশিটে পুলিশ এটিও উল্লেখ করেছে যে, ধর্ষণের আগে ওই মন্দিরে কিছু পুজো করা হয়।

৬০ বছর বয়সী সাঞ্জি রাম, তার ছেলে বিশাল আর নাবালক ভাইয়ের ছেলে, চার পুলিশ কর্মী এবং আরেক ব্যক্তি গোটা ঘটনায় সরাসরি যুক্ত।

ওই কন্যাশিশুকে অপহরণ করে নিয়ে আসার পর তাকে মাদক খাইয়ে অচেতন করে রাখা হয়েছিল। তার মধ্যেই তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়।

অভিযুক্তদের মধ্যে যে নাবালক রয়েছে, সে তার চাচাতো দাদা সাঞ্জি রামের ছেলে বিশালকে উত্তরপ্রদেশের মীরঠ শহর থেকে ডেকে আনে ফোন করে, যাতে সেও ওই কন্যাশিশুটিকে ধর্ষণ করতে পারে।

চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, টানা ধর্ষণ করার পর যখন অভিযুক্তরা ঠিক করে যে এবার ওই কন্যাশিশুটিকে মেরে ফেলার সময় হয়েছে, তখন একজন অভিযুক্ত পুলিশ কর্মী অন্যদের বলে, এখনই মেরো না। দাঁড়াও। আমি ওকে শেষবারের মতো একবার ধর্ষণ করে নিই।

তারপর ওই পুলিশ কর্মী নিজে চেষ্টা করে কন্যাশিশুটিকে হত্যা করতে, কিন্তু সে ব্যর্থ হয়।

শেষে নাবালক অভিযুক্ত ওই কন্যাশিশুকে হত্যা করে। তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথা থেঁতলে দেয়া হয় একটা পাথর দিয়ে।

(জাস্ট নিউজ/ডেস্ক/একে/১৮৪০ঘ.)