বিলাওয়ালকে প্রধানমন্ত্রী করার শর্ত পিপিপি’র

বিলাওয়ালকে প্রধানমন্ত্রী করার শর্ত পিপিপি’র

কেন্দ্র ও পাঞ্জাবে জোট সরকার গড়তে সম্মত হয়েছে পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)। পিএমএল-এন দলের প্রেসিডেন্ট শেহবাজ শরীফ ও পিপিপি দলের চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টোর মধ্যে এক বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্ত এসেছে। তবে এ সময় পিপিপি শর্ত দিয়েছে যে, নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী করতে হবে বিলাওয়াল ভুট্টোকে।

জিও টিভি জানিয়েছে, পাঞ্জাবের তত্ত্বাবধায়ক মুখ্যমন্ত্রী মহসিন নাকভির বাড়িতে পিপিপি’র শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা করেন শেহবাজ শরীফ। সেখানে বিলাওয়াল ভুট্টোর সঙ্গে ছিলেন আসিফ আলি জারদারিও। ওই বৈঠকে ভাই নওয়াজ শরীফের তরফে বার্তা নিয়ে যান শেহবাজ। ভবিষ্যৎ সরকার কেমন হবে তা নিয়ে আলোচনা হয় সেখানে। ‘পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে’ দুই দল জোট সরকার গঠনে একমত হয়।

এদিকে দ্য নিউজ জানিয়েছে, পিএমএল-এনের সঙ্গে জোট সরকার গঠনে রাজি হলেও কঠিন শর্ত দিয়েছে পিপিপি। আলোচনায় আসিফ আলি জারদারি দাবি করেছেন যে, নতুন সরকারের প্রধানমন্ত্রী করতে হবে তার ছেলে বিলাওয়াল ভুট্টোকে। তাছাড়া মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি চেয়ারও দাবি করেছেন তিনি। শুধুমাত্র এই শর্তেই পিএমএল-এনকে সমর্থন দেয়ার কথা বলেছেন তিনি।

আলোচনায় ক্ষমতা কীভাবে ভাগাভাগি হবে তা এখনো ঠিক হয়নি।

এ জন্য আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী কে হচ্ছেন তা নিয়ে চূড়ান্ত কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা জানা যায়নি। দুই দলের নেতাদের মধ্যে প্রায় ৪৫ মিনিট আলোচনা হয়।

এর আগে দলের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে যে, নির্বাচনের ফল প্রত্যাশামাফিক না হওয়ায় পিএমএল-এন নেতারা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, নির্বাচনের ফল প্রত্যাশার তুলনায় একেবারে ভিন্ন হয়েছে। নওয়াজ শরীফ, মরিয়ম নওয়াজ এবং অন্যান্য পিএমএল-এন নেতারা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। ফলে দলের শীর্ষ নেতারা জনসভা, মানুষের দ্বারে দ্বারে প্রচার চালানো, গণপ্রচার ও ভোটারদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের দিকে খুব বেশি মনোযোগ দেননি। এখন পর্যন্ত পিএমএল-এন এর প্রথম বিকল্প ছিল জারদারির পিপিপি’র সঙ্গে জোট সরকার গড়া। তবে দলটি বিলাওয়ালকে প্রধানমন্ত্রী পদ দিতে চায় না।

এর আগে শুক্রবার নওয়াজ শরীফ পাকিস্তানকে বাঁচাতে সকল দলকে একটি জোট সরকার গঠনের আহ্বান জানান। দলের নেতাকর্মীদের সামনে দেয়া এক ভাষণে নওয়াজ দাবি করেন, তার দলই নির্বাচনে সব থেকে বেশি ভোট পেয়েছে। তিনি বলেন, এখন আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে পাকিস্তানকে এই দুর্যোগ থেকে বের করে আনা। আমরা এ জন্য সবাইকে আমাদের সঙ্গে যোগ দেয়ার আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আসুন, একসঙ্গে বসি আমরা। আমরা অন্য দলগুলোর অবস্থানকে সম্মান করি। তাই আমরা সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছিÑ আপনারা আসুন, আমাদের সঙ্গে বসুন। পাকিস্তানকে এই দুর্দিন থেকে বের করে আনতে হবে। আমাদের একমাত্র এজেন্ডা হচ্ছে সমৃদ্ধ পাকিস্তান।

নওয়াজ আরও বলেন, এই দেশের স্থিতিশীলতার জন্য আরও অন্তত ১০ বছর প্রয়োজন। পাকিস্তান আর কোনো লড়াইয়ে নামতে চায় না। আমাদেরকে তাই এখন এক হয়ে সব সমস্যার সমাধান করতে হবে।

উল্লেখ্য, নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার ৬০ ঘণ্টারও বেশি সময় পর পূর্ণাঙ্গ ফলাফল ঘোষণা করেছে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন। ২৬৪ আসনের ঘোষিত ফলাফলে স্বতন্ত্ররা ১০১টিতে জয় নিয়ে এগিয়ে আছেন। যাদের প্রায় সবাই ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত। অপরদিকে নওয়াজ শরীফের দল পেয়েছে ৭৫ আসন ও বিলাওয়াল ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি পেয়েছে ৫৪ আসন। ইমরান খান সমর্থিতরা সব থেকে বেশি আসন জিতলেও তাদের একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। দলটি এরইমধ্যে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। পাঞ্জাবের চকওয়ালের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভও করেছে দলটি। সেখান থেকে পিটিআই সমর্থিত দুই প্রার্থী ও তাদের ৩০০ সমর্থকের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। মামলায় সন্ত্রাস ও লাউড স্পিকার নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনসহ একাধিক অভিযোগ আনা হয়েছে।

এক্সে করা এক পোস্টে পাঞ্জাব পুলিশ মহাপরিদর্শকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দমনের অভিযোগ তুলেছে পিটিআই। দলটি বলেছে, প্রথমে তারা জনগণের ম্যান্ডেট চুরি করার চেষ্টা করেছে, এখন তারা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হাইজ্যাক করার চেষ্টা করছে। পাঞ্জাবের পুলিশ প্রধান মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন এবং আবারো একই ধরনের কৌশল অবলম্বনের চেষ্টা করছেন।

ক্রিকেটের সুপার ওভারের মতো অবস্থায় ইমরান খান ও নওয়াজ শরীফ। ক্রিকেটে দুই পক্ষ নির্ধারিত ওভারে সমান রান করার পর যেমন সুপার ওভারে খেলা শেষ হয়, ঠিক তেমনই এক অবস্থা বিরাজ করছে পাকিস্তানে। রোববার সারা দেশে নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগে প্রতিবাদ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে পিটিআই।

অনলাইন এনডিটিভি বলছে, পাকিস্তান এমনিতেই অর্থনৈতিক সংকটে ভুগছে। তার ওপর নির্বাচনে ‘ঝুলন্ত এক রায়ে’ দেশটিতে আরেকটি আঘাত দিয়েছে। এখন দলগুলোর মধ্যে চলছে হর্স-ট্রেডিং বা সমর্থন কেনাবেচা। তাতে যে দল বা পক্ষ পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে পারবে, তারাই সরকার গঠন করবে। পিটিআই প্রধান ইমরান খান আদিয়ালা জেলে। তিনি নির্বাচন করতে পারেননি। তা সত্ত্বেও তার দল ১০২ আসন নিশ্চিত করার ফলে তিনি বিশ্বজুড়ে সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন। তবে পার্লামেন্টে তার দলকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা দেখাতে হলে দরকার আরও ৩১টি আসন। শুক্রবার নির্বাচনে ইমরান খান এবং নওয়াজ শরীফ দু’জনেই নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেছেন। তবে তার দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২৪ কোটি ১০ লাখ মানুষের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফল করার ফলে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, ইমরান খানই এখন পাকিস্তানে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা। ইমরান খানকে জেলে নেয়ার পর তার দলের নির্বাচনী প্রতীক কেড়ে নেয়া হয়েছে। দেশবাসী বিষয়টি পরিষ্কার বুঝতে পেরেছে এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য কী। ফলে তারা পিটিআই না দেখে ইমরানের সমর্থিত প্রার্থীদের খুঁজে বের করে ভোট উপহার দিয়েছে।

পিটিআই সমর্থিত বেশ কিছু স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে জালিয়াতির অভিযোগ এনেছেন। এ অভিযোগে তারা হাইকোর্টেও গিয়েছেন। স্থানীয় মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী, আরও কিছু প্রার্থী কয়েকদিনের মধ্যে ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ নিয়ে আদালতে যেতে পারেন। দলটির চেয়ারম্যান গওহর আলি খান বলেছেন, জনগণ তার দলের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছে তার প্রতি সম্মান দেখানো উচিত পাকিস্তানের সব প্রতিষ্ঠানের।