দখলদার ইসরাইলের গোপন নথির ‘ভান্ডার’ ফাঁস করতে যাচ্ছে ইরান

দখলদার ইসরাইলের গোপন নথির ‘ভান্ডার’ ফাঁস করতে যাচ্ছে ইরান

ইসরাইলি পারমাণবিক স্থাপনা, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে তার সম্পর্ক এবং প্রতিরক্ষা সক্ষমতা সম্পর্কিত সংবেদনশীল নথি শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন ইরানের গোয়েন্দা বিষয়ক মন্ত্রী ইসমাইল খাতিব। রবিবার রাষ্ট্রীয় টিভিতে খতিব বলেন, তেহরানের হাতে আসা এই নথিপত্র একটি ‘অমূল্য সম্পদ’, যা দেশের আক্রমণাত্মক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে। তবে তিনি এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো প্রমাণ দেননি। মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রধারী দেশ হিসেবে বিবেচিত হলেও ইসরাইল কখনোই তাদের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার সম্পর্কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য প্রকাশ করেনি। দেশটির সরকার এখনো ইরানের হাতে নথি ফাঁসের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে গাজা যুদ্ধ চলাকালে তেহরানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে বেশ কয়েকজন ইসরাইলিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই গোপন নথিপত্র গত বছর ইসরাইলের একটি পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্রে সাইবার হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়।

খতিব বলেন, ‘এই ধনভাণ্ডার স্থানান্তর সময়সাপেক্ষ ছিল এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন ছিল। স্বাভাবিকভাবেই, স্থানান্তর পদ্ধতিগুলো গোপন থাকবে, তবে নথিগুলো শিগগিরই সামনে আসা  উচিত।’ খতিব নথিপত্রের পরিমাণ ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘হাজার হাজার নথিপত্র বলা হলেও তা কম বলা হবে।’

রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম আইআরআইবি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ‘এই বিপুল পরিমাণ উপকরণ এবং সম্পূর্ণ চালানটি নিরাপদে দেশে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তার কারণে মিডিয়ার নীরবতা জরুরি।’ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এসব নথিপত্র বর্তমানে ‘নিরাপদ স্থানে’ রাখা হয়েছে।

পারমাণবিক ক্ষমতা এবং আলোচনা

ইরান ও ইসরাইল বছরের পর বছর ধরে একে অপরের বিরুদ্ধে যে গোপন অভিযান চালিয়ে আসছে, তারই অংশ হিসেবে সর্বশেষ এই ঘটনাটি ঘটেছে। যদিও তেহরান ইসরাইলকে তার পারমাণবিক বিজ্ঞানীদের হত্যার জন্য অভিযুক্ত করেছে। ইসরাইল ইরানকে তাদের স্বার্থকে বিঘ্নিত করে এমন অঞ্চল জুড়ে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে সমর্থন করার জন্য অভিযুক্ত করেছে। 

২০২৪ সালের এপ্রিলে সিরিয়ার দামাস্কাসে ইসরাইলের দূতাবাসে বোমা হামলার প্রতিশোধ নেয়ার পর ইরান ও ইসরাইল একে ওপরের ওপর সীমিত হামলা চালায়। ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে আলোচনা চলমান থাকায় সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলার যেকোনো পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে বলেছে।

গত সপ্তাহে জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থার একটি প্রতিবেদনের পর ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির উপরও তীব্র দৃষ্টি নিবদ্ধ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে যে তেহরান গোপন পারমাণবিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে। 

ইরান তার  কর্মসূচি নিয়ে এই সপ্তাহে আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার বোর্ড অফ গভর্নরদের কাছে সমালোচনার মুখোমুখি হতে পারে। যদিও ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা রাখার ইচ্ছা অস্বীকার করেছে, তবুও তারা জোর দিয়ে বলেছে যে, তারা শান্তিপূর্ণ, বেসামরিক উদ্দেশ্যে পারমাণবিক প্রযুক্তি বিকাশের ইচ্ছা পোষণ করে। ইরান-মার্কিন পরোক্ষ আলোচনার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যার বেশ কয়েকটি দফা ওমান এবং ইতালিতে একটি সম্ভাব্য পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। লক্ষ্য ছিল তাদের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে কয়েক দশক ধরে চলমান বিরোধ নিষ্পত্তি করা। বুধবার ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি বলেছেন যে ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি পরিত্যাগ করার বর্তমান মার্কিন প্রস্তাব ‘আমাদের স্বার্থের ১০০ শতাংশ পরিপন্থী’।