
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নতুন ও ব্যাপক ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা সোমবার রাত ১২টা থেকে কার্যকর হয়েছে। এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দেশগুলো হলো— আফগানিস্তান, মিয়ানমার, চাদ, কঙ্গো-ব্রাজাভিল, বিষুবীয় গিনি, ইরিত্রিয়া, হাইতি, ইরান, লিবিয়া, সোমালিয়া, সুদান এবং ইয়েমেন। এছাড়া আরও সাতটি দেশের ওপর আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সেগুলো হলো বুরুন্ডি, কিউবা, লাওস, সিয়েরা লিওন, টোগো, তুর্কমেনিস্তান এবং ভেনেজুয়েলা। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞা একটি ‘কমন সেন্স রেস্ট্রিকশন’, যা বিপজ্জনক বিদেশি ব্যক্তিদের হাত থেকে আমেরিকানদের রক্ষায় সহায়তা করবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এক ভিডিও বার্তায় বলেন, বিশ্বব্যাপী যেভাবে হুমকি বেড়ে চলেছে, তাতে অন্য দেশগুলোকেও ভবিষ্যতে তালিকায় যুক্ত করা হতে পারে, যদি তারা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ উন্নতি না আনে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কিছু ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে।
নিচের শ্রেণির ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি পেতে পারে— বৈধ মার্কিন স্থায়ী বাসিন্দা (গ্রিন কার্ডধারী), তাদের নিকটাত্মীয় যারা অভিবাসী ভিসা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছেন, মার্কিন সরকারের বিশেষ অভিবাসী ভিসাধারী কর্মচারীরা, দত্তক গ্রহণ সংক্রান্ত ভিসা, দ্বৈত নাগরিক— যিনি ভ্রমণ করছেন এমন পাসপোর্টে যা নিষিদ্ধ দেশের নয়, আফগান বিশেষ অভিবাসী ভিসাধারী, ইরানে নিপীড়নের শিকার জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অভিবাসী ভিসাধারী, নির্দিষ্ট নন-ইমিগ্রান্ট ভিসাধারী, আন্তর্জাতিক ক্রীড়া ইভেন্টের (যেমন ২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ, ২০২৮ সালের অলিম্পিকস) জন্য আগত খেলোয়াড়, কোচ ও সংশ্লিষ্ট স্টাফ, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের জন্য হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে ব্যতিক্রম সুযোগ দিতে পারেন।
এই আদেশের পেছনে যুক্তি হিসেবে ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি কলোরাডোর বোল্ডারে ঘটে যাওয়া একটি সন্ত্রাসী হামলার কথা উল্লেখ করেছে। ১লা জুন ইসরাইলি জিম্মিদের পক্ষে সমর্থনকারীদের ওপর এক ব্যক্তি হামলা চালায়। এতে ১২ জন আহত হন। হামলাকারী ছিলেন একজন মিশরীয় নাগরিক, যদিও মিশরের নাম এই নিষিদ্ধ তালিকায় নেই। নতুন এই নিষেধাজ্ঞা অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। পাল্টা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের জন্য ভিসা স্থগিত করেছে চাদ। সোমালিয়া নিরাপত্তা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আফ্রিকান ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রকে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে। মার্কিন ডেমোক্র্যাট নেতারা এই আদেশের নিন্দা করেছেন। কংগ্রেসওম্যান প্রমিলা জয়পাল বলেন, এই নিষেধাজ্ঞা ট্রাম্পের আগের (প্রথম মেয়াদ) মুসলিম নিষেধাজ্ঞার সম্প্রসারিত রূপ। এটি আমাদের বিশ্ব মঞ্চে আরও একঘরে করে তুলবে। অন্যদিকে, নিষেধাজ্ঞার সমর্থনে কংগ্রেসম্যান ক্লে হিগিন্স বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ একটি অধিকার নয়, এটি একটি সুযোগ।