কি হয়েছিলো সেদিন কারবালায়…?

হুসাইন (রাঃ) এর পবিত্র মস্তকের কি হলো?

হুসাইন (রাঃ) এর পবিত্র মস্তকের কি হলো?

কতো দিন কতো ক্ষণে, কতো মহাক্ষণে আমার রাসুল (সাঃ) তোমার মুখে, ঠোঁটে, গালে, কপালে চুমো দিলেন, তোমাকে কাঁধে করে ঘুরে বেড়ালেন। হায় হুসাইন (রাঃ) আজ তোমার সেই পবিত্র মস্তক শরীর থেকে কেটে টুকরো করে আলাদা করলো জালিমেরা।

হিজরী ৬০ সাল। হাজ্জের সময়। অনেক সাহাবারা হাজ্জে আছেন। সেই মূহুর্তে মাক্কাহ থেকে কুফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবার প্রস্তুতি নিলেন প্রিয়তম রাসুলের প্রিয়তম দৌহিত্র হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ)। ইতোমধ্যে হাজারো চিঠি পেয়েছেন তিনি কুফাবাসীর পক্ষ থেকে। তাঁর চাচাতো ভাই মুসলিম ইবনে আকিলকে কুফার অবস্থা জানার জন্য আগে পাঠান।

মুসলিম সেখানে গেলে অন্তত পঁয়ত্রিশ হাজার মানুষ তাঁকে স্বাগত জানান। তিনি হুসাইন (রাঃ) কালবিলম্ব না করে কুফাতে আসার জন্য দূত মারফতে খবর পাঠান। কুফাবাসী ইয়াজিদকে খালিফাহ মানতে রাজি নন। বরং তারা হুসাইন (রাঃ) এর কাছে বাইয়াহ করতে প্রস্তুত। হুসাইন (রাঃ) ইতোমধ্যে ইয়াজিদের কাছে বাইয়াহ করবেন না বলে মাদীনাহ ছেড়ে মাক্কাহ আসেন।

এখন মাক্কাহ ছেড়ে কুফা যাবার পালা। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) ও ইবনে উমার (রাঃ) সহ অনেক সাহাবী তাঁকে কুফা যেতে নিষেধ করতে থাকেন। কিন্তু আল্লাহর হুকুম তো ভিন্ন। হুসাইন (রাঃ) পরিবার পরিজন নিয়ে কুফার পথে রওয়ানা দিলেন। হাজ্জে থাকার কারণে অনেক সাহাবারা তাঁর সফরসঙ্গি হতে পারলেন না।

কুফা ততক্ষনে বদলে গেছে। ইয়াজিদ- উবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদ নামে এক পাপিষ্ঠ নরাধম যুবককে গভর্নর হিসেবে নিয়োগ করেছেন। যার কাছে কুফাবাসী মুহূর্তের মধ্যে বিক্রি হয়ে যায়। মুসলিমকে সে আরাফাহর দিনে নির্মম ভাবে হত্যা করে। হত্যার আগে তিনি জল্লাদকে হুসাইন (রাঃ) এর কাছে কুফা না আসার জন্য খবর পাঠাতে অনুরোধ করেন। জল্লাদ অবশ্য সে কথা রেখেছিলো।

হিজরী ৬১ সাল। হুসাইন (রাঃ) কারবালায় আসলেন। আরবীতে كرب মানে দুঃখ কষ্ট। আর بلاء মানে মুসিবত। হায়! এতো দিন পরে তিনি দূত মারফতে জানলেন, কুফা আর সে কুফা নেই। মুসলিম শহীদ হওয়াতে তাঁর ছেলেরা প্রতিশোধ না নিয়ে মাক্কাহ ফিরবেন না বলে অংগীকার করলেন।

কারবালা প্রান্তরে হুসাইন (রাঃ) অনেক খুতবাহ দিলেন, কুফাবাসীকে আহ্বান জানালেন তাঁকে সাহায্য করার জন্য।
উবায়দুল্লাহর কাছে সুনির্দিষ্ট ৩টি প্রস্তাব দিলেন-

১। আমাকে ইয়াজিদের কাছে যেতে দিন। আমি নিজে তাঁর সাথে গিয়ে negotiate করবো। অথবা-
২। আমাকে মাক্কাহ ফিরে যেতে দিন নতুবা-
৩। আমাকে অন্য কোথায় পাঠিয়ে দিন। সেখানে পরবর্তি জীবন আল্লাহর গোলামী করে কাটিয়ে দেবো।

উবায়দুল্লাহ কোনো একটা প্রস্তাব মানলো না। তার এক কথা - ইয়াজিদের কাছে বাইয়াহ করতে হবে, না হলে যুদ্ধ। হুসাইন (রাঃ) যুদ্ধের জন্য কারবালা আসেননি।

১০ মুহাররাম। ইয়াওমু আশুরা। তাঁর পরিবার- আহলে বাইত তাঁর সাথে তবু তিনি- বাতিলের কাছে মাথা নত করবেন না বলে মনস্থ করলেন। তিনি কাপুরুষ নন। বীরের মতো যুদ্ধ করলেন। তিনি ত্যাগকেই বেছে নিলেন।

“ফিরে এল আজ সেই মোহর্‌রম মাহিনা,–
ত্যাগ চাই, মর্সিয়া-ক্রন্দন চাহি না!”

উমার ইবনে আমর ইবনুল আসের নেতৃত্বে অনেকেই তাঁর বীরত্বের কাছে ধরাশায়ী হলেন। অবশেষে সীমার বিন জিল যাওশান চরম ভাবে আঘাত করলো হুসাইন (রাঃ) কে তিনি পড়ে গেলেন। আঘাতে আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হলো নবীজীর পরম ধন, সোনার মানিক। কারবালা রক্তাক্ত হলো।

কতো দিন কতো ক্ষণে, কতো মহাক্ষণে আমার রাসুল (সাঃ) তোমার মুখে, ঠোঁটে, গালে, কপালে চুমো দিলেন, তোমাকে কাঁধে করে ঘুরে বেড়ালেন। হায় হুসাইন (রাঃ) আজ তোমার সেই পবিত্র মাথা শরীর থেকে কেটে টুকরো করে আলাদা করলো তারা।

উবায়দুল্লাহ হুসাইন (রাঃ) এর মাথার উপর লাঠি দিয়ে আঘাত করলো। অবশেষে তাঁর মাথা দামেস্কে ইয়াজিদের কাছে গেলে তিনি একটি কাপড়ে করে তা মাদীনায় পাঠান। হাসান (রাঃ) আর ফাতিমাহ (রাঃ) মাঝখানে তা বাকী আল গারকাদে
দাফন করা হয় আর শরীর বনু আসাদের সহযোগীতায় কারবালায়ই শায়িত করা হয়।

عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : «الحَسَن والحُسَيْن سَيِّدا شَباب أهْل الجنة».

হাদীস অনুযায়ী হাসান ও হুসাইন দুজনেই বেহেস্তে যুবকদের নেতা হবেন। কিন্তু যারা হুসাইনকে শহীদ করলেন একমাত্র আল্লাহ জানেন তাদের পরিনাম কি হবে?

আল্লাহ কারবালার ঘটনা থেকে শিক্ষা নেবার তাওফিক দান করুন। বাতিলের মোকাবেলায় আমাদের ঈমানকে দৃঢ় করে দিন। আমিন।

 

আ বু সা ঈ দ আ ন সা রী
জুলাই ২৮, ২০২৩
পশ্চিম লন্ডন, ইংল্যান্ড।